সিলেটটুডে ডেস্ক

৩০ এপ্রিল, ২০২০ ১৯:১৭

দেশের একমাত্র করোনামুক্ত জেলা রাঙ্গামাটি

দেশের ৬৩ টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। বুধবার পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলায় প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের ৬৩ জেলায় করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এখনো করোনামুক্ত জেলা হিসেবে রয়েছে রাঙ্গামাটি।

জেলা প্রশাসন বলছে, তাদের গৃহীত নানাবিধ পদক্ষেপ আর জনগণের সচেতনতাই জেলাটিকে এখনো করোনামুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছে। তবে এখনো শনাক্ত না হলেও ঝুঁকির বাইরে নয় বলেও মনে করেন তারা।

রাঙ্গামাটি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, বুধবার রাত অবধি রাঙ্গামাটিতে মোট ২২১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে ১৩২ জনের রিপোর্ট এসেছে এবং প্রতিটি রিপোর্টই নেগেটিভ। বাকি রিপোর্ট অপেক্ষমাণ আছে। একই সময়ে জেলায় মোট ১ হাজার ৭৭৭ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে হোম কোয়ারেন্টিনে ১ হাজার ২৬৮ জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে ৫০৯ জন। এর মধ্যে কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৪৭৮ জনের এবং বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন ১২৯৯ জন। এর বাইরে জেলায় রাজস্থলী, বাঘাইছড়ি এবং রাঙ্গামাটি সদরে তিনজন মারা যান করোনার উপসর্গ নিয়ে। এদের মধ্যে দুইজন আইসোলেশনে ছিলেন। মৃত তিনজনকেই করোনা রোগীদের মতোই দাফন ও দাহ করা হয়। কিন্তু মৃত্যুর পরে পাওয়া রিপোর্টে তিনজনের কারো শরীরেই করোনার লক্ষণ পাওয়া যায়নি।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য মতে, ৬৩টি জেলায় এযাবৎ ৭ হাজার ৬৬৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছেন ১৬৮ জন। তবে বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) পর্যন্ত দেশের একমাত্র জেলা রাঙ্গামাটিতে এখনো করোনা পজিটিভ রোগী পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ রাঙ্গামাটির প্রতিবেশী জেলা খাগড়াছড়িতে বুধবার নারায়ণগঞ্জ ফেরা একজনের শরীরে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়।

বিজ্ঞাপন



রাঙ্গামাটি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, আসলে আমরা যাদের সন্দেহভাজন পাচ্ছি, তাদের সবারই নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি। এখন সুস্থ কাউকে ধরে তো আর নমুনা সংগ্রহ করার কোনো মানে নেই। তবে এখনই আত্মতুষ্ঠিতে ভোগা যাবে না। আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে, ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না, কোনভাবেই নির্দেশনা অমান্য করা যাবে না। কারণ বিপদ এখনো কাটেনি। আর করোনামুক্ত শেষ পর্যন্ত থাকা যাবে, এমনটাও ভাবা উচিত হবে না।

রাঙ্গামাটি এখনো করোনামুক্ত রাখার জন্য নিজেদের নানা পদক্ষেপের বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, রাঙ্গামাটির প্রশাসন সারাদেশের চেয়ে একেবারেই ব্যতিক্রম ছিল। শুরু থেকেই রাঙ্গামাটির সবগুলো প্রবেশপথ বন্ধ করে বাইরে থাকা মানুষকে হোম কোয়ারেন্টিন ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে বাধ্য করেছেন। কাউকেই ন্যূনতম ছাড় দেননি। জেলার মানুষও অনেক বেশি সচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন। একইসাথে রাঙ্গামাটি জেলার ভৌগলিক অবস্থান, দুর্গমতা এবং হ্রদবেষ্টিত হওয়ার কারণে কিছু সুবিধাও মিলেছে বলে জানান তিনি।

রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, আমাদের চেষ্টা ও রাঙ্গামাটিরবাসির সহযোগিতা-সচেতনতা-আন্তরিকতার কারণে এখনো আমরা করোনামুক্ত আছি। তবে নিরাপদ নই এখনো আমরা, করোনামুক্তও থাকতে পারব এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। এইজন্য সবাইকে সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। কোনভাবেই বর্তমান পরিস্থিতিকে ঢিলেঢালা করা যাবে না। বাসায় থাকতে হবে, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।’

উল্লেখ্য, ১৬ এপ্রিল পার্বত্য জেলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের এক ব্যক্তির করোনা পজিটিভ আসে। এরপর বান্দরবানের থানচি, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়িতে পুলিশ সদস্যসহ আরও চারজন আক্রান্ত হয়ে মোট পাঁচজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বিতীয় ও তৃতীয় বারের ল্যাব টেস্টে করোনা নেগেটিভ এসেছে এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বুধবার খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় করোনা শনাক্ত হওয়া রোগী খাগড়াছড়ির প্রথম করোনা রোগী। এতে করে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুই জেলা বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে করোনা সংক্রমিত হলো। তবে এখনো সংক্রমণের বাইরে রয়েছে পাহাড়ের রাজধানী খ্যাত রাঙ্গামাটি জেলা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত