অরণ্য রণি

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৫:৫০

বিছনাকান্দিতে একদিন

অনেক দিন হয় বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় না। ফেসবুক গ্রুপে মৌলভীবাজার বন্ধুসভার বন্ধুদের অধিকাংশেরই এক কথা- ঈদের ছুটিতে আমরা যেতে চাই কোথাও। অবশেষে সবার পছন্দের ভিত্তিতে স্থান নির্ধারিত হলো বিছনাকান্দি; আর সেটা ঈদের পরদিন।

ইচ্ছা ছিল সকলেরই কিন্তু অনেকের ব্যক্তিগত কারণে যেতে পারেননি। লোকসংখ্যার ভিত্তিতে আমরা ১৪ জন নির্ধারিত হলাম। সে অনুযায়ী ঠিক করা হলো গাড়িও।

সকাল ৮ টায় গাড়ি ছাড়লো মৌলভীবাজার থেকে। আমাদের এবারের যাত্রাপথের বন্ধুরা হল- সাচী, হাদী, বাপন, জ্যোতি, পুনম, মান্না, শাওন, তাপস, সুমন, অনুপম, মৌসুমি, সিড, আমি এবং ভাইয়া(অপূর্ব সোহাগ)।



দীর্ঘ ৪ ঘণ্টার (আমার জন্য ২ ঘণ্টা) পথ পেরিয়ে আমরা পৌঁছলাম আইরকান্দি নৌকা ঘাটে। পথিমধ্যে শেরপুরে আমাদের সকালের নাস্তা শেষে বেগমপুর থেকে নেয়া হল সিডকে।

সিলেট থেকে ওরা নিল আমাকে। যথারীতি রাস্তায় আড্ডা, গান, কথার ঝুরিতে সিলেট পেরিয়ে আমরা গোয়াইনঘাটের ভাঙা সড়কের পথে। পেছনে যারা বসেছিলেন তাদের একটু বেশিই কষ্ট হয়েছিলো বৈকি। তাদের কষ্টে সমবেদনা জানিয়ে সামনে ড্রাইভারের পাশের ২ জনকে ফেরার সময় পেছনে পাঠিয়ে দেয়া হয়। হাজার হোক বন্ধু তো, বন্ধুদের সুখ যেমন ভাগাভাগি করা যায়, তেমনি কষ্টটাও!



কিন্তু বিছনাকান্দির অপার সৌন্দর্য দেখে তাদের সকল কষ্ট নিমেষেই তারা ভুলে যায়। স্থানীয় পরিচিত লোকজনের সহযোগিতায় ঘাটে এসেই আমরা নৌকা পেয়ে যাই। আমাদের জন্য তিনি আগের দিনই নৌকা বুকিং দিয়ে রেখেছেন। আমাদের নৌকাটি ছিল ঘাটের সবচেয়ে বড় নৌকা। শুনেছি, ওই নৌকা নেয়ার জন্য সকাল থেকে নৌকার মালিকের সাথে ঝগড়া হয়েছে পর্যটকদের ৩ বার।

চিপস-চানাচুর নিয়ে আমরা উঠে পড়লাম নৌকাতে। নৌকায় ওঠার পর শুরু হল আমাদের ফটোসেশনের পালা। সবাই নদীর আশেপাশের সৌন্দর্য দেখে যারপরনাই মুগ্ধ। কাউকে দেখলাম নদীর মাঝে নৌকা নিয়ে শুয়ে আছে। একদল প্রাণোচ্ছল শিশুরা নদীতে নৌকা থেকে ঝাপ দিয়ে সাতার কাটছে। এতে কি যে আনন্দ ওদের না দেখলে বোঝানো যাবে না।

কিছুদূর যাওয়ার পর দেখা যায় ঐ দূরে মেঘ-পাহাড়ের মিতে। যা দেখে আমাদের সবারই চোখ জুড়িয়ে যায়। পাহাড়গুলো যেন আমাদের হাতছানি দিতে ডাকছে।

দেড় ঘণ্টা ইঞ্জিনের নৌকা ভ্রমণের পর আমরা পৌঁছলাম বিছনাকান্দি পর্যটন স্পটে। সেখানে ঘাটে শ খানেক নৌকো বাধা। আমাদের মত অনেকেই এসেছেন ঈদের ছুটিতে বেড়াতে।

এ যেন খানিকটা সেই পুরনো জাফলং। এখন অবশ্য জাফলংয়ের সেই জৌলুশ নেই। এর খানিকটা যেন সে বিছনাকান্দিকে দিয়ে দিয়েছে। যতদূর মনে পড়ছে ৯০ এর দশকের শেষের দিকে গিয়ে এরকমই কিছুটা দেখেছিলাম জাফলংয়ে।

আমাদের একটু বেশিই খিদে পেয়েছছিল বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম দুপুরের খাবার খেয়েই পানিতে নামবো।

খাবারেরও সুবিধা আছে মূল স্পটে। খাবার হোটেলগুলোও দেখার মত। ১টির নাম জলপরী ভাসমান রেস্টুরেন্ট আরেকটি বি,কে ঝর্ণা রেস্টুরেন্ট। ঝর্ণা রেস্টুরেন্টেই দুপুরের খাবার সেরে পাথর আর বালু ডিঙিয়ে  আমরা নেমে পড়লাম পানিতে। ঘণ্টা খানেক পানিতে হৈ হুল্লোড় করলাম সবাই। সবচেয়ে বেশি উপভোগ করছিল মান্না, হাদী, অনুপম আর বাপন।

ঐ দূর পাহাড়ের ঝর্ণা থেকে বয়ে আসা পানি বেশ ঠাণ্ডা ছিল। আমার বেশ কষ্ট হচ্ছিল খালি পায়ে হাটতে। তার উপর পানিতে শেওলা জমে পাথরগুলো পুরাই পিচ্ছিল ছিলো।


এই পিচ্ছিলতার কারণে বাপনের পায়ের নখ প্রায় উঠে যায়। সাথে আমি, ভাইয়াও নখে ব্যথা পাই। আর সুমনের পায়ে তো কাচের টুকরা ঢুকে কেটেই গিয়েছে।

বেলা তখন শেষের দিকে। ফেরার পথে স্থানীয় ভাসমান বাজার থেকে চকলেট, বিস্কিট ইত্যাদি কিনলাম। সময় স্বল্পতার জন্য পাংতুমাই আর যাওয়া হল না।

ফেরার পথে মনটা যেমন কেমন কেমন করছিল। কিছু একটা যেন ফেলে যাচ্ছি মনে হচ্ছিল। থাকার কোন ব্যবস্থা নাই। থাকলে হয়তো বা আমরা সেদিন থেকেই যেতাম। ফিরতি নৌকায় সবার মধ্যে একটা ক্লান্তির ছাপ চলে এসেছিল। ফেরার পথে পেছন ফিরে তাকাতেই দেখলাম যে পাহাড়গুলো দূর থেকে স্বাগতম জানিয়েছিল তারাই  এখন বিদায় জানাচ্ছে আমাদের। ঠিক সন্ধ্যায় ঘাটে পৌঁছলাম। ৭ টায় আমাদের গাড়ি ছাড়লো। সিলেট পৌঁছলাম ৯ টায়। আমাকে নামিয়ে দিয়ে বন্ধুরা মৌলভীবাজারের পথে। পথিমধ্যে সিডও নেমে যাবে শেরপুর।