কুলাউড়া প্রতিনিধি

২৬ জানুয়ারি, ২০২০ ২১:০০

কুলাউড়ায় ধান ক্রয়ে অনিয়ম, কৃষকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় আমন ধান সংগ্রহে পরিমাপ ও আর্দ্রতা চেকিংয়ের দোহাই দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে খাদ্য গুদামের কর্মচারী ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে গত দুই মাসে ধান সংগ্রহে গুদামে স্থানান্তর ও পরিমাপে প্রায় লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কৃষকদের কাছ থেকে।

জানা যায়, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর কর্তৃক ধান সংগ্রহে নিয়োজিত ঠিকাদারের শ্রমিকরা ধান পরিমাপ ও গুদামে স্থানান্তরের জন্য টন প্রতি বাধ্যতামূলক ৩০০টাকা হাঁকছেন কৃষকের কাছে। কেউ সেই টাকা না দিলে শ্রমিকরা তাঁর ধান পরিমাপে অপারগতা জানান এমন অভিযোগ করেছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে আমন ধান সংগ্রহের জন্য মোট ৪ হাজার ৪৯৬ জন কৃষকের তালিকা থেকে লটারির মাধ্যমে দুই হাজার ২৪২ কৃষককে সরকারের কাছে সরাসরি ধান বিক্রির জন্য বাছাই করা হয়। গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩ মাসে সরাসরি প্রতি কৃষকের কাছ থেকে ১ টন করে ২২৪২ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সংগ্রহের পর ধান পরিমাপের জন্য গুদামে স্থানান্তর ও পরিমাপের জন্য জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর কর্তৃক ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেই ঠিকাদারের অধীনে শ্রমিকরা কৃষকদের কাছ থেকে ধান গুদামে স্থানান্তর করবেন। এজন্য ঠিকাদার তাদেরকে পারিশ্রমিক প্রদান করবেন।

সরেজমিনে উপজেলা খাদ্য গুদামে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কৃষকরা তাদের ধান নিয়ে এসেছেন। অনেকেই সপ্তাহ খানেক আগে ধান জমা দিয়েছেন কিন্তু টাকার রসিদ এখনো পাননি। কারণ সেখানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি নেই। সেই সুযোগে ধান সংগ্রহে নিয়োজিত ১৪জন শ্রমিকরা কৃষকদের কাছ থেকে টনপ্রতি ৩০০-৪০০ টাকা করে অর্থ আদায় করে নিচ্ছেন। কোন কৃষক টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে শ্রমিকরা ধান পরিমাপ ও গ্রহণ করবে না বলে হুঙ্কার দে যার কারণে বাধ্য হয়ে কৃষকরা টাকা দিচ্ছে। খাদ্যগুদামের কর্মচারী মনিন্দ্র সিংহ ধানের আর্দ্রতা চেক করার সময় কৃষকদের কাছ থেকে ১০০-১৫০ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন। ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬৫০ জন কৃষকের মধ্যে অনেকের কাছ থেকে টনপ্রতি ৩০০ টাকা করে প্রায় লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেখেও না দেখার ভান করে শ্রমিকদের পক্ষে সাফাই গাইছেন।

খাদ্য গুদামে ধান নিয়ে আসা কাদিপুরের কৃষক আব্দুল কাইয়ুম, ছনর মিয়া, সুনু মিয়া, টিলাগাঁওয়ের কৃষক জয়নাল মিয়া, চিনু ক্বারি, অরুণ দাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অনেক কষ্ট করে গোলায় ধান তুলেছি। আর সেই ধান সরাসরি বিক্রি করতে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে দায়িত্বরত শ্রমিকরা আমাদের কাছে জোরপূর্বক ধান পরিমাপে ৩০০ টাকা ও ধানের আর্দ্রতা চেকিংয়ের জন্য ১০০-১৫০ টাকা করে নিচ্ছেন। তাদের কথা না শুনলে তারা ধান পরিমাপ করবে না বলে জানায়।

কাদিপুর ইউনিয়নের ছকাপন গ্রামের কৃষক মাশুক মিয়া জানালেন, গত বৃহস্পতিবার ধান জমা দিয়েছেন কিন্তু এখনো টাকার রসিদ পাননি এজন্য ব্যাংক থেকে টাকাও তুলতে পারছেন না। পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ভাটগাঁও গ্রামের কৃষক মজির মিয়া বলেন, তাদের এলাকার দুজনে কাছ থেকে ধানের আর্দ্রতা চেক করার জন্য ২০০ টাকা নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মচারী।

ধান সংগ্রহে নিয়োজিত শ্রমিকদের সর্দার বকুল মিয়া বলেন, ধান পরিমাপে কৃষকরা খুশি হয়ে যা দিচ্ছে তা আমরা নিচ্ছি। কৃষকরা টাকা না দিলে আমাদের পোষায় না। তাই টাকা নিচ্ছি।
ধান সংগ্রহে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় কর্তৃক নিয়োজিত ঠিকাদার আকবর আলী বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে টাকা চেয়ে নেবার কোন নিয়ম নেই। কোন শ্রমিক যদি টাকা নিয়ে তাকে তাহলে বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

এ ব্যাপারে কুলাউড়া খাদ্য গুদামের দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহীন মিয়া বলেন, গাড়ি থেকে ধান নামাতে গিয়ে কৃষকরা খুশি হয়ে শ্রমিকদের টাকা দিচ্ছে। আর ধান পরিমাপে কৃষকদের কাছ থেকে টাকা না নিতে শ্রমিকদের আগ থেকেই বলে আসছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার দেব বলেন, আবহাওয়া প্রতিকূলে না থাকায় ধান ক্রয়ে একটু ধীরগতি হয়েছে তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে তিনি জানান। আর অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, গুদামের ভিতরে ধান পৌঁছে দেবার পর কৃষকদের কাছ থেকে টাকা নেবার কোন সুযোগ নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা ধান-চাল সংগ্রহ কমিটির সভাপতি এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ধান সংগ্রহে অভিযোগ কিংবা অনিয়মে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কৃষকদের কাছ থেকে টাকা বা হয়রানি যাতে না করা হয় সেজন্য দুটি ব্যানার গুদামে লাগানোর নির্দেশনা দিয়েছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত