সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

০২ এপ্রিল, ২০১৯ ১৪:৫৫

পরকীয়ার জেরে সন্তান হত্যা: মা ও প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ড

সুনামগঞ্জে ছেলেকে হত্যার দায়ে মা ও মায়ের পরকীয়া প্রেমিককে (নিহতের চাচাতো ভাই) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত দায়রা জজ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এই রায় দেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন- জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার চিতুলিয়া গ্রামের বারিক মিয়া (৩৭ ) ও তার চাচী সিতারা বেগম (৩৯)।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, চিতুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম সৌদি প্রবাসী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে থাকেন। তার স্ত্রী সিতারা বেগমের সঙ্গে চাচাতো ভাইয়ের ছেলে বারিক মিয়ার অবৈধ সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি জানাজানি হলে রফিকুল ইসলাম দেশে এসে স্ত্রীকে এসব থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করেন। এরপর তিনি সৌদি আরবে চলে যাওয়ার পর সিতারা বেগম আবারও বারিক মিয়ার সঙ্গে মেলামেশা শুরু করেন। বিষয়টি সিতারা বেগমের ছেলে শোয়াইবুর রহমান (১১) এক সময় বুঝতে পারে। সে তার বাবাকে ঘটনা জানাবে বলে মাকে হুমকি দেয়। পরে মা সিতারা বেগম তার প্রেমিক বারিক মিয়া শিশু শোয়াইবুরকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

২০১২ সালের ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টার দিকে গ্রামের আরেক শিশু শাবুল মিয়া (১৩) এর মাধ্যমে শোয়াইবুরকে গ্রামের চিতুলিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসায় নিয়ে আসে। এরপর বারিক মিয়া শোয়াইবুরকে মাদ্রাসার শৌচাগারের কাছে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ শৌচাগারের ট্যাংকিতে ফেলে দেয়। বারিক মিয়া শোয়াইবুরকে হত্যার বিষয়টি সিতারা বেগমকে জানালে তারা দুজন মিলে তাকে খোঁজার নাটক শুরু করেন। পরে স্থানীয় লোকজন ঘটনার আগে শাবুল মিয়ার সঙ্গে শোয়াইবুরকে দেখছেন জানালে শাবুল মিয়াকে চাপ প্রয়োগ করলে ঘটনার কথা স্বীকার করে।

এরপর পুলিশ বারিক মিয়া, সিতারা বেগম ও শিশু শাবুল মিয়াকে আটক করে। ঘটনার পরদিন শোয়াইবুরের চাচাতো ভাই হামজা মিয়া বাদী হয়ে এই তিনজনকে আসামি করে জগন্নাথপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ ঘটনার তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ১৫ মার্চ বারিক মিয়া, সিতারা বেগম ও শাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর ৯ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন। মামলার দীর্ঘশুনানি শেষে মঙ্গলবার আদালত রায় দেন। রায়ের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বারিক মিয়া ও সিতারা বেগমকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

রায় ঘোষণার সময় বারিক মিয়া আদালতে উপস্থিত ছিলেন। সিতারা বেগম পলাতক আছেন। আসামি শাবুল মিয়া শিশু হওয়ায় তার বিচার শিশু আদালতে বিচারাধীন আছে।

মামলায় বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট ছইল হোসেন সুহেল মিয়া। তিনি মামলার রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আসামি বারিক মিয়ার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট বুরহান উদ্দিন ও সিতারা বেগমের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট আবদুল ওদুদ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত