২৪ জুলাই, ২০১৯ ১৮:০২
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার লোহাইউনি চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি একই বাগানের চা শ্রমিক এক কিশোরীকে (১৬) অপহরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপহরণের ১০ দিন পর ২৩ জুলাই মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি অজিত কৈরীকে আটক করে অপহৃত ওই কিশোরীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় ওই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে অজিত কৈরীকে প্রধান আসামি করে কুলাউড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৩২। অপহরণকারী অজিত কৈরী (৪৫) উপজেলার ব্রাহ্মণবাজারের হা-মিম গ্রুপের মালিকানাধীন লোহাইউনি হলিছড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ওই কিশোরী লোহাইউনি হলিছড়া চা বাগানের শ্রমিক। দীর্ঘদিন ধরে ওই কিশোরীকে বিয়ের জন্য তার মা বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো একই বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ও তিন সন্তানের জনক অজিত কৈরী। এই প্রস্তাবে কিশোরী ও তার মা বাবা রাজি না হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও প্রদান করে আসছিল অজিত।
এর প্রেক্ষিতে রোববার (১৪ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে বোনের বাড়ি মৌলভীবাজারের বর্শিজুড়াতে বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়েছিলো ওই চা শ্রমিক কিশোরী। মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কে বাগানের প্রধান ফটকের সম্মুখে বাসের অপেক্ষারত অবস্থায় জোরপূর্বক ওই কিশোরীকে একটি সিএনজি অটোরিকশাতে তুলে নিয়ে যায় অজিতসহ আরও দুজন লোক। ওই দিন সন্ধ্যার দিকে ওই কিশোরীর মা তাঁর বড় মেয়ের কাছে মোবাইলে জানতে পারেন সে (কিশোরী) এখনো বোনের বাড়ি যায়নি। ওইদিন অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে পাওয়া যায়নি। পরদিন স্থানীয় বেশ কয়েকজনের মাধ্যমে কিশোরীর মা-বাবা জানতে পারেন বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি অজিত কৈরী দুইজন লোক নিয়ে ওই কিশোরীকে একটি সিএনজি অটোরিকশাতে তুলে কুলাউড়া শহরের দিকে নিয়ে গেছে।
ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর কিশোরীর মা-বাবা সোমবার (২২ জুলাই) বিষয়টি পুলিশকে অবগত করেন। কুলাউড়া থানার ওসি তদন্ত সঞ্চয় চক্রবর্তী ও এসআই মাসুদুল আলম ভুইঞা দুইদিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে অপহৃত কিশোরীকে উদ্ধার করে ও অপহরণের মুলহোতা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি অজিতকে আটক করে।
ওই কিশোরীর মা সিলেট টুডেকে বলেন, অজিতের প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর সে দ্বিতীয় বিয়ে করে এবং সে তিন সন্তানের বাবা। অনেক খোঁজাখুঁজি পর জানতে পারি অজিত আমার মেয়েকে অপহরণ করে উপজেলার জয়চী ইউনিয়নে ক্লিভডন চা বাগানে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বাবার বাড়ি (শশুর বাড়ি) নিয়ে যায়। আমি ও আমার ভাই সেখানে গিয়ে আমার মেয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে অজিতের শশুর বাড়ির লোকজন বিষয়টি অস্বীকার করে। পরে অজিতকে জিজ্ঞেস করলে সেও উল্টো আমাদের হুমকি দেয়। বিষয়টি পুলিশকে জানালে তারা অভিযান চালিয়ে আমার মেয়েকে উদ্ধার করেন।
কুলাউড়া থানার এসআই মাসুদুল আলম ভুইঞা সিলেট টুডেকে বলেন, সোমবার অপহরণের খবর পেয়েছি আমরা। দুইদিন ধরে অভিযান চালিয়ে অপহৃত কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে অজিতসহ দুজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।
কুলাউড়া থানার ওসি তদন্ত সঞ্চয় চক্রবর্তী বলেন, অপহৃত কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছে। অজিতকে আটক করে মৌলভীবাজার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
আপনার মন্তব্য