সিলেটটুডে ডেস্ক

০৭ মার্চ, ২০১৯ ০১:১৫

শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান বাবার

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক শামীমা বেগম। ২০১৫ সালে আরও দুই বান্ধবীসহ পালিয়ে সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেন। সে সময় সশস্ত্র ওই জঙ্গি সংগঠনটি তাদের দলে যোগ দিতে অনলাইনে প্রচারণা চালাচ্ছিল। আর তাতে আকৃষ্ট হয়ে শামীমা তুরস্ক সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে সিরিয়ায় যান। সেখানে গিয়ে দলটির একজন যোদ্ধাকে বিয়ে করেন।

শামীমা বেগম এখন ১৯ বছর বয়সী একজন মা। আশ্রয় নিয়েছেন সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে। সম্প্রতি তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি তার দেশে ফিরতে চান। কিন্তু আইএসে যোগ দেয়া নিয়ে তার কোনো অনুশোচনা না থাকায় তা নিয়ে যুক্তরাজ্যে সমালোচনা হচ্ছে। শামীমার পরিবারও তার এমন আচরণে অবাক হয়েছেন। তবে তার ডাচ নাগিরক স্বামী সম্প্রতি শামীমা ও তার নবজাতক সন্তানকে নিয়ে নেদারল্যান্ডসে ফেরার কথা জানিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সমালোচনা হচ্ছে, তিনি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না যা একজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রহীন করে ফেলে। তার পরিবার বলছে, শামীমার কোনো দ্বৈত নাগরিকত্ব নেই। তাই বিষয়টি এখন আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।

গত মঙ্গলবার শামীমার বাবা আহমেদ আলী বাংলাদেশে তার গ্রাম থেকে মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে (এপি) একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তিনি তার মেয়েকে দেশে ফেরত আসার অনুমতি দিতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন তার বয়স মাত্র ১৫ বছর তখন সে পালিয়ে যায়। সে তখন নাবালক ছিল।’

শামীমার বাবা ৬০ বছর বয়সী আহমেদ আলী এখন তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ব্রিটিশ সরকারকে অনুরোধ করবো তারা যেন আমার মেয়ের নাগরিকত্ব বাতিল না করে। তারা যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে তাহলে তাকে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে এনে শাস্তি দেয়া হোক।’

শামীমার বাবা আহমেদ আলী বলছিলেন, তিনি ১৯৭৫ সালে যুক্তরাজ্যে যান। তারপর ১৯৯০ সালে দেশে ফিরে আসমা বেগম নামে তার প্রথম স্ত্রীকে বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর চারটি কন্যা সন্তান ছিল। শামীমা তার চার বোনের মধ্যে সবার ছোট। তবে পরে শামীমার বাবা আহমেদ আলী দেশে ফিরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন।

গত দুই মাস আগে আহমেদ আলী যুক্তরাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ এসেছেন। তিনি ব্রিটিশ সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘যুক্তরাজ্য তাদের দেশের শিক্ষার্থীদের বিষয়গুলো ভালোভাবে সামলাতে পারে না। আর তাইতো তারা আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন।’

আহমেদ আলী বলেন, ‘সম্ভবত গত একমাস আগে আরও একজন ছাত্রী আইএসে যোগ দিতে গেছেন। ব্রিটিশ সরকারের এমন ঘটনার বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। তাছাড়া কর্তৃপক্ষের তদন্ত করে দেখা উচিত কীভাবে স্কুল থেকে এসব কিশোরী পালিয়ে যাচ্ছে। কেননা যখন তারা পালিয়ে যান তখন তো তারা সেখানকার শিক্ষার্থী। ওই ঘটনার তিন মাস পর আরও তিনজন শিক্ষার্থী পালিয়ে যায়। কর্তৃপক্ষের তদন্ত করা উচিত ছিল কেন তারা পালিয়ে যাচ্ছে। আর তারা তো সবাই নাবালক।’

শামীমার বাবা আরও বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের অভিবাসন পদ্ধতি এসব বিষয়ে খুব অবগত থাকে। কেননা দেশটিতে যে অভিবাসন পদ্ধতি আছে তা বিশ্বের শক্তিশালী পদ্ধতিরগুলোর মধ্যে সবার উপরে। আমি সবসময় বলতাম কীভাবে শামীমা আর একজনের পাসপোর্ট ব্যবহার করার সুযোগ পায়? তাছাড়া তার নিজেরও তো কোনো পাসপোর্ট ছিল না। এসব খুব ভালোভাবে তদন্ত করে দেখা উচিত।’

আহমেদ আলীর মেয়ে জামাই নেদারল্যান্ডসের নাগরিক ইয়াগো রিদাইক (২৭) সম্প্রতি সিরিয়ায় কুর্দি যোদ্ধা কর্তৃক পরিচালিত একটি বন্দিশিবির থেকে বিবিসিকে দেয়া সক্ষাৎকারে বলেছেন, শামীমা সিরিয়া আসার অল্প কয়েকদিন পরেই তার সঙ্গে দেখা হয়। তখন শামীমার বয়স ছিল ১৫ বছর। তিনি বলেন, শামীমা ‘নিজের ইচ্ছেতেই’ তাকে বিয়ে করেন।

শামীমার মতো ১৫ বছরের একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক তরুণীকে বিয়ে করার ব্যাপারটা ঠিক ছিল কি না যখন এমন প্রশ্ন করা হয় তার স্বামী ইয়াগো রিদাইককে, তখন তিনি উত্তর দিয়ে বলেন, ‘আমি একেবারে সত্যটা বলছি। যখন আমার এক বন্ধু এসে আমাকে বলে একজন মেয়ে আছে যে বিয়ে করতে আগ্রহী তখন আমি বয়সের কথা শুনে পিছিয়ে আসি। কিন্তু অনিবার্য কারণবশত আমাকে সেই প্রস্তাব মেনে নিতে হয়।’

ইয়াগো রিদাইক বলেন, তিনি একসময় আইএসের জন্য ‘যুদ্ধ’ করেছেন। তবে এখন তিনি দলত্যাগ করে দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন। তবে এটা স্পষ্ট নয় শামীমা বেগম যে অপরাধ করেছে কিংবা মন্তব্য করেছে আর তার স্বামী যেসব কথা বললেন তা পশ্চিমা সমাজকে একটা বড় প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। প্রশ্নটি হলো যারা আইএসে যোগ দিতে পালিয়ে গিয়ে এখন আবার দেশে ফিরতে চাইছে তাদের বিষয়টা কীভাবে সামলাবে তারা। কেননা আইএসের বর্তমান যে অবস্থা তাতে করে জঙ্গি গোষ্ঠীটির পতন অনিবার্য।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত