সিলেটটুডে ডেস্ক

০২ অক্টোবর, ২০১৭ ১১:২০

কমরেড জসিম উদ্দিন মণ্ডল আর নেই

উপমহাদেশের প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সংগঠক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রবীণ নেতা কমরেড জসিম উদ্দিন মণ্ডল (৯৭) আর নেই।

সোমবার (২ অক্টোবর) সকাল ৬টায় ঢাকার পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের বিপ্লবী এই নেতা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছেন সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন।

অনিরুদ্ধ দাশ বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন, পাশাপাশি ছিল নিউমোনিয়াও।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর জসিমউদ্দিন মণ্ডলকে রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় রোববার বিকালে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়।

ব্যক্তিজীবনে এক ছেলে ও পাঁচ মেয়ের বাবা কমরেড জসিম উদ্দিন মণ্ডল। ছেলে বছর দেড়েক আগে মারা গেছেন। পাঁচ মেয়ের মধ্যে তিনজনের স্বামীই মৃত। ছোট মেয়ে আলো মণ্ডল কুষ্টিয়ায় বিয়ের বছর দেড়েক পর ১৯৮৬ সালে স্বামী মারা গেলে বাবার বাড়িতেই বসবাস করতেন। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি জসিম মণ্ডলের স্ত্রী জাহানারা খাতুন মারা যান।

এদিকে বিপ্লবী জসিম উদ্দিন মণ্ডলের মৃত্যুতে সিপিবিসহ কমিউনিস্ট ও বামপন্থী রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ কমরেড জসিম মণ্ডলের পরিবারের শোকসন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

সিপিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, জসিম উদ্দিন মণ্ডলের মরদেহ আজ বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় তাঁর মরদেহ রাজধানীর পুরানা পল্টনের সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেওয়া হবে। পরে সেখান থেকে বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে।

সারা দেশের পার্টি সদস্য ও বিপ্লবী জসিম মণ্ডলের সুহৃদদের শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচিতে অংশ নিতে সিপিবির পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

পরদিন অর্থাৎ বুধবার সকাল ৯টায় ঈশ্বরদীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জসিম উদ্দিন মণ্ডলের দ্বিতীয় জানাজা শেষে কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।

কমরেড জসিম উদ্দিন মণ্ডল ১৯২২ সালে নদিয়া জেলা (বর্তমান কুষ্টিয়া) দৌলতপুর থানাধীন খালিদাসপুর গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। রাজনীতির হাতেখড়ি কলকাতায়। ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানসহ স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এরশাদের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। তিনি প্রায় ২৩ বছর জেল খেটেছেন। ১৯৪০ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন।

জসিম উদ্দিন মণ্ডলের বাবা মরহুম হাউস উদ্দিন মণ্ডল রেলওয়েতে চাকরি করতেন। সে সুবাদে বাংলাদেশ-ভারতসহ বিভিন্ন এলাকায় তাঁর শৈশব-কৈশোর কেটেছে।  বাবার চাকরির সুবাদে ঈশ্বরদীর একটি বিদ্যালয়ে স্কুলজীবন শুরু হয় জসিম মণ্ডলের। পরে তাঁর বাবা বদলি হয়ে শিয়ালদহে চলে যান। শিয়ালদহে গিয়ে আর পড়ালেখা হয়নি তাঁর। সেখানকার নারিকেলডাঙ্গা রেল কলোনিতে বসবাসের সময় মিছিল-মিটিং দেখতে দেখতেই রাজনৈতিক দীক্ষা গ্রহণ করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত