নিজস্ব প্রতিবেদক

০২ এপ্রিল, ২০২০ ১৯:০১

এক সপ্তাহ অভুক্ত ছিলো বানরগুলো

সিলেটের চাষনীপীর (র.)-এর মাজার

সিলেট নগরীর গোয়াইটুলা এলাকার হযরত চাষনী পীর (র.)-এর মাজারে এমনিতে প্রতিদিন দর্শনার্থী-পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। টিলার উপরের এই মাজারের গাছগাছালিতে দুইশতাধিক বানরের বাস। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘বানরের টিলা’ নামে পরিচিত। এখানে ভক্তরা আসেন মাজার দর্শনে, বানর দেখতেও আসেন অনেক পর্যটক। কলা-বিস্কিট-বনসহ বানরদের জন্য নানান খাবার নিয়ে আসেন তারা।

কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গত কয়দিন ধরে দেখা দিয়েছে বিপত্তি। ভাইরাসের বিস্তার রুখতে সারাদেশে অষোষিত লকডাউন চলছে। সব বন্ধ। চাষনী পীরের মাজারেও নেই দর্শনার্থী। ফলে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে অনেকটা অভুক্ত অবস্থায় ছিলো এখানকার বানরগুলো।

এক জীবাণুর সংক্রমণ ঠেকানোর উদ্যোগে বিপাকে পড়ে এখানকার অসংখ্য জীব। বিপাকে পড়েছে মানুষও। বিশেষত নিম্নবিত্ত-দিনমজুর মানুষেরা। তাদের পাশে তবু দাঁড়িয়েছেন সামর্থ্যবানেরা। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সারাদেশেই অসহায় মানুষদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। ব্যক্তি উদ্যোগেও সহায়তা করছেন অনেকে। কিন্তু এই বানরগুলোর ভাগ্যে জুটেনি কিছুই।

তবে বৃহস্পতিবার এগিয়ে এসেছেন কিছু পরিবেশ কর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কয়েকজন সহৃদয় ব্যক্তি। বৃহস্পতিবার বিকেলে চাষনী পীরের মাজারের বানরদের খাবার বিতরণ করেন তারা। প্রাণিপ্রেমি বিভিন্ন মানুষের অর্থ সহায়তায় এই বানরদের একমাসের খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ।

জানা যায়, চাষনী টিলার পাশেই দলদলি চা বাগান। এই বাগানেই ছিলো বানরগুলোর আদি নিবাস। আশির দশকে চা বাগানের একাংশের বন কেটে গড়ে ওঠে আবাসন। ১৯৮৪ সালের শুরুর দিকে সেখানকার বানরগুলো এসে মাজার এলাকায় বসত গড়ে। সেই থেকে ওরা এখানেই আছে। তবে গত কয়েকবছর ধরে এই টিলার আশপাশের বন ও টিলা ধংস করে গড়ে ওঠেছে আবাসন। ফলে আবার সঙ্কটে পড়ে বানরগুলো। তবে গত এক সপ্তাহের মতো সঙ্কটজনক অবস্থা আগে কখনো তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বৃহস্পতিবার এখানকার বানরদের জন্য খাবার নিয়ে যান বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির, সাংবাদিক মঈনউদ্দিন মঞ্জু, ছামির মাহমুদ, লিটন চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন।

আব্দুল করিম কিম বলেন, এই টিলা তো বানরেরই আবাসস্থল ছিলো। মানুষজন ওইদিকে গিয়ে বানরের আবাস ও খাদ্যসংগ্রহের গাছগুলো ধ্বংস করেছে। ফলে এরা খাবার ও আবাস সঙ্কটে পড়েছে। এখন পর্যটকদের দেওয়া খাবারই এদের একমাত্র ভরসা ছিলো। এখন পর্যটক না থাকায় এরা চরম বিপাকে পড়েছে। প্রায় অভূক্ত অবস্থায় আছে।

তিনি বলেন, আজকে আমরা এই বানরদের কলা ও বনরুটি প্রদান করেছি। সকল মানুষকেই নিজেদের আশপাশের প্রাণিদের সহায়তায় এগিয়ে আসা উচিত। কারণ এই সময়ে প্রাণিগুলোও সঙ্কটে রয়েছে।

এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এসএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন বন্যপ্রাণি সংরক্ষণাগারগুলোতে থাকা বন্যপ্রাণিদের মধ্যে আমরা নিয়মিত খাবার বিতরণ করি। তবে উন্মুক্ত অবস্থায় থাকা প্রাণিদের খাবার বিতরণের কোনো পরিকল্পনা এখনো আমাদের নেই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত