শাকিলা ববি

১০ মার্চ, ২০১৯ ০০:২০

নৌকার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সাংসদরা!

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ এখন আওয়ামী লীগ। বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে বিভাগের প্রায় সব উপজেলায়ই দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। অনেক উপজেলায় খোদ আওয়ামী লীগের সাংসদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ ওঠেছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার।

আজ (১০ মার্চ) সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ এবং আগামী ১৮ মার্চ সিলেট ও মৌলভীবাজারের উপজেলাগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের অভিযোগ দলীয় সাংসদরা তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন তাঁরা। বিভাগের আরও কয়েকটি উপজেলায় এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় নৌকার প্রার্থী অধ্যাপক রফিকুর রহমান স্থানীয় এমপি উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদের বিরুদ্ধে নৌকার বিপক্ষে গণসংযোগ ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন।

 শুক্রবার নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে রফিকুর রহমান অভিযোগ করেন, কমলগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে মৌলভীবাজার-৪ আসনের এমপি উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদের ছোট ভাই মো. ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল। পরে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ান। তাকে জয়ী করানোর জন্য নৌকার বিরুদ্ধে প্রচার প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন এমপি আব্দুস শহীদ। সরকারি প্রটোকল ব্যবহার করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে উন্নয়ন কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরাসরি নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগ তুলেন স্থানীয় সাংসদের উপর।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবু জাহিদ। তাঁর সাথে স্থানীয় সিলেট-৩ আসনের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর বিবাদ অনেক পুরনো। গত সংসদ নির্বাচনে কয়েসের পক্ষে মাঠে না নামার অভিযোগ রয়েছে আবু জাহিদের বিপক্ষে। তার বদলা নিতে এবার সাংসদ কয়েস আবু জাহিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মঈনুল ইসলঅমের পক্ষে কয়েস ও তাঁর অনুসারীরা কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন জাহিদ। দলের নির্বাচনী ট্রাইবুনালে তিনি লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন বলে জানান আবু জাহিদ।

বিভিন্নস্থানে গণসংযোগকালে মইনুল ইসলামকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবেও পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে সাংসদ কয়েসের অনুসারীরা।

এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার আওয়ামী লীগ মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু জাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগের এমপি হয়ে তিনি আমার পক্ষে কোনো কাজ করেননি। শুরু থেকেই তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী মইনুল ইসলামের পক্ষে কাজ করছেন। তাই আমি দলের অভিযোগ সেলে অভিযোগ করেছি। এমপি সাহেব পুলিশ প্রশাসনকে এই নির্বাচনে মিসইউজ করছেন। গ্রামে গ্রামে গিয়ে নৌকার বিরোধী প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করছেন।

এ ব্যাপারে সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ-ইস সামাদ কয়েসের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হলেও তিনি কল ধরেননি।

এদিকে, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় উপজেলায় নৌকাকে ডুবাতে স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জোম হোসেন রতন নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করছেন এই উপজেলার আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী শামীম আহমদ মুরাদ।

সুনামগঞ্জ-১ আসনের সরকার দলীয় এমপি মোয়াজ্জোম হোসেন রতনের ভাই মোজাম্মেল হোসেন রোকন দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এই সাংসদও নৌকার বিরোধীতা করে নিজ এলাকায় ভাইয়ের জন্য প্রচার প্রচারনায় অংশ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। আচরণবিধি লঙ্গনের কারণে এমপি রতনকে এলাকা ছাড়ারও নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন।

এ ব্যপারে ধর্মপাশা উপজেলার নৌকার প্রার্থী শামীম আহমদ মুরাদ বলেন, এমপি মোয়াজ্জোম হোসেন রতন নিজের সহোদরকে জেতানোর জন্য কাজ করছেন। ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন। টাকা-পয়সাও দিচ্ছেন। এমন কী সেলবরস ও পাইকর হাটি ইউনিয়নে নৌকার কোন এজেন্ট ডুকতে দিবেন না বলেও প্রচার করছেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, নৌকার পক্ষে অবশ্যই কাজ করব। নির্বাচন কমিশন ৮ তারিখের মধ্যে এলাকা ছাড়তে বলছে। এরআগ পর্যন্ত নৌকার পক্ষে কাজ করেছি। নিজের ভাইয়ে পক্ষে কাজ করার ব্যাপারে এমপি রতন বলেন, ধর্মপাশায় আমি যাইনি। ওসি এবং ইউএনও’র সাথে কথা বলে দেখেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত