সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

২৯ মার্চ, ২০২০ ১৯:০৪

করোনা প্রতিরোধে সরকারের কাছে ড. জহিরুলের দুই প্রস্তাব

সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস ( কোভিড-১৯) প্রতিরোধে সরকারের কাছে দুইটি প্রস্তাব রেখেছেন বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ জহিরুল আলম সিদ্দিকী।

তিনি ফেসবুক এক পোস্টে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশের গভেষক ও ভ্যাকসিন ডেভেলাপমেন্টের বা ইনফেকশাস ডিজিজ নির্ণয়ের সরাসরি অভিজ্ঞতা আছে এমন লোকদের কাজে লাগানো প্রস্তাব দিয়েছেন।

তিনি ফেইসবুকে লিখেন, বাংলাদেশ খুব ভাগ্যবতী কারণ তাঁকে বুকে ধারণ করে অনেক তরুণ তাঁর জন্য কিছু করতে চায় - সরকারের উচিত এদের অভিজ্ঞতাকে দেশের এই দুর্দিনে কাজে লাগানো। কয়েকটি কথা বলি - ভেবেছিলাম বলবো না। কিন্তু বাংলাদেশের কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতা কেমন হবে তা ভাবলে চোখে অন্ধকার দেখি, তাই এই অযাচিত কথাগুলো বলা। আমার মা বাবা দুইজনেই বৃদ্ধ। তাঁদের ইমিউনো সিস্টেম কোভিড-১৯কে প্রতিহত করতে পারবে বলে মনে হয় না।  ষোল কোটি মানুষের দেশে আমার মা বাবার বয়সী যারা আছেন শুধু তাঁদের কথা চিন্তা করলেই শরীর অবশ হয়ে আসে। আরও কিছু কথা হলো কোভিড-১৯ শুধু বৃদ্ধদের নয় যেকোন বয়সের মানুষের ইমিউনো সিস্টেমকে কাবু করে দিতে পারে (এবং দিচ্ছে)। আর যারা বলেন যে গরম এবং হাই হিউমিডিটিতে কোভিড-১৯ বাড়তে পারে না বা ইনফেকশান ছড়াতে পারে না- তাদের বলি, এই সব বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না।

তিনি তার প্রস্তাবগুলো তুলে ধরে লেখেন, বাংলাদেশের অনেক গবেষক এবং ফ্রন্ট লাইনের মেডিকেল প্রফেশনাল আছেন যারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভাইরাস নিয়ে অনেক উঁচু মানের গবেষণা করছেন। কোভিড-১৯ আগের যত বড়ভাই এসেছিলো- যেমন সার্স, ইবোলা, সোয়াইন ফ্লু (এইচ-১ এন-১) ইত্যাদি নিয়ে এঁদের ডাইরেক্ট অভিজ্ঞতা আছে। অনেকেই বিভিন্ন ভাইরাসের প্রতিষেধক উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও সরাসরি জড়িত ছিলেন বা আছেন। আমি এখানে কারও নাম উল্লেখ করছি না। এতো দিনতো বাংলাদেশ সরকার গবেষণায় তেমন কিছুই বিনিয়োগ করেনি। বিনিয়োগের প্রয়োজন আছে বলেও মনে করেনি। শুধু বাংলাদেশের দোষ দেবো কেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই গবেষণাকে মনে করা হয়- 'আকাম'। বিশ্বাস করা হয় গবেষকরা যা করে তা দিয়ে কোন কাজে আসে না। এদের কাজ হলো শুধু কনফারেন্স করা আর দেশে দেশে ঘুরে বেড়ানো। অনেকে আবার এক লাইন সামনে- এদের ধারণা যাদের কোন কিছু করার থাকে না তারাই গবেষনা করে।

তিনি বলেন, এই সব লোকদের জন্য কোভিড-১৯ একটি জিনিস প্রমাণ করতে পেরেছে- 'হ্যাঁ কিছু লোক আছে যাদের জন্যই মানব সভ্যতা এখনো টিকে আছে এবং মানুষের জীবনকে বিরুদ্ধে এই রকম যত থ্রেট আসবে তা প্রতিহত করতে গবেষণায় বিনিয়োগ করতে হবে। এখন কী বাংলাদেশ সরকার পারে না খুব দ্রুত বড় মানের একটি প্রজেক্ট সেট করে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যেসব বাংলাদেশি ভাইরাস ডিটেকশান অথবা ভাইরাসের প্রতিষেধক বানাতে কাজ করছেন তাদেরকে দেশে নিয়ে খুব দ্রুততম সময়ে দেশের জন্য কিছু করতে বলা।

