হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

১৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০১:৩৮

‘ঘরে তালা দিয়ে রাখে, খাবার দেয় না’: সৌদি থেকে হবিগঞ্জের আরেক নারীর ভিডিওবার্তা

গত নভেম্বর মাসে সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরেছেন হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হুসনা আক্তার। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সৌদি আরব থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়ে ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন হবিগঞ্জের আরেক নারী।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ওই নারীর নাম সুমা আক্তার (২২)। ভিডিও ও অডিও বার্তায় সুমা বলেন, ‘‘আমি মোছা. সুমা আক্তার। আমারে দালালে ভালা কথা কইয়া সৌদি পাঠাইছে। সৌদির রিয়াদ এলাকায় আমি কাজ করি। আমি আইসা দেখি ভালা না। ওরা আমার উপর অত্যাচার করে। আমি বাক্কা দিন (১ মাস ১৫দিন) হইছে আছি। এখন এরার অত্যাচার আমি সহ্য করতে পারি না দেইক্কা কইছি আমি যাইমু গা। এই কথা বলায় ওরা আরও বেশি অত্যাচার করে। এরা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। আমি আর পারতাছি না। তোমরা যেভাবে ভাবো পারো আমারে বাঁচাও। এরা আমারে বাংলাদেশ পাঠাইতো চায় না। আমারে তালা দিয়া রাখে। ঠিকমত খাবার দেয় না। যখন মন চায় তখন খাবার দেয়। এমনও দিন আছে আমি পানি খেয়ে থাকি। ফোন করতে দেয় না। বাথরূমে গিয়ে লুকিয়ে ফোন করতে হয়। তারা আমাকে মারধর করে। মুখ চেপে ধরে। দাঁতের ব্যথায় আমি কথাও বলতে পারি না। দালালরে ফোন দিলে সে আমারে আরও ভয় দেখায়। সে বলে সাংবাদিককে বললে আমারে আর দেশের মাটিতে আনবে না। এজেন্সির কোন নাম্বার নাই। বাড়িতে ফোন দিয়া মা-বাপরে বলছি। দালাল আমার মা-বাপের ফোন ধরেনা। আমারে ভালা কামের (কাজের) কথা কইয়া পাঠাইছে দালালে। আমি আর  এদের অত্যাচার সহ্য করতাম পারতাছি না। তোমরা যেভাবে পারো আমারে নেও।’’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চুনারুঘাট উপজেলার ১০নং মিরাশি ইউনিয়নের আমতালা গ্রামের দিনমজুর মহরম আলীর মেয়ে সুমা আক্তার আর্থিক অস্বচ্ছলতা দুর করার জন্য সৌদি আরবে যান। কিন্তু সেখানে গিয়েই বিপাকে পড়েন সুমা। অতিরিক্ত কাজের চাপ ও গৃহকর্তার নির্যাতনে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন হবিগঞ্জের এই নারী।  

সুমার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দেড় মাসে আগে আর্থিক সহায়তা করার জন্য সৌদি আরবে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সুমা। চুনারুঘাট উপজেলার আমরোড টেকানগর এলাকার কোনবাড়ির দরবেশ আলীর ছেলে কবির নামে এক দালালের সহযোগিতায় ঢাকার ‘এক্টিভ মেন পাওয়ার সার্ভিস’ নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরবে যান তিনি। এজেন্সি থেকে বলা হয়েছিল তাকে গৃহস্থালীয় কাজে পাঠানো হচ্ছে। বেতন ধরা হয়েছিল মাসিক ২২ হাজার টাকা। কিন্তু সেখানে যাবার পর ১৫ হাজার টাকা বেতন পাবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। এখনও কোন বেতন হাতে পায়নি সুমা।

সৌদি আরব যাওয়ার ১০দিনে মাথায় নির্যাতনের বিষয়ে সুমা তার বাবাকে জানান। সুমার বাবা মহরম আলী তাকে ফিরে আসার জন্য দালালের সাথে যোগাযোগ করলে দালাল কবির সুমাকে বাংলাদেশে ফেরত আনতে অপারগতা প্রকাশ করে তাকে গালিগালাজ করে। ২ বছরের মধ্যে তাকে দেশে ফেরত আনা যাবে না বলেও জানান কবির।

দিনদিন সুমার উপর অত্যাচার বাড়তে থাকায় সুমার বাবা মহরম আলী আবারও কবিরের কাছে গিয়ে মেয়েকে দেশে আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করলে কবির সুমার বাবার কাছে ১ লাখ টাকা দাবি করে। এরপর থেকে দালাল কবির নানা বাহানা দেখিয়ে আসছে।

এব্যপারে কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সুমার উপর অত্যাচারের বিষয়টি আমি শুনেছি। এজেন্সির সাথে যোগাযোগও করেছি। তাকে দেশে ফেরত আনার জন্য চেষ্টা করছি। তবে টাকা চাওয়ার ব্যাপারটি তিনি অস্বীকার করেন।

সুমার বাবা মহরম আলী গত ১২ জানুয়ারী চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একঠি লিখিত আবেদন করেন।

এ বিষয়ে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মঈন উদ্দীন ইকবাল জানান, বিষয়টি শোনার পর তার বাবার সঙ্গে আলাপ করেছি। এবং ভিসার সকল কাগজপত্র আমরা চেয়েছি। সুমা সৌদি আরবে আছে এটা নিশ্চিত হয়েছি। কিন্তু ভিসার কাগজপত্র ছাড়া আমরা যোগাযোগ করতে পারছি না। সে কোথায় আছে, কোন কোম্পানির মাধ্যমে গিয়েছে সেটা নিশ্চিত হতে ভিসার কাগজপত্র লাগবে। আমরা এগুলো পেলে অবশ্যই সুমার পাশে দাঁড়াবো এবং তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত