জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ থেকে

১৮ অক্টোবর, ২০১৬ ২২:০৩

তুহিন রেজার ভাগ্য এখন হুইল চেয়ারে, দেখার কেউ নেই

মালয়েশিয়ায় দীর্ঘদিন নির্যাতিত ঝিনাইদহের তুহিন রেজার শেষ সম্বল এখন হুইল চেয়ার।

তুহিন রেজা বলেন, আমার জীবনের এখন কোন মূল্য নেই। কিছু মানুষরূপী পশু আমাকে পঙ্গু করে দিয়েছে এখন আমার ভাগ্য ও শেষ সম্বল হুইল চেয়ার। বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর আমার প্রতিবেশী ছাড়া আর কেউ আমাকে দেখতে আসেনি।

তিনি আরো বলেন আমার এই নির্মম নির্যাতনের পরেও নির্যাতিতদের কোন বিচার এখনো পর্যন্ত হয়নি। এখনো তারা এই পৃথিবীর বুকে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর আমি হুইল চেয়ারে।

তুহিন রেজার মা রোকেয়া খাতুন বলেন, মুক্তিপণের জন্য মালয়েশিয়ায় আটকে রেখে নির্যাতিত অবস্থায় আমার ছেলে তুহিন রেজা গত ৩০ আগস্ট মঙ্গলবার দেশে ফিরেছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে নিজেদের খরচে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়। দেশে ফিরিয়ে আনার পরে ৩১ আগস্ট বুধবার তাকে ঝিনাইদহে সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

তিনি আরো বলেন মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ছেলে তুহিন রেজার দুই পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সে এখন হাটতেও পারছে না। দালালরা বলেছিলো মালয়েশিয়া থেকে আনা ও চিকিৎসার সব খরচ তারা বহন করবে। কিন্তু তারা উঁকি মেরেও দেখছেনা।

মধুহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জুয়েলের মধ্যস্থতায় দুই সপ্তার মধ্যে তুহিন রেজাকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও বিদেশে যাওয়ার খরচ দেওয়ার সমঝোতা হয়। কিন্তু দালালরা এখন কোন খোঁজখবরও নিচ্ছে না।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে লিবিয়া যাওয়ার জন্য এলাকার দালাল মহামায়া গ্রামের মধু, আসাদ, বেজিমারা গ্রামের মাহফুজুর রহমান ওরফে পল্টু ও তোরাব আলির কাছে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করে তুহিন। কিন্তু ৫ বছরের ভিতরে দালালরা লিবিয়ার ভিসা না দিতে পারায়, পরে মালয়েশিয়া জাওয়ার জন্য আরো ৪ লাখ টাকা পরিশোধ করে বলে সাংবাদিককে জানিয়েছেন তুহিন রেজার মা।

৫ বছর ধরে ঘোরানোর পর দালালরা জানান, লিবিয়ার অবস্থা ভাল নয়। সাড়ে ৪ লাখ টাকা হলে ইরাক বা কাতারে পাঠানো হবে। এরপর ফ্লাইটের নামে তুহিনকে দফায় দফায় ১৬ বার ঢাকায় নিয়ে রাখা হয়।

সর্বশেষ একই খরচে তুহিনকে ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে দেয়। মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর দালালচক্র তুহিনকে আটক রেখে পরিবারের কাছে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। দাবীকৃত টাকা না পেয়ে তুহিনকে দফায় দফায় নির্যাতন করে।

কোন উপায়ন্তর না পেয়ে তুহিনের দরিদ্র বাবা গরু ও মাঠের জমি বিক্রি করে দেড় লাখ টাকা পরিশোধ করেন।

এরপর তুহিনের নিকট আরো দশ হাজার টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে না পারাই ৩ তলা বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে হত্যার চেষ্টাও করা হয়। এতে তুহিনের দুই পা ভেঙে যায়।

দেশে ফিরে পঙ্গু তুহিন রেজা জানান, তার উপর যে নির্যাতন করেছে তাদের বিচার চান তিনি। তুহিন আরো বলেন, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন আমার মা ঝিনাইদহ সদর থানায় মামলা করতে গেলে ওসি হরেন্দ্রনাথ সরকার ৩ লাখ টাকায় মীমাংসা করেন।

পরবর্তীতে মধুহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জুয়েলের নিকট মহামায়া গ্রামের দালাল মধু তুহিন রেজার চিকিৎসা বাবদ পঞ্চাশ হাজার টাকা জমা দেয়। কিন্তু তুহিন রেজা জানাই চেয়ারম্যানের কাছে বারবার বলা সত্ত্বেও চেয়ারম্যান আমার কোন টাকা পয়সা দেয়নি।

এ ব্যাপারে মধুহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জুয়েলের সাথে কথা বললে তিনি সাংবাদিককে বলেন, আমার কাছে জমা রাখা পঞ্চাশ হাজার টাকা গতকাল তুহিন রেজাকে দিয়েছি। বাকি টাকা পনের দিনের মধ্যে দিয়ে দেব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত