বানিয়াচং প্রতিনিধি

২৭ জানুয়ারি, ২০২০ ১৪:২৫

বানিয়াচংয়ে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব

দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য পলো বাওয়া। কালের পরিক্রমায় শুকিয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে খাল-বিল আর নালা। আগের মতো আষাঢ়-শ্রাবণ এলেও নৌকায় পাল তুলে মাঝিদের গান ধরতে দেখা যায় না। শত প্রতিকূলতার মাঝেও কেউ কেউ বাঙালি গ্রামীণ সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে লালন করার চেষ্টা করছে।

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় বানিয়াচং উপজেলার ১০নং সুবিদপুর ইউনিয়নের আতুকুড়া বড়আন বিলে এরই ধারাবাহিকতায় আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব।

এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নানা বয়সের কয়েকশ মানুষ পলো নিয়ে এই উৎসবে অংশ নেন। এতে প্রায় সব বয়সের মানুষ মাছ ধরে সীমাহীন আনন্দে মেতেছেন। দিনভর বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা ছেলে-বুড়ো সকলেই মেতেছিল পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসবে।

শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার এই উৎসবকে বাঁচিয়ে রাখতে নদী রক্ষার দাবি মাছ শিকারিদের।

বানিয়াচং উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী-নালা খাল-বিলের পানি এরই মধ্যে শুকিয়ে এসেছে। আর এসব শুকনো জলাশয়ে প্রতি বছরের পৌষ মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে বিভিন্ন এলাকায় সৌখিন মৎস্য শিকারিদের পলো বাওয়া উৎসব। এ সময় মাছ শিকারিরা ঐক্যবদ্ধভাবে দল বেঁধে উৎসবমুখর পরিবেশে পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নেন।

পলো বাওয়া উৎসবের বৈশিষ্ট্যই হলো দলবেঁধে পলো নিয়ে (বাঁশ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি ঝাঁপি) মাছ ধরা। উৎসবের দিন নিজ নিজ পলো, হাতাজাল, উড়াল জালসহ নানা ধরণের মাছ ধরার জিনিসপত্র নিয়ে মাছ শিকারিরা মিলিত হন এই বড়আন বিলে।

অন্যদিকে এই উৎসবকে ঘিরে সৌখিন মাছ শিকারিরা গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন সমিতি। এসব সমিতির সৌখিন মাছ শিকারিরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে পলো বাওয়ার দিনক্ষণ নির্ধারণ করে পরে সবাইকে জানিয়ে দেন। এ ঘোষণার পর আগ্রহী শৌখিন মাছ শিকারিরা বাঁশের তৈরি পলো নিয়ে পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নেন। পর্যায়ক্রমে একেক নদীতে বা জলাশয়ে এমনকি বিলে একেক দিন এই পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

পলো বাওয়া উৎসবে একজন একটি মাছ ধরার সঙ্গে সঙ্গে দর্শনার্থীরাও আনন্দে মেতে ওঠেন। উৎসবে শৈল, গজার, বোয়াল, মাগুর মাছসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে। পলো বাওয়া দেখতে আশেপাশের গ্রামের শতশত লোকজন ভিড় জমান বড়আন বিলে।

মাছ শিকারি আব্দুল রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদী-নালা ও খাল-বিলের তলদেশে ভরাট হয়ে প্রতিনিয়ত পানি হ্রাস পাচ্ছে। নদী দূষণসহ নানামুখী তৎপরতার কারণে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্রগুলোর বেশিরভাগই বিনষ্ট হয়ে গেছে। নদী-খাল-বিল বেঁচে থাকলে বেঁচে থাকবে ঐতিহ্যবাহী এই পলো উৎসব।

সৌখিন মাছ শিকারি ইকবাল হোসেন বলেন, দীর্ঘকাল ধরে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় আমরা গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে এ উৎসবে অংশ নিয়ে থাকি।

দিনে দিনে হারিয়ে যাওয়া বাঙালি ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে নদীমাতৃক প্রতিটি এলাকাতেই যেন এই ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসবের আয়োজন করা হয় এ দাবি জানান তিনি।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত