দেবকল্যাণ ধর বাপন

১৯ জানুয়ারি, ২০২০ ২২:৩৪

সিলেটে বাহারি পিঠার সমারোহে জমে উঠেছে পিঠা উৎসব

সিলেটে জমে উঠেছে ৪ দিনব্যাপী জাতীয় পিঠা উৎসব। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ২৫টি স্টলে বাহারি রকমের পিঠা নিয়ে শুরু হওয়া উৎসবের সঙ্গী হতে অসংখ্য পিঠা প্রেমীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে উৎসব প্রাঙ্গণে।

সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর, টাঙ্গাইলসহ দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলের ১৫০ রকমের পিঠা পাওয়া যাচ্ছে জাতীয় পিঠা উৎসবের স্টলগুলোতে। গ্রামীণ ঐতিহ্যের পিঠা পুলির সঙ্গে শহরের মানুষদের পরিচয় করে দিতে এমন আয়োজন বলে জানান এই উৎসবের আয়োজকরা।

প্রায় দেড় শ’ পদের পিঠা নিয়ে হাজির হয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পিঠা শিল্পীরা। উৎসবের বিভিন্ন স্টলে রয়েছে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ঝাল পিঠা, মালপোয়া, মেড়া পিঠা, মালাই পিঠা, কাটা পিঠা, কলা পিঠা, খেজুরের পিঠা, ক্ষীর কুলি, গোকুল পিঠা, গোলাপ ফুল পিঠা, লবঙ্গ লতিকা, সরভাজা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা, পাকান পিঠা, নারকেলের সেদ্ধ পুলি, তেলের পিঠা, তেলপোয়া পিঠা, পানতোয়া, ঝালপোয়া পিঠা, ছাঁচ পিঠা, দুধ চিতই, চুঙ্গা পিঠা, চাপড়ি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, সূর্যমুখী পিঠা, ফুল পিঠা, নকশি পিঠা, নারকেল পিঠাসহ আরও বাহারি সব নামের পিঠা।

এদিকে পিঠা উৎসবের মতো এমন আয়োজনের সঙ্গী হতে পেরে আনন্দিত মেলায় উপস্থিত দর্শনার্থীরা। শুধু পিঠা খাওয়াই নয় এই উৎসব বিভিন্ন জেলার মানুষের মিলনমেলায় পরিণীত হয়েছে। সিলেটে বসবাসরত বিভিন্ন জেলার মানুষজন তাদের এলাকার স্টল খুঁজে খুঁজে বের করে পিঠা খেতে দেখা গেছে।

পিঠা উৎসবের সিলেটের স্টল সংক্রান্তির সামনে সেলফি তুলছেন অপরাজিতা ধর নামের এক তরুণী। কথা হয় তার সঙ্গে। বান্ধবিদের নিয়ে মেলার এসে বিভিন্ন স্টলে ঘুরে ঘুরে পছন্দের পিঠা খাচ্ছেন ও ছবি তুলছিলেন তিনি।

তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমন একটি আয়োজনের সঙ্গী হতেই বন্ধুদের নিয়ে এখানে আসা। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নাম না জানা অনেক পিঠার নামও জানতে পেরেছি ও খেয়েছি। এখন বান্ধবীদের নিয়ে ছবি তুলছি।’

পিঠা খেতে আসা গৃহিণী ফাতেমা ইয়াসমিন দিবা বলেন, ‘সব সময় ঘরে আমাদের অঞ্চলের পিঠা বানিয়ে খাই। শুনলাম পিঠা উৎসবে অন্য অঞ্চলের পিঠা ও পাওয়া যাবে। তাই আসলাম।  মেলায় এসে বিভিন্ন  অঞ্চলের অনেক মুখরোচক পিঠার স্বাদ নিয়েছি। খুব ভাল লাগছে।’

মোহাম্মদ মহসিন পিঠা খেয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় রংপুর পিঠা স্টলের পরিচালককে বলতে শোনা যায়, “আমিও রংপুরের মানুষ।” তার এই কথার শুনে পরিচালক জিজ্ঞেস করলেন “কোন এলাকার”। এভাবেই দুজনের মধ্যে শুরু হয় কথা বার্তা হাস্যরস।

মোহাম্মদ মহসিন এসময় প্তিবেদককে বলেন, ‘আমার এলাকার নাম দেখেই এই স্টলে পিঠা খেতে এসেছি। চাকরির সুবাদে সিলেট থাকি। তাই অনেকদিন পর নিজ এলাকার মানুষদের দেখে অনেক ভাল লাগছে।’

ভৈরব নাবিলা পিঠা ঘরের প্রোপাইটর সালমা আক্তার বর্ষা বলেন, ‘প্রায় ১০০ রকমের পিঠা আছে আমার স্টলে। সিলেটে পিঠা মেলায় এত মানুষজন আসবেন ভাবিনি। অনেক মানুষ আসছেন, পিঠা খাচ্ছেন, ছবি তুলছেন, নাচ গান দেখছেন। সবার এই সতস্পুর্ত আগমনে আমারা অনেক খুশি। দেশের বিভিন্ন  অঞ্চলের সংস্কৃতি, খাবার স্বাদ আদান প্রদানের জন্য বছরে একবার হলেও এধরনের  পিঠা উৎসবের আয়োজন করা প্রয়োজন।’

রংপুর পিঠা ঘরের পরিচালক কামরুন্নাহার  রিক্তা ও তাসনিয়া বিনতে মাহবুব বলেন, ‘এটা অনেক ভাল উদ্যোগ। এখানে শুধু পিঠা বিক্রি নয় এক অঞ্চলের সাথে আরেক অঞ্চলের  মানুষের সুসম্পর্কও তৈরি হচ্ছে।’

গোলাপি পিঠা ঘরের প্রোপাইটর সঞ্চিতা রানী সিং বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই পিঠা উৎসব জমে উঠেছে। প্রচুর মানুষ আসছেন। আমরা পিঠা বিক্রির পাশাপাশি আনন্দও করছি।’

বাঙ্গালির হাজার বছরের পিঠা ঐতিহ্যকে নগরজীবনে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদ বিগত ১৩ বছর ধরে বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকায় জাতীয় পিঠা উৎসব আয়োজন করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছর প্রথমবারের মতো এই উৎসব দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে ঢাকার বাইরে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যার প্রথম আয়োজন অনুষ্ঠিত হলো পুণ্যভূমি সিলেটে।

এ ব্যাপারে সিলেটে জাতীয় পিঠা উৎসব আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ও নাট্যমঞ্চ সিলেটের সভাপতি রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, সিলেটে আয়োজন করতে পেরে আমরা ভীষণ খুশি। সিলেটবাসী কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। আমরা চাইবো এমন আয়োজন যেন সিলেটে বারবার করা যায়। এ জন্য তিনি জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

সিলেটে প্রথম বারের মতো শনিবার (১৮ জানুয়ারি) নগরীর রিকাবীবাজারস্থ জেলা ক্রীড়া সংস্থা প্রাঙ্গণের বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে শুরু হওয়া পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদ। যা চলবে আগামী ২১ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) পর্যন্ত। তবে মেলার তৃতীয়দিন অর্থাৎ আগামীকাল সোমবার উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান।

প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পিঠা উৎসবের পাশাপাশি চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সিলেটের প্রায় ৪০টি সংগঠন তাদের পরিবেশনার মাধ্যমে আনন্দ দিচ্ছেন  মেলায় আগতদের।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত