ছদরুল আমিন, ছাতক

০৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ২২:৫৩

ছাতকে গ্যাস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ

সুনামগঞ্জের ছাতকে জালালাবাদ গ্যাস অফিসের ম্যানেজারসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ ওঠেছে। অভিযোগ রয়েছে অফিসে কোনো বিষয়ে জানতে গেলে তারা গ্রাহকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এছাড়াও অফিসিয়াল দায়িত্ব পালন না করে এবং মাসের পর মাস অফিসে না এসেই হাজিরা খাতায় সাক্ষর দিয়ে বেতন-ভাতাসহ সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে নিচ্ছেন বলেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে সরজমিনে অফিস চলাকালীন সময়ে ছাতক জালালাবাদ গ্যাস অফিসে গেলে চরম অব্যবস্থাপনার চিত্র ফুটে উঠে। দেখা যায়, অফিসের ম্যানেজার প্রকৌশলী মাসুদ রানার কার্যালয়ের কয়েকটি অফিস কক্ষ খোলা থাকলেও কর্মকর্তারা ষ্টেশনে না থাকায় চেয়ারগুলো খালি অবস্থায় পড়ে আছে। এছাড়াও তালাবন্ধ অবস্থায় রয়েছে আরও দুটি অফিস কক্ষ। ইনচার্জ মনিরুজ্জামানসহ কয়েকজন সিকিউরিটি কার্যালয়ের বাইরে হাঁটাহাঁটি করছেন।

এ সময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি লক্ষ্য করে তাদের এখানে আসার কারণ জানতে চান অফিসের একাউন্টস কর্মকর্তা আউয়াল আল মিনাল। পরে তিনি জানান, অফিসের ৬ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তার মধ্যে ম্যানেজারসহ ৫ জনই অফিসের কাজে সিলেটে রয়েছেন। এ সময় অফিসের বারান্দায় অপেক্ষা করতে দেখা যায় বেশ কয়েকজন গ্রাহককে।

তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, টানা কয়েকদিন ধরে তারা বিভিন্ন কাজে অফিসে এসে কোন কর্মকর্তাকে কার্যালয়ে পাচ্ছেন না। একইভাবে দিনের পর দিন চলছে তাদের অপেক্ষা। এ যেন অপেক্ষার প্রহর শেষই হচ্ছে চাচ্ছে না তাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ম্যানেজার প্রকৌশলী মাসুদ রানা, সহকারী প্রকৌশলী শরীফুল হক, সহকারী সমন্বয় কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ আব্দুস সালাম ও গাড়ি চালক সুনীল এখানে জালালাবাদ গ্যাস অফিসের দায়িত্বে রয়েছেন। ছাতকে রয়েছে জালালাবাদ গ্যাসের দু’সহস্রাধিক গ্রাহক। এর মধ্যে আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহক ২ হাজার, বৃহৎ শিল্প ৫টি ও চুন শিল্প ১৪টি।

গ্রাহকদের অভিযোগ ম্যানেজার মাসুদ রানা, সহকারী প্রকৌশলী শরীফুল হক ও সহকারী সমন্বয় কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের স্বেচ্ছাচারিতায় এখানের গ্যাস গ্রাহকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। এসব কর্মকর্তাদের দ্বারা গ্রাহকরা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকারও হচ্ছেন বলে জানা গেছে। তারা মাসের পর মাস অফিসে না এসেই হাজিরা খাতায় সাক্ষর দিয়ে বেতন-ভাতাসহ সরকারি সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছেন।

এদিকে সহকারী সমন্বয় কর্মকর্তার পদে থাকলে গ্যাস অফিসের সর্বময় ক্ষমতাধর কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম গ্যাস অফিসকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো ব্যবহার করছেন। তিনি ছাতকে থাকলেও অফিসে থেকে দায়িত্ব পালনে তার রয়েছে অনীহা। তবে মাঝে-মধ্যে বিকেল বেলা এসে অফিস চত্বর ঘুরে যান বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ভুক্তভোগী এক গ্রাহক ছাতক পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহিদ মজনু সিলেটটুডে২৪ডটকমের এ প্রতিবেদকে জানান, গ্যাস সংযোগ সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের একটি আদেশের কপি নিয়ে ৩দিন ধরে তিনি অফিসে আসছেন। কিন্তু দায়িত্বশীল কাউকে না পেয়ে আদেশ কপিটি তিনি রিসিভ করাতে পারছেন না। অবশেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে এ আদেশ কপি গ্যাস অফিসে রিসিভ করাতে সক্ষম হন।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে জালালাবাদ গ্যাস ছাতক অফিসের ম্যানেজার প্রকৌশলী মাসুদ রানার সাথে মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে এই গ্রাহকের সাথে তিনি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে মাসুদ রানার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অনেকটা দম্ভের সঙ্গে এ প্রতিবেদকে জানান, তিনিসহ কর্মকর্তারা অফিসে আসা না আসার বিষয়টি তাদের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ নিয়ে কারো কাছে তিনি কৈফিয়ত দিতে রাজি নন।

ছাতক গ্যাস অফিসে নানান অব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট জালালাবাদ গ্যাস অফিসের ডিজিএম প্রকৌশলী সামছুল আলম শাহীন জানান, ছাতকের গ্যাস সংক্রান্ত মামলা নিয়ে অফিসের কর্মকর্তাদের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। এ জন্য নিয়মিত অফিস করতে পারছে না তারা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত