সিলেটটুডে ডেস্ক

০৯ মার্চ, ২০১৯ ১৭:৩২

জীববিজ্ঞান উৎসব সিলেট থেকে জাতীয় পর্যায়ে যাচ্ছে ১০৯ জন

বিডিবিও-সমকাল বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান উৎসব

জন্মান্ধরা কি স্বপ্ন দেখে? রাতের স্বপ্ন মানুষ সকালে ভুলে যায় কেন? ঘাম কিভাবে রক্তকে শোধন করে? বানর থেকে মানুষে বিবর্তনের কথা শোনা যায়। মানুষ থেকে বানরে বিবর্তনের কথা শোনা যায় না কেন? এমন চিন্তাকর্ষ, মজাদার, কৌতুহলী ও বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের মুখে পড়লেন শিক্ষকেরা। জীববিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরাও শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাব দিলেন আকর্ষণীয়ভাবে।

শনিবার (৯মার্চ) সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিডিবিও-সমকাল বাংলাদেশ জাতীয় বিজ্ঞান উৎসব সিলেট অঞ্চল পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এ উৎসবে জীববিজ্ঞানে নিজেদের জানার পরিধি বুঝতে এক ঘন্টার পরীক্ষায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সকাল থেকে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসতে শুরু করে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনের মাঠে আয়োজিত পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার।

বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান উৎসব সিলেট আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কাউন্সিলের আহবায়ক প্রফেসর ড. মো. আবুল কাশেম এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দফতরের পরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহম্মদ।

স্বাগত বক্তব্য দেন সমকালের সহকারী সম্পাদক ও সুহৃদ সমাবেশের বিভাগীয় সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম আবেদ। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনন্যা তালুকদার জেনি।

প্রশ্নত্তোর পর্বে শিক্ষকদের প্যানেল থেকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মো. মাহবুব ইকবাল, প্রফেসর ড. মাহবুব আলম, আবু জাফর ব্যাপারী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোজাম্মেল হক, প্রফেসর ড. মো. ফারুক মিয়া, সহযোগী অধ্যাপক ড. গোকুল চন্দ্র বিশ্বাস, মদন মোহন কলেজের অধ্যাপক সুপ্তী চৌধুরী, এমসি কলেজের নেছার আহমদ, ব্লু-বার্ড স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক সাহেদা আক্তার।

সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন মাঠে বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান উৎসব সিলেট অঞ্চল পর্বের উদ্বোধন ঘোষনা করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার। প্রথমে জাতীয় সংগীতের পর বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এসময় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার জাতীয় পতাকা, ডিন কাউন্সিলের আহবায়ক প্রফেসর ড. মো. আবুল কাশেম জাতীয় জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের পতাকা, বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান উৎসব সিলেট আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় কু- সিলেট অঞ্চল পর্বের পতাকা ও সমকালের সিলেট ব্যুরো প্রধান চয়ন চৌধুরী সমকালের পতাকা উত্তোলন করেন।

সিলেট বিভাগের চার জেলার ৭২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫২৬ জন শিক্ষার্থী তিনটি ক্যাটাগরিতে এই উৎসবে এক ঘন্টার পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে জুনিয়র ক্যাটাগরিতে (৬ষ্ঠ থেকে অষ্টম)  ১১০ জন, সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে (নবম-দশম)  ২৪২ জন ও হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে (একাদশ-দ্বাদশ) ১৭৪ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।

উৎসবে সিলেট আঞ্চলিক পর্ব থেকে জুনিয়র ক্যাটাগরিতে ৩৬ জন, সেকেন্ডারী ক্যাটাগরিতে ৩৭ জন এবং হায়ার সেকেন্ডারী ক্যাটাগরিতে ৩৬ জন জাতীয় জীববিজ্ঞান উৎসবে অংশ নেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করে। এদের সবার হাতে মেডেল, সনদ ও উৎসবের টি-শার্ট তুলে দেন অতিথিরা।

বিডিবিও-সমকাল বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান উৎসবে বিশেষ সহযোগী কথাপ্রকাশ এবং কারিগরী সহযোগী ল্যাববাংলা।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার বলেন, গত শতাব্দি ছিল পদার্থবিদ্যার। বর্তমান শতাব্দিকে জীববিজ্ঞানের শতাব্দি বলা হচ্ছে। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মানুষ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য যেসব চ্যালেঞ্জ আছে, তা মোকাবেলায় তোমরা কাজ করবে। তোমরাই দেশের ভবিষ্যৎ। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, মাদক ও দুর্নীতির মত ফেসবুক একটি বিশাল সমস্যা। ফেসবুক ইয়াবার মত এক ধরণের আসক্তি। সবমিলে সুস্থ মানসিকতার মধ্যে এগিয়ে যেতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় প্রফেসর ড. মো. আবুল কাশেম বলেন, জীববিজ্ঞান উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সাহস সঞ্চয় হচ্ছে। জীববিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি আকর্ষণ তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, আজকে মানি এন্ড টেকনোলজির সংকট চলছে। আমরা শুধু টাকার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু আমি যদি কর্ম করে যাই, তাহলে জয় হবে। টমাস আলভা এডিসনের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ভুল থেকে শিক্ষা নিলে জীবনে জয়ী হওয়া যায়। তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, শিশুদের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানানোর পেছনে দৌঁড়াবেন না। তাদেরকে জানো, শিখো এবং করো- স্লোগানে এগুতে হবে।

বিশেষ অতিথি প্রফেসর ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহম্মদ বলেন, বিজ্ঞানকে জানার চেষ্টা করতে হবে। ভাসা ভাসা কোন কিছু বিজ্ঞান নয়। কোন কিছু প্রমাণ হলেই তা বিজ্ঞান। এই উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জীববিজ্ঞানের প্রতি প্রণোদনার সৃষ্টি হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সমকালের সহকারী সম্পাদক ও সুহৃদ সমাবেশের বিভাগীয় সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম আবেদ স্বাগত বক্তৃতায় বলেন, তরুণ সমাজের সামনে তিনটি চ্যালেঞ্জ- মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস। এই জায়গা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, সমকাল সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম গঠনে কাজ করছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত