রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং

১৭ ফেব্রুয়ারি , ২০২০ ২০:৫৯

বানিয়াচংয়ের শহীদ মিনার যেন ময়লার ভাগাড়!

শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা

সারাবছরই অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকে বানিয়াচংয়ের একমাত্র শহীদ মিনারটি। শুধুমাত্র ২১ ফেব্রুয়ারি মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস এলেই শুরু হয় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কাজ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দুই একদিন আগে ও পর ছাড়া বছরের বাকী সময় জুড়েই শহীদ মিনারটি থাকে ময়লার ভাগাড় হিসেবে। ভাষা শহীদদের সম্মানে তৈরি করা এই শহীদ মিনারকে যেন দেখভাল করার কেউ নেই।

পবিত্রতা রক্ষার্থে যে কোন শহীদ মিনারে জুতা পায়ে দিয়ে প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা মানছেন না কেউ। বরং বানিয়াচং শহীদ মিনারটি পরিণত হয়েছে বেকার মানুষদের আড্ডাখানায়। পাশের জিপ স্ট্যান্ডের চালকরা অবসরে আড্ডা মেরে সময় কাটান শহীদ মিনারে। এই আড্ডায় শহীদ বেধিতে বসেই চলে চায়ের সাথে ধূমপান।

স্থানীয়রা জানান, বানিয়াচং বড়বাজারস্থ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে রাখা হয় মোটরসাইকেল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশও হয় এই শহীদ মিনারের ভিতরে। বানিয়াচং বড়বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি কর্তৃক শহীদ মিনারটির পবিত্রতা রক্ষায় সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়। তবে এই সাইনবোর্ড কারো চোখে পড়ে না। সকাল থেকে এই শহীদ মিনারের আশপাশ পরিণত হয় প্রস্রাবখানায়। সন্ধ্যা নামার পরই মাদকসেবীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিণত হয় এই শহীদ মিনার।



সরেজমিনে দেখা যায়, দিনের বেলায় অনেকেই জুতা পড়ে মিনারের বেদিকে হাঁটা-চলা করছেন। পাশাপাশি শহীদ মিনারের ভিতরে এক কবিরাজ মজমা সাজিয়ে নানান রকম ঔষধ বিক্রি করছেন। জনৈক এক ব্যক্তি এই শহীদ মিনারে হাঁস-মোরগের খাদ্য শুকাচ্ছেন। পাশের স্ট্যান্ড থাকায় তাদের জীপ গাড়ি, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল এলোপাতাড়ি করে রাখা হয়েছে।

সারা বছর খবর না নিয়ে শুধুমাত্র ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি এলেই কিছুটা কদর বাড়ে বাংলাভাষার গৌরবময় স্মৃতিবিজড়িত স্থান শহীদ মিনারের। চলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও সাজ-সজ্জার কাজ। শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি মাসে শহীদ মিনারে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও সাজ-সজ্জা আর সারাবছর কোনো নজর রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতনমহল। ভাষা শহীদদের সম্মানার্থে শহীদ মিনারের মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষায় জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

অভিযোগ রয়েছে- শহীদ বেদিতে বসে উশৃঙ্খল তরুণেরা ধূমপানসহ মাদক সেবন করে। শহীদ মিনারের মূল বেদিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকে সিগারেটের প্যাকেট ও অসংখ্য উচ্ছিষ্ট অংশ, খড়কুটো,ময়লা-আবর্জনায়। আবার এই শহীদ মিনারের ভিতের মেলাও অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে মিনারের পূর্বদিকটা অস্থায়ী প্রস্রাবখানা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তাই এখানে উদ্ভট গন্ধ থাকে সব সময়। শহীদ মিনারের দুইদিকে স্টিলের পাইপ দিয়ে সীমানা দিলেও সেটা কাজ শেষ করার পরপরই ভেঙ্গে পড়ে যায়। এসব পাইপ কে বা কারা নিয়ে গেছে তারও কোনো হদিস নেই।

বানিয়াচংয়ের ভাষাসৈনিক অ্যাডভোকেট শদাকত আলী খান বলেন, শহীদ মিনারটি যেভাবে মর্যাদাহীন হচ্ছে এর চেয়ে বড় দুঃখ আর কিছুই হতে পাওে না। শুধুমাত্র দিবস এলেই এর কদর বেড়ে যায়। তাই সবসময় যাতে এই শহীদ মিনারটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং শহীদ মিনারের চতুঃপার্শ্বে সীমানা নির্ধারণ করা যায় জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুন খন্দকারের সাথে। তিনি জানান, কেউ যাতে শহীদ মিনারের পবিত্রতা নষ্ট না করে সেই জন্য বাজার কমিটির পক্ষ থেকে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়েছে। আর উপজেলা প্রশাসন থেকেও আমার দেখভাল করছি। আশা করছি অতি শীঘ্রই শহীদ মিনারের চারপাশে সীমানা প্রাচীর দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হবে। এর পবিত্রতা রক্ষায় সাংবাদিক থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের লোকজনদের এগিয়ে আসা দরকার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত