সিলেটটুডে ডেস্ক

১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১২:১৩

পথ শিশুদের সাথে ঈদ আনন্দ

আসছে ঈদ-উল-আযহা। এই উপলক্ষে কুরবানির জন্য প্রচুর টাকা খরচ করে পশু কেনা তো আছেই, সেই সাথে নতুন জামাকাপড়, প্রসাধনী আরো নানারকম কেনাকাটাও চলছে। বিশেষ করে পরিবারের শিশুদের জন্য বাড়তি কেনাকাটা তো থাকেই।

কিন্তু উৎসব ঘিরে এতো সব আতিশয্যের ভিড়ে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে মানবিকতা। আপনার সন্তান কিংবা পরিবারের ছোট সদস্যটির বয়সীই অন্য একটি শিশু যারা পরিবারের টাকা খরচ করে দামী পোশাক কেনার সামর্থ্য নেই, একমুঠো মাংসের জন্য যারা দাঁড়িয়ে থাকে আপনাদের দরজায় সেসব শিশুদের কথা কজনেই বা ভাবে? যারা ভাবেন তাদেরই কয়েকজন অরণ্য, শুভ্রা, রাসএল ও তাদের বন্ধুরা।

ঈদের আগে বা ঈদের দিন অসহায় পথশিশু ও দুস্থ মানুষদের জন্য অনেকেই অনেক ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বিগত কয়েকবছর ধরে তেমনই একটি আয়োজন করে আসছেন এই তরুণেরা। ঈদের দিনে সবাই যখন ব্যস্ত থাকেন পরিবার ও বন্ধুদের সাথে ঈদের আনন্দ উদযাপনে, তখন ঢাকার বস্তি থেকে বস্তিতে ঘুরে বেড়ান তারা। ঘুরে ঘুরে সুবিধাবঞ্চিত ও ঈদের আনন্দবঞ্চিত ২ থেকে ১২ বছরের শিশুদের নতুন পোশাক আর ঈদের সালামী বাবদ নতুন চকচকে নোট বিতরণ করেন তারা। শিশুদেরকে নিজ হাতে নতুন পোশাক পরিয়ে দেয়ার মাঝেই তারা খুঁজে নেন তাদের ঈদের আনন্দ।

এই আয়োজনের উদ্যোক্তাদের একজন প্রকৌশলী ও সাংবাদিক শুভ্রা কর বলেন, ‘পথশিশুদের জীবনযাপন আমাকে সবসময়ই খুব দুঃখিত ও আন্দোলিত করে। তাদের জন্য কিছু করার ইচ্ছে অনেক আগে থেকেই। ছাত্রজীবনে এরকম স্কুল ও সরকারি শিশু পরিবারে পড়িয়েছি। এখন জীবিকার ব্যস্ততায় সেসব হয়ে উঠে না। তাই নিজেদের সামর্থ্যের মধ্যে অন্তত উৎসবের দিনগুলোতে এই শিশুদের একটু ভালো রাখার চিন্তা থেকেই এই প্রচেষ্টা। ভবিষ্যতে এই উদ্যোগকে আরো বিস্তৃত পর্যায়ে নেয়ার ইচ্ছে আছে আমাদের’।

উদ্যোক্তাদের আরেকজন সাংবাদিক সাকিল অরণ্য বলেন, ‘আসলে ঈদের দিন আমাদের বাসায় যারা সাহায্যর জন্য আসে তাদেরকে দেখেই আমাদের মনে হয়েছে ঈদ বুঝি সবার জন্য সমান অর্থবহ হচ্ছে না বা ঈদের আনন্দ বুঝি সবার কাছে পৌঁছাচ্ছে না। সেই ভাবনা থেকেই আমরা কয়েকজন গত চার বছর ধরে ঈদের দিন বস্তিতে গিয়ে ঈদের আনন্দবঞ্চিত শিশুদেরকে খুঁজে বের করে তাদের কাছে ঈদের আনন্দ পৌঁছে দিতে আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করি’।

এদেরই আরেকজন শাহাদাত রাসএল বলেন, ‘আসলে ঈদ মানে তো আনন্দ। তো সেই আনন্দ তো আর একা একা হয় না। সবাই মিলে ভালো থাকলেই ঈদের আনন্দ যথার্থ হয়। তাই সবার মাঝে ঈদ আনন্দ ছড়িয়ে দিতেই আমরা এটা করি। আর এতেই আমরা আনন্দ খুঁজে পাই’।

তবে উদ্যোক্তারা জানান, এই কার্যক্রমের জন্য কারো কাছ থেকে কোন রকম চাঁদা বা ডোনেশন গ্রহণ করেন না তারা। যে কেউ নিজ নিজ সাধ্যমত শিশুদের পোশাক কিনে সেই উপহার নিয়ে ঈদের দিন যুক্ত হতে পারেন তাদের সাথে। তারপর সবাই মিলে ঘুরে ঘুরে শিশুদেরকে উপহার বিতরণ করেন তারা। তবে একান্তই কেউ উপস্থিত হতে না পারলে সে ক্ষেত্রে কেউ পোশাক কিনে পৌঁছে দিতে পারেন তাদের কাছে।

আগ্রহীদের সাথে যোগাযোগের জন্য প্রতিবছরের মতো ফেসবুকে একটি ইভেন্ট খোলা হয়েছে। (ইভেন্ট লিংক: https://www.facebook.com/events/1844868742411208/) বরাবরের মতো এবারো দরিদ্র পথশিশুদের কাছে ঈদের আনন্দ পৌঁছে দিতে ঈদের দিন সকাল ১০টায় শাহবাগ থেকে শুরু করে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। যারা এই কার্যক্রমের পাশে থাকতে আগ্রহী তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এই কার্যক্রমে সংশ্লিষ্টরা।

কেউ পোশাক কিনে পাঠিয়েও দিতে পারেন এই ঠিকানায়: সাহস ১০৮, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ২য় তলা, ঢাকা। যোগাযোগ: ০১৬৭৯০৯১৩৩৪, ০১৭৩৬৭২৭৫৯৫, ০২৯৬৭৬২৯২

সমাজের বিত্তবান সকলে অর্থের আতিশয্যের মাঝে নয় বরং এই দরিদ্র শিশুদের মুখে হাসি ফুটিয়ে ঈদের পরিপূর্ণ আনন্দ খোঁজার চেষ্টা করবে এমনটাই আশা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত