নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ এপ্রিল, ২০২০ ১২:৩২

সিলেটে দুই শিশুর ‘মহানুভবতা’

করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণ, দেশের কিছু কিছু জায়গায় কখনো কখনো ত্রাণের চাল আত্মসাতের খবর যখন নাগরিকদের হতাশ করেছে, তখন সিলেটের এই ছোট্ট শিশু দুটির মহানুভবতা অনেকের মনকেই নাড়া দিয়েছে। তাদের প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন নগরবাসী। সিলেটের সম্মিলিত নাট্য পরিষদ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের যৌথ উদ্যোগে চলছে ‘কলের গাড়ি’ নামের একটি সেবা। এবার তাদের চলমান এ কার্যক্রমে প্রায় দুই বছরে মাটির ব্যাংকে নিজেদের জমানো টাকা দিয়েছে নগরীর মিরাবাজার এলাকার অহনা ও টুইংকেল নামের দুই শিশু।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নগরীর রিকাবীবাজারের কবি কাজী নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়ামে সংস্কৃতিকর্মীদের হাতে তারা এ দুই ব্যাংক তুলে দেয়।

তারা হলো- সারা আশরাফী অহনা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ও হাসিন আফসারাহ টুইংকেল স্কলার্সহোমের শিবগঞ্জ শাখায় কেজির শিক্ষার্থী।

মানুষ খাদ্য সহায়তা চেয়ে ফোন দিলেই ‘কলের গাড়ি’ সেবা দিয়ে সংস্কৃতিকর্মীরা মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। আর এসব খাবার যোগান দিচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

নিজেদের জমানো ব্যাংক দান করার বিষয়ে দুই শিশু বলেন, আমরা মানুষকে সাহায্য করার জন্য এগুলো দিয়েছি। আমরা প্রায় দুই বছর থেকে এগুলো জমিয়েছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই শিশুর বাবা জানান, আসলে আমাদের বাসায় ঈদের জামা-কাপড় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তখন আমি তাদের বলেছিলাম যে এবার ঈদের জন্য নতুন জামা-কাপড় কেনা হবে না। উল্টো তোমাদের নতুন যে জামা-কাপড় আছে সেগুলো অন্যান্য শিশুদের সাথে শেয়ার করতে হবে। তখন তারা বললো তাহলে আমাদের টাকার কী হবে? তখন আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করি তোমরা কী করতে চাও? তখন তারা বললো এই টাকা মানুষকে দেয়ার জন্য। পরে আমি নাট্যকর্মীদের সাথে কথা বলে তাদেরকে সেখানে নিয়ে যাই এবং তারা নিজ হাতে তাদের ব্যাংক দিয়ে আসে।

বিজ্ঞাপন

সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, আমরা কাছে এটি একটি বড় ধরণের পাওয়া। আমরা দীর্ঘদিন থেকে যে মানবিক কাজ করছি, এটি করতে গিয়ে সরকার, ব্যবসায়ী নানাভাবে আমাদের সহযোগিতা করছেন। এ জন্য অবশ্যই আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তবে আজকে যে দুই শিশু আমাদের কার্যক্রমে তাদের সঞ্চয়ের টাকা দিয়েছে, এটা অনেক বড় প্রাপ্তি আমাদের। তাদের শৈশবের জমানো টাকা, তাদের জমানো এ ব্যাংক আমাদের দিয়ে তারা একটি উদাহরণ তৈরি করলো। তারা সমাজের সবাইকে বুঝিয়ে দিলো ইচ্ছে করলেই সবাই পারে এ কাজে অংশগ্রহণ করতে।

তিনি আরও বলেন, এই ব্যাংক দেওয়ার মাধ্যমে একটি বার্তাও তারা দিলো। তাদের সঞ্চিত টাকা দিয়ে বুঝিয়ে দিলো মানবতার কাজে নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে। তাদের এই দান গ্রহণ করে আমাদেরও ভালো লাগছে। এই যে আমরা মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি, আমাদের এ কাজটির প্রতি সবার অংশগ্রহণ আছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমদ শিশু, সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন, সাধারণ সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত