ইসতিয়াক হোসেন

১৮ এপ্রিল, ২০১৭ ১৪:০৪

নারীদের জন্য বাংলাদেশ ভ্রমণ : প্রয়োজনীয় তথ্য

আজ থেকে দশ বছর আগে বাংলাদেশে নারীর একক ভ্রমণের কথা কেউ ভাবতেই পারতো না, এমনকি নারী নিজেও না। কিন্তু দেশ ডিজিটালকরণ এবং পরিকাঠামোর ব্যাপক উন্নতির সাথে অধিক যোগাযোগ ব্যবস্থা মিলিত হওয়ায় বাংলাদেশে একক ভ্রমণ এখন অবাস্তব কিছু নয়।

একজন পর্যটক ফারহাত জান্নাত, যার ভ্রমণপিপাসা তাকে অনেক স্থানে নিয়ে গিয়েছে, তিনি বলেন, একা বা দলীয় ভ্রমণ বাংলাদেশে এখন খুবই সাধারণ ঘটনা। পর্যটকদের একটা বড় অংশ হলো নারী, যারা নতুন নতুন স্থান পরিদর্শন করতে চান। একক ভ্রমণ আপনার জন্য নতুন পন্থা উন্মোচন করে এবং আপনি স্বাধীনতার এক অসাধারণ অনুভূতি লাভ করেন।

তিনি আরও বলেন, একক ভ্রমণ আমার জীবনের সবচেয়ে ভাল মুহূর্ত। নিজের খেয়াল রাখতে পারার চেয়ে বড় আর কিছু হতে পারে না। আর সবকিছু নিজের মত করে করা যায়।

শুরু করতে হলে, প্রথমেই রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় অবকাশযাপন স্থান কক্সবাজার। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, কম খরচের হোটেল থেকে শুরু করে বিলাস বহুল রিসোর্ট- কি নেই সেখানে! শ্বেত-শুভ্র বালি আর বঙ্গোপসাগরের আলিঙ্গন পোড়া চোখের জন্য প্রশান্তির দৃশ্য বটে। আপনি যদি রাতের বেলা সমুদ্রের পাশে হেঁটে বেড়াতে পছন্দ করেন এবং বার-বি-কিউ করতে ভালবাসেন, তবে নিঃসন্দেহে কক্সবাজার আপনার জন্য দারুণ একটি স্থান। আর আপনি যদি রোমাঞ্চকর কিছু করতে চান এবং চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত থাকেন, তাহলে ৪০০ টাকার মত অতি সামান্য মূল্যে আপনি সার্ফিং শিখতে পারেন।



এক টুকরো কক্সবাজারকে নিজের সাথে করে বাড়ি নিতে চান? স্থানীয় হোটেল মোটেলগুলোতে টি-শার্ট থেকে শুরু করে চাবির রিং পর্যন্ত বিভিন্ন রকম স্মারক পাওয়া যায়। নিকটস্থ বার্মিজ মার্কেটগুলোতে বার্মিজ রূপচর্চার সামগ্রী থেকে শুরু করে গৃহস্থালি সামগ্রী, যেমন হাতের তৈরি বিছানার চাদর এবং গামছা পাওয়া যায়।

কক্সবাজার বিভিন্নভাবে যাওয়া যায়। স্বদেশী অভ্যন্তরীণ বিমানে গেলে আপনাকে ৩৫০০ টাকা গুনতে হবে। এছাড়া হাইওয়েতে বাস যাত্রা করেও মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে যেতে পারেন। নিজস্ব গাড়িতেও চাইলে কেউ কেউ যেতে পারেন।

জীবনের এক পর্যায়ে, সবকিছু থেকে দূরে গিয়ে আমরা স্বর্গের নিরাপদ আবাসের অন্তরদর্শনের জন্য কিছুটা সময় বের করে থাকি। বান্দরবানের নিলাচল পৃথিবীর বুকে এমনই এক নিরাপদ স্বর্গ, যার চারদিক পাহাড়ে ঘেরা। গোধূলি লগ্নে যখন সূর্য পাহাড়ের পেছনে হারিয়ে যায়, তাকিয়ে থাকার মত একটি দৃশ্যের আবির্ভাব হয়।

ঢাকা থেকে নিলাচলে যেতে ৬ ঘন্টার বাস ভ্রমণের জন্য ব্যয় হবে মাত্র ৫৫০ টাকা, যা আপনার একান্ত প্রতিফলন পর্যবেক্ষণের জন্য অবকাশ দিবে। কিন্তু এই মাদকতায় ভরা সবুজ দেখতে যদি আপনি অপেক্ষা না করতে চান, তাহলে ঢাকা থেকে কম খরচে বিমান ভ্রমণও সহজলভ্য।

বান্দরবানে কেনাকাটার সুযোগ রয়েছে বিশেষ করে ফারুকপাড়ায়, যেখানে বমদের হাতের তৈরি ঝুরি ও বাঁশি কিনতে আপনাকে রীতিমত দরাদরির প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। আপনি যদি নাপ্পির মত স্থানীয় মজাদার কিছু চেখে দেখতে চান, তাহলে আর কোথাও না গিয়ে মারমা বাজারে চলে যান, যেখানে পাহাড়ের তৈরি একদম টাটকাটিই পাবেন।

বাংলাদেশের স্বর্ণ অতীতের কিছু অংশ এখনও বিদ্যমান আছে। সেইসব স্থান পরিদর্শনে ছোটখাটো ভ্রমণের জন্য সোনারগাঁ একটি আদর্শ স্থান। ঢাকা থেকে মাত্র ৯.১ কিলোমিটার দূরে, পূর্বের প্রশাসনিক কেন্দ্র সোনারগাঁ বর্তমানে লোকশিল্প এবং হস্তশিল্পের যাদুঘর। এই সোনার নগরীতে ঘুরতে গেলে আপনি নৌকা ভ্রমণ এবং যাদুঘরের লেকে মাছ ধরার সুযোগও পাবেন। মাত্র ১০ মিনিটের দূরত্বে নৃতত্ত্বের অপার সৌন্দর্যের স্থান পানাম নগর অবস্থিত। ঢাকার গুলিস্থান থেকে বাসে উঠে বসলেই আপনি অতীতে ভ্রমণ করে সোনারগাঁ ও পানাম নগরে একবার ঘুরে আসার সুযোগ পাবেন।

ইতিহাস পরিদর্শনের জন্য বগুড়ার মহাস্থান গড় একটি যথার্থ স্বর্গোদ্যান। এটি ৩য় শতকের প্রাচীন পুন্ড্রনগরের রাজধানীর ব্যাপক ধ্বংসাবশেষ। সম্পূর্ণ সমীক্ষা এবং পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে মহাস্থান গড়ের অনেক তথ্য উন্মুক্ত হয়েছে, কিন্তু এই নৃতাত্ত্বিক স্থান আরো অনেক গোপন তথ্য ধারণ করে আছে। বগুড়ার প্রধান শহর থেকে ৭ মাইল দূরে, প্রবাহিত নদীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এই স্থানটি ইন্সটাগ্রামের জন্য যথার্থ প্যানেরোমা দৃশ্য।

বগুড়ার মোহাম্মদ আলী পার্ক এবং যাদুঘরের ধবংসাবশেষ এই দেশের সুসজ্জিত রাজবাড়িগুলোর মধ্যে একটি। ইতিহাস দেখে যদি আপনার মন ভরে থাকে, তো পেটের ক্ষুধা মিটাতে বগুড়ার মিষ্টি দই চেখে দেখতে পারেন স্থানীয় মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে। বগুড়া বিমানে, বাসে এবং নিজস্ব গাড়িতে সহজগম্য।

অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে আহসান মঞ্জিল, যা তৎকালীন নওয়াবদের বাসস্থান ছিল। স্থাপত্যকলাপ্রেমী মানুষদের জন্য এটি যথার্থ স্থান। একবার এই ভবনের প্রত্যেক ইঞ্চি পর্যবেক্ষণ করা হয়ে গেলে, আপনি বুড়িগঙ্গার পানিতে নৌকা ভ্রমণও করতে পারেন। উবার এর মত যানবাহন সেবার দরুণ ঢাকায় ঝটিকা অভিযান আগের চেয়ে এখন অনেক সহজ। এই শহরের যেকোনো প্রান্তে ভ্রমণ এখন আপনার নখদর্পণে।

ভ্রমণ পরামর্শ

বড় শহরগুলোতে সুপার মার্কেটগুলো গড়ে ওঠায় জরুরি অবস্থায় প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনা কোনও ব্যাপারই না। আশার কথা এই যে, স্থানীয় পণ্যের পাশাপাশি আমদানীকৃত পণ্যও এখন বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে। তাই যদি ভ্রমণের মাঝে তুলার পট্টির দরকার হয়, চিন্তার কোনো কারণ নেই।

ফারহাত জান্নাত পরামর্শ দেন, নির্দিষ্ট স্থানের জন্য গোছগাছ করুন। শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বহন করলে ভ্রমণ সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক হবে।

বাংলাদেশে ভ্রমণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ক্রয়ক্ষমতা। আপনি যদি সীমিত বাজেটের অধিকারী হন, কলেজের সেমিস্টার বাদ দেওয়া ছাত্র কিংবা সম্প্রতি অবসর নেওয়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক হন, সব স্তরের মানুষকে দেওয়ার মত বাংলাদেশের কাছে কিছু না কিছু আছে। এখন অনলাইনে হোটেল এবং ভ্রমণ উপদেষ্টা পাওয়া যায় খুব সহজেই।

ভ্রমণ সহযোগিতার জন্যে জোভাগো'র ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন।

  • লেখক: হেড অব পাবলিক রিলেশন, জোভাগো বাংলাদেশ

আপনার মন্তব্য

আলোচিত