তিনি লিখেন, আমি ভাইরাস নিয়ে কাজ করি না। টুকটাক কাজ করি ক্যানসার নির্ণয়ের ওপর।  আর এই অভিজ্ঞতা নিয়েও বলতে পারি, কোভিড-১৯ ভাইরাস সম্বন্ধে এখন পর্যন্ত যা পর্যাপ্ত ইনফরমেশান আছে তা দিয়েই খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই একটি রেপিড ডিটেকশান পদ্ধতি বানিয়ে ফেলা সম্ভব।

বিশ্বব্যাপি চলমান কঠিন ট্রাভেল রেস্ট্রিকশানের মধ্যেও সরকার চাইলে এদেরকে বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসতে পারে। বেশি লোকের দককার নেই - মাত্র ১০ জন দেশপ্রেমি তরুণ। যারা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য ১৯৭১ সালের স্পিরিট নিয়ে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় নামবে। আর তাদের সহযোগিতায় থাকবে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী।

তিনি তার অন্য প্রস্তাবের বিষয়টি উল্লেখ্য করে বলেন, এটি যদি খুব অসম্ভব মনে হয় তবে আরেকটি প্রস্তাব - আমাদের দেশের যত ওষুধ কোম্পানি আছেন তাদের সিইওদের ডাকুন| তাঁদেরকে বলেন দেশের স্বার্থে তারা যেন তাদের কোম্পানির সবচেয়ে মেধাবী গবেষকদের, যাদের ভ্যাকসিন ডেভেলাপমেন্টের বা ইনফেকশাস ডিজিজ নির্ণয়ের সরাসরি অভিজ্ঞতা আছে, যারা ইনফেকশাস ডিজিজের এপিডেমিওলজি ভালো বুঝেন এবং জানেন, তাঁদেরকে দেশের জন্য, দেশের মানুষের এই প্রজেক্টে দেন। আমি হলফ করে বলতে পারি সব কোম্পানি এখানে খুশি মনে রাজি হবে।
 
বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ জহিরুল আলম সিদ্দিকী সরকারের প্রতি অনুরোধ করে লেখেন, আমি সরকারের সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাঁদেরকে বিনীত অনুরোধ করছি এই বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবার জন্য। মনে রাখবেন এই ভাইরাস বাংলাদেশকে এত সহজে ছাড়বে না। আপনারা যদি ভেবে থাকেন অন্য কোন দেশ কিছু একটি করবে আর আপনারা তখন এটি নিয়ে এসে আমাদের দেশে ব্যাবহার করবেন তা করতে পারেন  এবং এটিতো প্রায় সব সময়েই করে আসছেন। কিন্তু এইবার কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটি একটু অন্যরকম - যাদের কাছে থেকে আনবেন তারাও মহা বিপদে, সবাই আগে নিজেকে রক্ষা করবে।

তিনি আরো লিখেন, কিছুদিন আগে আমার এক ছাত্র নাজমুল ইসলাম শিপলু এটি নিয়ে লিখেছিলো- জানি না কতজন পড়েছেন এবং তার কথাগুলো বিশ্বাস করেছেন।

আমি বলতে চাচ্ছি সরকারের যেহেতু টাকা আছে এবং দেশের মানুষের জন্যে এমন একটি প্রজেক্টের প্রয়োজনীয়তাও আছে, এখন সরকারের উচিত এই ক্ষেত্রে দ্রুত বিনিয়োগ করা। এটি করতে পারলে অসংখ্য বাংলাদেশির জীবন যেমন বাঁচবে।

উল্লেখ্য, বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ জহিরুল আলম সিদ্দিকী ক্যানসার শনাক্তকরণের একটি সহজলভ্য পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। যার মাধ্যমে মাত্র ৯০ মিনিটে শরীরে ক্যান্সারের উপস্থিতি শনাক্ত করবে। তিনি ২০১৫ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। পাশাপাশি তিনি গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত