শাকিলা ববি

১৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০১:০৯

সিলেটে পুলিশের নির্দেশনা মানে না পার্সেল সার্ভিস

সিলেট নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ত এলাকা জিন্দাবাজার। এই এলাকার যানজট যেন প্রতিদিনকার সঙ্গী। ভোর থেকে রাত অবধি থাকে যানজট। ব্যস্ত এলাকায় বিভিন্ন পার্সেল সার্ভিসের বড় গাড়িগুলো যানজটের একটি কারণ।

এই বিবেচনা সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ নির্দেশনা দেয় নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম জিন্দাবাজার এলাকার পার্সেল সার্ভিসের অফিসগুলো সরানো। চার বছর আগেই এ নির্দেশনা দেয় পুলিশ। এই নির্দেশনার পর মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান তাদের অফিস সরিয়ে নেয়। বাকীরা স্ব-স্থানেই বহাল থাকে। এ অবস্থায় আবারও পার্সেল সার্ভিস সংশ্লিষ্টদের সাথে বসে নতুন বছরের ১ জানুয়ারি থেকে পার্সেল অফিসগুলো সরানোর নির্দেশনা দেয় পুলিশ। তবে এ নির্দেশনাও মানছে না কেউ। ফলে যখন তখন পার্সেল সার্ভিসের বড় বড় গাড়ি, কার্গো আর ভ্যান যখনতখন জিন্দাবাজারে প্রবেশ করে। এসব যানবাহন এই এলাকার যানজট বাড়িয়ে দিচ্ছে আরো।

জানা গেছে, সর্বশেষ প্রায় তিন মাস আগে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে সব পার্সেল সার্ভিসের ব্যবস্থাপক ও সিলেট জেলা পার্সেল সমিতির সদস্যদের নিয়ে সভা করে। তখন আবারও সিদ্ধান্ত হয় ২০২০ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যে জিন্দাবাজার থেকে সকল পার্সেল সার্ভিস সরানোর। সভায় সকল পার্সেলের প্রতিনিধিরা ট্রাফিক পুলিশের সিদ্ধান্তে সম্মতি প্রকাশ করলেও এখন পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেয়নি তারা। এমনকি ট্রাফিক পুলিশও জিন্দাবাজার থেকে ওইসব পার্সেল সার্ভিসের অফিস সরানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

সিলেট জেলা পার্সেল সমিতি সূত্রে জানা যায়, সিলেট জেলা পার্সেল সমিতির সদস্য হিসেবে আছে ৮টি পার্সেল সার্ভিস। এগুলো হলো- সুন্দরবন পার্সেল এন্ড কুরিয়ার সার্ভিস, বাংলাদেশ পার্সেল সার্ভিস, রেইনবো পার্সেল সার্ভিস, সুগন্ধা পার্সেল সার্ভিস, জননী পার্সেল সার্ভিস, এস.এ পরিবহন পার্সেল এন্ড কুরিয়ার সার্ভিস, এ.জে. আর পার্সেল সার্ভিস, ওমেক্স পার্সেল সার্ভিস।

এরমধ্যে চার বছর আগেই ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশনা মেনে এস.এ পরিবহন পার্সেল এন্ড কুরিয়ার সার্ভিস, সুগন্ধা ও রেইনবো জিন্দাবাজার থেকে তাদের অফিস সরিয়ে নেয়। তবে কিছুদিন পর রেইনবো পার্সেল সার্ভিস আবারও জিন্দাবাজারে তাদের অফিস নিয়ে আসে।

এই ৮ পার্সেল সার্ভিসের মধ্যে ৬টির অফিস এখনো জিন্দাবাজার এলাকায় থাকায় প্রায় সময়ই তাদের বড় কার্গো গাড়ি এই এলাকায় প্রবেশ করে। এই গাড়িগুলো প্রবেশ ও বাহিরের সময় জিন্দাবাজার এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন এ সড়ক ব্যবহারকারী সাধারণ যাত্রীরা।

বাংলাদেশ পার্সেল সার্ভিস ম্যানেজার মো. জাহারুল ইসলাম বলেন, ট্রাফিক পুলিশ থেকে মৌখিকভাবে আমাদের বলা হয়েছে ১ জানুয়ারির মধ্যে জিন্দাবাজার থেকে অফিস স্থানান্তরের জন্য। কিন্তু আমাদের অফিসের বিল্ডিংয়ের মালিকের সাথে চুক্তি শেষ না হওয়ায় আমরা যেতে পারছি না। চার পাঁচ মাসের মধ্যে আমাদের চুক্তি শেষ হবে। ইতোমধ্যে অফিস স্থানান্তরের জন্য কাজিরবাজারের দিকে নতুন অফিস দেখা হয়েছে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেই আমরা নতুন জায়গায় চলে যাব।

রেইনবো পার্সেল সার্ভিস ম্যানেজার হাসান বলেন, আমি একমাস যাবত এই প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার হিসেবে আছি। তাই ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশনা বা প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরের বিষয়ে আমি জানি না। তবে গত কয়েক মাস যাবত জিন্দাবাজারে গাড়ি প্রবেশ করাতে ট্রাফিক পুলিশ সমস্যা করছে। যদি প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে তাহলে আমি আগের ম্যানেজারের সাথে কথা বলে জানাতে পারবো।

জননী পার্সেল সার্ভিস ম্যানেজার মিজানুর রহমান মনির বলেন, ট্রাফিক পুলিশ থেকে বলা হয়েছিল পার্সেল সার্ভিসগুলো এখান থেকে সরানো যায় কি না। কিন্তু এখন আমাদের এত সামর্থ্য নাই যে সিলেটে ২টি অফিস রেখে ব্যবসা করার। তাছাড়া আমাদের প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ২ বার আসে। খুব সকালে ও বেলা ১১টার দিকে। তখন তেমন কোনো সমস্যা হয় না।

অফিস স্থানান্তর নিয়ে মতবিরোধ আছে সিলেট জেলা পার্সেল সমিতির সদস্যদের মধ্যেও। বেশ কয়েকটি পার্সেল সার্ভিস ম্যানেজার ও কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চার বছর আগে ট্রাফিক পুলিশ নির্দেশনা দিলেও এখনো বাস্তবায়ন হচ্ছে না পুলিশের কর্মকর্তাদের জন্যই। এ ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব যারা আছেন তারা প্রতি মাসে প্রতিটি পার্সেল সার্ভিস থেকে মোটা অংকের মাসোয়ারা পান। তারা বিভিন্ন সময় ডেকে নিয়ে সভা করে নির্দেশনা দেন ও মাসোয়ারার পরিমাণ বাড়ান। এই উদ্যোগ কখনোই বাস্তবায়ন করবে না ট্রাফিক পুলিশ। কারণ জিন্দাবাজার থেকে অফিস স্থানান্তর করলে ট্রাফিক পুলিশের মাসোয়ারা বন্ধ হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা পার্সেল সমিতির সভাপতি মো. মানিকুজ্জামান চৌধুরী মানিক বলেন, চার বছর আগে ট্রাফিক পুলিশ নির্দেশনা দেয় জিন্দাবাজার থেকে পার্সেল সার্ভিস অফিসসমূহ স্থানান্তর করার। তখন আমার প্রতিষ্ঠান সুগন্ধা পার্সেল অফিসসহ তিনটি স্থানান্তর করা হয়। আমি সভাপতি তাই কেউ যেন প্রশ্ন না তুলে সেজন্য আগে আমার পার্সেল সার্ভিস স্থানান্তর করেছি। এখন কেউ সরতে না চাইলে আমিতো কাউকে জোর করতে পারি না।

সম্প্রতি আবারও ট্রাফিক প্রশাসন ডেকে নিয়ে ১ জানুয়ারির মধ্যে জিন্দাবাজার থেকে অফিস স্থানান্তরের নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমি এ ব্যাপারে আমার সমিতির সদস্যদের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাকে বলেছে স্থানান্তরের ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশ যেহেতু জোর দিচ্ছি না তো আমি কেন জোর দিচ্ছি। এখন পুলিশ যদি তাদের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য কোনো উদ্যোগ না নেয় আমার কিছু করার নেই। তবে জনগণের ভোগান্তি বাড়িয়ে কারোরই ব্যবসা করা ঠিক হবে না। ব্যবসায়িক চিন্তা করলে আমিও আমার প্রতিষ্ঠান জিন্দাবাজার থেকে সরাতাম না। আমি এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ট্রাফিক প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশর পরিদর্শক (ট্রাফিক) মুহিবুর রহমান বলেন, জিন্দাবাজারের পার্সেল সার্ভিসগুলোকে অন্যত্র চলে যাওয়ার মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমি এতটুকুই জানি। কারণ আমি এই পদে নতুন এসেছি। যখন পার্সেল সমিতির সদস্যদের নিয়ে বসা হয় তখন প্রশাসনের দায়িত্বে ছিলেন ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ হানিফ। তিনি এ বিষয়ে ভাল বলতে পারবেন।

এ ব্যাপারে ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ হানিফ বলেন, জিন্দাবাজারের যানজট নিরসনের জন্য প্রায় তিন মাস আগে সকল পার্সেল সার্ভিস অফিস জিন্দাবাজার থেকে সরানোর মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে লিখিতভাবে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আমাদের ডিসি স্যারের নির্দেশনা রয়েছে। তবে লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিনা সেটা আমি বলতে পারবো না। কারণ আমি এখন প্রশাসনের দায়িত্বে নেই।

এই ট্রাফিক পরিদর্শক আরও বলেন, শুধু পার্সেল সার্ভিস নয়, সব ধরনের বড় কাভার্ড ভ্যান, কার্গো গাড়ি পিক আওয়ারে শহরে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা আছে। আমাদের নির্দেশনা আছে এসব বড় গাড়ি রাত ১০টার পর শহরে প্রবেশ করবে এবং সকাল ৯টার ভেতরে শহর ত্যাগ করবে। তবে যেহেতু পার্সেল সার্ভিস একটি ইমার্জেন্সি এবং জরুরি শাখা, তাই তাদের বড় গাড়িগুলো শহরের বাইরে রেখে ছোট গাড়ি দিয়ে মালামাল আনতে বলা হয়েছিল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত