বড়লেখা প্রতিনিধি

২৭ জানুয়ারি, ২০২০ ১৮:২৫

বড়লেখায় নৃশংসতা : মারা গেলেন আহত সেই নারী

মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাল্লাতল চা বাগানে স্ত্রী, শাশুড়িসহ চারজনকে খুন করে নির্মল কর্মকার নামের এক ব্যক্তির আত্মহত্যার ঘটনায় আহত প্রতিবেশী কানন বালা (৩৪) মারা গেছেন। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬ জনে।

ঘটনার ৮ দিন পর সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সকালের দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। তিনি ওই বাগানের মৃত বসন্ত বক্তার স্ত্রী। গত রোববার (১৯ জানুয়ারি) খুন হওয়া চার জনের মধ্যে তাঁর স্বামী বসন্ত ও মেয়ে শিউলি ছিলেন। এসময় তিনি গুরুতর আহত হন।

কানন বালা মারা যাওয়ার বিষয়টি দুপুরে নিশ্চিত করেছেন, বড়লেখার শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (পুলিশ পরিদর্শক) মোশাররফ হোসেন এবং পাল্লাতল চা-বাগানের হ্যাড ফ্যাক্টরি ক্লার্ক অঞ্জন দাস।

এদিকে পাঁচটি আকস্মিক মৃত্যুর শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই আরেকটি মৃত্যুর সংবাদে পাল্লাতল বাগানের শ্রমিকরা শোকে আবারও স্তব্ধ। কানন বালার মৃত্যুতে তাঁর পরিবারের আর কেউ বেঁচে রইল না।

প্রসঙ্গত, গত রোববার (১৯ জানুয়ারি) ভোরে বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের সীমান্তসংলগ্ন দুর্গম পাহাড়ি এলাকার পাল্লাতল চা-বাগানে নির্মল কর্মকার (৩৮) নামে এক যুবক পারিবারিক কলহের জের ধরে তাঁর স্ত্রী জলি বুনার্জি (৩০), শাশুড়ি লক্ষ্মী বুনার্জি (৬০), প্রতিবেশী বসন্ত বক্তা (৬০) এবং বসন্ত বক্তার মেয়ে শিউলি বক্তাকে (১৪) দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। পরে নিজে ঘরের ভেতর ছাদের কাঠে ঝুলে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন বসন্ত বক্তার স্ত্রী কানন বালা। সে সময় স্থানীয়রা তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনার সময় কোনো মতে প্রাণে বেঁচে যায় জলি বুনার্জির আগের স্বামীর পক্ষের মেয়ে চন্দনা বুনার্জি (৯)। এই ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়।

পরে গত রোববার (১৯ জানুয়ারি) রাতে পাল্লাতল চা-বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বাদী হয়ে বড়লেখা থানায় দুটি মামলা করেন। এরমধ্যে একটি হত্যা মামলা এবং অপরটি অপমৃত্যুর মামলা। মামলায় কাউকে আসামি করা হয়নি। এই ঘটনার পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

পাল্লাতল চা-বাগানের হ্যাড ফ্যাক্টরি ক্লার্ক অঞ্জন দাস সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে বলেন, ‘এই ঘটনায় পুরো বাগানবাসী স্তব্ধ। একসাথে এতজনের মৃত্যু, ভাবতেই কষ্ট লাগছে। পাঁচ জনের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই কানন বালার মৃত্যুর খবর। সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে, নির্মলের হাত থেকে তার স্ত্রী জলিকে বাঁচাতে গিয়ে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি। পরিবারটির কেউ বেঁচে রইল না।’

বড়লেখার শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (পুলিশ পরিদর্শক) মোশাররফ হোসেন সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বলেন, ‘কানন বালা চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট ওসমানী হাসপাতালে সোমবার সকালে মারা গেছেন। সিলেট কোতোয়ালী থানা পুলিশ নিহতের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করবে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হবে। ময়নাতদন্ত শেষে বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত