আজিজুল ইসলাম বারী, লালমনিরহাট থেকে

০১ জুলাই, ২০১৬ ২২:২৬

মহাসড়ক যেনো এক মরণ ফাঁদ, ঝুঁকি নিয়ে চলছে যান

লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক

খানাখন্দকে বেহাল দশা বড়বাড়ি-লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর জাতীয় মহাসড়কটির। এ সড়কের কয়েকটি স্থানে সংস্কার কাজ সম্পন্ন হলেও বেশিরভাগ এলাকা এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। এই অবস্থাতেই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে আন্তর্জাতিক পাসপোর্টধারী যাত্রীবাহী বাস, পাটগ্রাম-লালমনিরহাট-রংপুর লোকাল যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকসহ ছোট-বড় যানবাহন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ মহাসড়কে প্রতিদিন অসংখ্য বাস, ট্রাক, ইজিবাইক, মাহিন্দ্র, মাইক্রোবাস, কার, জিপ, অ্যাম্বুলেন্স, ট্রাক্টর, লেগুনা, রিক্সা, থ্রি-হুইলার, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল চলাচল করে থাকে। এসব পরিবহনে কমপক্ষে ৬/৭ লাখ লোককে প্রতিদিন একস্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করতে হয়। লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, বড়বাড়ি-লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর পর্যন্ত ১০৫ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। কয়েকটি ধাপে মহাসড়কের সংস্কার কাজ শুরু করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বর্ষা মৌসুমের অজুহাতে ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছেন। ফলে বৃষ্টির কারণে মহাসড়কটিতে খাল-খন্দকে চরম দুরবস্থা দেখা দিয়েছে।

কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতিয়ার রহমান অভিযোগ করে বলেন, থানার প্রবেশ মুখে ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রতিদিনই দুর্ঘটনায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ ও পুলিশ সদস্যরা।

তিনি আরও বলেন, জেলা মাসিক আইন-শৃঙ্খলা ও উন্নয়ন সমন্বয় সভায় মহাসড়কের বেহাল দশা নিয়ে আলোচনা হলেও কোনও অগ্রগতি নেই।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় অধিবাসী মিজানুর রহমান, হায়দার আলী ও ফরহাদ আলম।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বুড়িমারী স্থলবন্দর জিরোপয়েন্ট থেকে পাটগ্রাম পৌরসভার কবরস্থান পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার মহাসড়ক ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয়। পাবনার মেসার্স ধ্রুব কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রথম দফায় ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সংস্কার শুরু করে কাজটি শেষ করে ২৫ আগস্ট। দ্বিতীয় দফায় ঢাকার মনিকো লিমিটেড নামের আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাটগ্রামের কবরস্থান বাজার থেকে কালীগঞ্জের ভোটমারী পর্যন্ত সাড়ে ৩৭ কিলোমিটার বড়বাড়ি-লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের সংস্কার কাজ পায়। ১৫ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয়ে গত বছরের ১৭ নভেম্বর এর সংস্কার কাজ শুরু করে চলতি বছরের ১৫ মে শেষ করে।

তৃতীয় দফায় কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী থেকে তিন কিলোমিটার বাদ দিয়ে শ্রুতিধর নামক স্থান থেকে আদিতমারী উপজেলার নামুড়ী বাজার পর্যন্ত বিশ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার এবং নামুড়ী বাজার থেকে সাপ্টিবাড়ী পর্যন্ত নয় দশমিক পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত বাদ দিয়ে সাপ্টিবাড়ী বাজার থেকে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর বাজার পর্যন্ত দশ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার মিলে মোট একত্রিশ কিলোমিটার মহাসড়কের সংস্কার কাজ পায় ‘মেসার্স কামাল অ্যাসোসিয়েট’।

চলতি বছরের ১১ মে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার কাজ শুরু করার কথা থাকলেও বৃষ্টির অজুহাতে এখনও কাজ শুরু করেনি তারা। অথচ চলতি বছরের ১০ নভেম্বর তাদের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। বর্তমানে ১০৫ কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে সাড়ে ৫৪ কিলোমিটার সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। এখনও ৫১ কিলোমিটার মহাসড়ক সংস্কার করা হয়নি। ফলে এ মহাসড়কের ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার চালক যানবাহন নিয়ে চলাচল করছেন। বিশেষ করে বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক পাসপোর্টধারী যাত্রীবাহী চেয়ার কোচ বাস, পাটগ্রাম-লালমনিরহাট-রংপুর আঞ্চলিক যাত্রীবাহী বাস ও স্থলবন্দর থেকে আন্তর্জাতিকভাবে আমদানি-রফতানির পণ্যবাহী ট্রাক চালকরা মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। এসব গাড়ি প্রায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।

বুড়িমারী-ঢাকাগামী রোজিনা পরিবহনের চালক আব্দুল মান্নান বলেন, দেশি-বিদেশি যাত্রীদের জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে বড়বাড়ি-লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর পর্যন্ত বড় বড় গর্তের ওপর দিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা মহাসড়কটির। এখন তো বর্ষা শুরু হয়েছে। ফলে এ সড়ক দিয়ে চলাচল আরও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তিনি মহাসড়কটির সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানান।

অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল হালিম বড়বাড়ি-লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর জাতীয় মহাসড়কের বেহাল দশার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সময় মতো বরাদ্দ না পাওয়ায় মহাসড়কটির সংস্কার কাজ শুরু করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫৪ দশমিক ৫ শতাংশ সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। তৃতীয় ধাপে আরও ৩১ কিলোমিটার সংস্কার কাজের ওয়ার্ক অর্ডার প্রদান করা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে ঠিকাদার কাজ করতে পারছে না। অবশিষ্ট ২০ কিলোমিটার সংস্কার কাজের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, জেলার মাসিক উন্নয়ন সভায় মহাসড়কটি সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়ার পরও সওজের কর্মকর্তাদের অগ্রগতি লক্ষণীয় নয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত