
২৮ আগস্ট, ২০১৫ ২৩:৩১
ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার ঘটনায় আটক মান্নান রাহি এরআগেও বিভিন্ন সময় ব্লগার ও মুক্তমনা লেখকদের হত্যার হুমকি প্রদান করে। বিভিন্ন সময় ব্লগারদের হত্যার হুমকি প্রদান করে আলোচিত ফারাবি শফিউর রহমানের সাথে ছিলো রাহির সখ্যতা। গত ফেব্রুয়ারিতে খুন হওয়া বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কেও 'থাবা বাবার পরিণতির' হুমকি দিয়েছিলো মান্নান রাহি।
বিভিন্ন সময় ব্লগারদের হত্যার হুমকি দিয়ে আসা এই উগ্রবাদীকে অবশেষে অনন্ত বিজয় হত্যার ঘটনায় শুক্রবার সিলেটের কানাইঘাটের নিজ বাড়ি থেকে আটক করে সিআইডি পুলিশ। এসময় তার ভাই মোহাইমিন নোমানকেও আটক করা হয়। আটকের পর দু'জনকেই সাতদিনের রিমান্ডে নিয়েছে সিআইডি পুলিশ।
সিআইডি পুলিশের বিশেষ সুপার আব্দুল্লাহ হেল বাকী শুক্রবার রাতে সাংবাদিকের জানান, মান্নান একাধিক আইডির মাধ্যমে ফেসবুকে ব্লগার ও মুক্তমনা লেখকদের হুমকী প্রদান করতো। সে মান্নান রাহি, মান্নান ইয়াহিয়া, মান্নান হীরা, আবুল মুহিবসহ বিভিন্ন ছদ্মনামে অনলাইনে পরিচয় প্রদান করতো।
বিভিন্ন তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে অনন্ত বিজয় দাশ হত্যায় জড়িত সন্দেহে মান্নান রাহী ও তার ভাই মোহাইমিন নোমানকে আটক করা হয়েছে বলে জানান এই সিআইডি কর্মকর্তা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, অভিজিৎ রায় হত্যার আগে ২০১৪ সালে গ্রেফতার হওয়া ফারাবীর এক স্ট্যাটাসে মান্নান রাহি কমেন্ট করে 'ভাই এভাবে আর কতো জবাব দেবেন? থাবা বাবার পরিণতির কথা ওকে স্মরণ করিয়ে দিলেই তো হয়।'
এর প্রতিউত্তরে ফারাবী লিখে,- '“অভিজিৎ রায় আমেরিকা থাকে। তাই তাকে এখন হত্যা করা সম্ভব না। তবে সে যখন দেশে আসবে তখন তাকে হত্যা করা হবে।"
২০১৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ফারাবি ও মান্নান রাহির মধ্যে ফেসবুকে এই আলাপচারিতা হয়। এর এর একবছর পর ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশে আসেন অভিজিৎ রায়। ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসির সামনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
ফারাবি ও রাহির এই আলাপচারিতার সূত্র ধরে ২৭ ফেব্রুয়ারি সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ 'অভিজিৎ রায়ের হত্যাকারী কারা?' শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
গত ১২ মে সিলেট নগরীর সুবিদবাজারে নিজ বাসার সামনে খুন হন ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় শুক্রবার সকালে সেই মান্নান রাহিকেই আটক করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, আটক মান্নান রাহী (২৪) শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বিবদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। উগ্রবাদী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ায় পড়ালেখা শেষ করতে পারেনি সে। স্নাতক শেষ না করেই পড়াশোনা ছেড়ে দেয় রাহি। অপরদিকে তার ভাই ও মোহাইমিন নোমান (২১) স্থানীয় একটি মাদরাসা থেকে আলিম পাশ করে এমসি কলেজে ভর্তি হয়।
এরআগে গত ৭ জুন আলোচিত এই হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় স্থানীয় একটি পত্রিকার ফটো সাংবাদিক ইদ্রিস আলী। রিমান্ড শেষে এখন জেলহাজতে আছেন ইদ্রিস।
অনন্ত হত্যার পরই তার বড়ভাই রত্মেশ্বর দাশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে নগরীর বিমানবন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে। পেশায় ব্যাংক কর্মকর্তা অনন্ত সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী ও মুক্তমনা ব্লগে লিখতেন। বিজ্ঞান বিষয়ক তার একাধিক বইও প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া অনন্ত যুক্তি নামে একটি বিজ্ঞান বিষয়ক ছোটকাগজ সম্পাদনা করতেন।
আপনার মন্তব্য