তাহিরপুর প্রতিনিধি

০৩ জুলাই, ২০১৯ ০২:১৮

জাল কাগজে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক!

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভুমি ইজারা পাইয়ে দেবার কথা বলে জাল কাগজপত্র তৈরি করে এবার ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে।

ভুমি ইজারার নামে খোদ ভুমি মন্ত্রণালয় ও পাউবোর নামে জাল কাগজে প্রতারকচক্র ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার এ ঘটনা সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনে জানাজানির হলে দায়িত্বশীলদের চোখ কপালে উঠেছে।

প্রতারণার শিকার উজ্জ্বল মিয়া নামের ব্যাক্তি ও তার গোটা পরিবার ৩০ লাখ টাকা হারিয়ে এখন পথেপথে ঘুরছেন।

ভুক্তোভোগী উজ্জ্বল মিয়া জানান, নিকটাত্মীয় সিলেটের আম্বরখানা এলাকার বাসিন্দা গাফ্ফার চৌধুরী ওরফে অপু চৌধুরীর মাধ্যমে জানতে পারি ২০১৭ সালে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মাহমুদনগর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন সরকারি পতিত ভূমি ইজারা দেয়া হবে। অপু চৌধুরী এই সরকারি জায়গা ইজারা পাইয়ে দিতে পারবেন বলে জানায় আমাকে। আর ইজারা বাবদ ধাপে ধাপে অপু চৌধুরী ৩০ লাখ টাকা নেয় ও ইজারার বিভিন্ন কাগজপত্র দেয়।

এসব কাগজপত্র নিয়ে সম্প্রতি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারি এসবই ভুয়া কাগজ। বাস্তবের সঙ্গে এসব কাগজপত্রের কোনোরকম মিল নেই। এটা জানার পর আমার আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।

এর পর অনেক খোঁজ করেও অপু চৌধুরীকে পাননি বলে জানান উজ্জ্বল মিয়া।

উজ্জল মিয়া আরও বলেন, আমার এক ছেলেকে অনেক কষ্ট করে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। তার আয়ের সকল টাকা সে আমাকে ওই জমি ইজারা আনতে দিয়েছিল। এখন আমরা নিঃস্ব। অপু চৌধুরী যতগুলো কাগজ দিয়েছে সবগুলোই ভুয়া। তিনি আমার সব টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন।

গত সোমবার এক জরুরি সভায় ভুক্তোভোগী উজ্জ্বল মিয়া জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আইনশৃংখলা বাহিনীর নিকট প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি দালিলিখভাবে তুলে ধরে আইনি প্রতিকার চেয়েছেন।

প্রতারিত পরিবারকে দেয়া জাল ভুয়া কাগজপত্র পর্যবেক্ষণ করে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রশাসন নিশ্চিত হতে পেরেছেন, জেলার ধর্মপাশা উপজেলার মাহমুদনগর এলাকায় জেএল নং-১০৮,৬৯, এসএ,খতিয়ান-১২০, বুজারত খতিয়ান-৫২৬, ডিপি-৬৭, এসএ দাগ নং-২০৫৪, আর এস ২০৬৫ নং দাগে ৪০ শতাংশ, একই এলাকার এসএ,জেএল নং-১০৮, এসএ খতিয়ান-১২০, দাগ নং ২০৫৫ ও ২০৫৬ মোট দুই দাগে ৩.৯১ একর, ২০৬৪ ও ২০৫৩ নং দাগে ১.৯০ একরসহ মোট ৬.২১ একর জমির বিভাগীয় আলাদা আলাদা জাল কাগজপত্র তৈরি করে ১০ বছরের জন্য ইজারার অনুমোদনপত্র উজ্জ্বল মিয়াকে ধরিয়ে দেন চতুর অপু চৌধুরী।

উজ্জ্বল মিয়া জাল কাগজ যাচাই বাছাই না করেই এ ভুয়া কাগজপত্রকেই বিশ্বাস করে ধাপে ধাপে ৩০ লাখ টাকা দেন সেই প্রতারক অপু চৌধুরীকে।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেন, পাউবোর কথিত জমি লিজের ভুয়া জাল কাগজপত্র তৈরি করে সহজ সরল উজ্জ্বল মিয়ার নিকট থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হয়েছি।

এ বিষয়ে প্রতারিত ব্যক্তির খোয়া যাওয়া টাকা ফিরে পেতে ও আইনি সহায়তা পেতে জেলা প্রশাসন থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।

এই প্রতারককের সন্ধান পাওয়া মাত্র জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার, নিকটস্থ থানা পুলিশ ও আইনশৃংখলা বাহিনীকে জানানোর জন্য সর্ব মহলের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূইয়া বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড সরকারি জমি লিজ দিতে পারে না। প্রতারিত ব্যক্তি টাকা দেয়ার আগে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রতারণার বিষয়টি রোধ করা যেত।

প্রসঙ্গত প্রতারিত উজ্জ্বল মিয়া নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের বরকাশিয়া গ্রামের বাসিন্দা। প্রতারক অপু চৌধুরী ওই গ্রামে বিয়ে করেছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত