দেবব্রত চৌধুরী লিটন

৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১৬:১৪

যেমন ছিল সিলেটে ভোটের চিত্র

সিলেট জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। কিছু কেন্দ্রে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি, কোথাও আবার দেখা গেছে ভাটার টান। তবে সিলেটের বেশিরভাগ এলাকাতেই সার্বিক পরিস্থিতি ছিল শান্তিপূর্ণ। সরকার সমর্থকরা ভোটের এসব ছবিকে উৎসবমুখর বললেও এই নির্বাচনকে প্রহসনের নাটক বলছে বিএনপি সমর্থকরা।

সকালবেলা ভোট দিতে গিয়েই মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির অভিযোগের পসরা খুলে বসেন। সকাল সাড়ে ৯টায় নগরীর কিন ব্রিজ সংলগ্ন সারদা হল কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তাঁর পোলিং  এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, কর্মীদের গ্রেপ্তার করার কথা জানান। তবে এসবের মধ্যেও তাঁর কণ্ঠে ছিল জয়ের আশাবাদ।

সকাল ১০টায় নগরীর বন্দরবাজারস্থ দূর্গাকুমার পাঠশালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন সিলেট-১ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী সদস্য ও অর্থমন্ত্রীর ছোট ভাই মোমেন ভোটে অনেকটা ঈদের আমেজ বিরাজ করছে জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, 'অত্যন্ত উৎসাহ ভরে ভোটাররা তাদের ভোট প্রদান করছেন। অনেকগুলো কেন্দ্র ঘুরতে গিয়ে দেখেছি কোথাও কোন সমস্যা হচ্ছে না। বিএনপির এজেন্টদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, তারাও কেন্দ্রে শান্তিতে আছে।'

সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ)

সকাল ১১টায় সিলেট-৬ আসনের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বরায়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে  গিয়ে দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসারের নুরুল আলম সাথে কথা বলে জানা গেল ৩ হাজার ৬৩ জন ভোটারের এই কেন্দ্রের প্রায় ৫০ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ফেলেছেন। এই কেন্দ্রের ভোটার শাহজাহান আহমদ ও আনা মিয়া জানান এই কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হচ্ছে। পরিস্থিতি খুবই স্বাভাবিক।

এই কেন্দ্র থেকে বেড়িয়ে দুপুর ১২টায়  উপজেলার মোল্লাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে  গিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার মোঃ. জুলহাস মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায় ২ হাজার ১ শত ৭০ ভোটারের এই কেন্দ্রে প্রায় ১ হাজার ২ শত ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

একই উপজেলার কায়স্থগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুর ১২ টায় প্রিজাইডিং অফিসার আল মাহমুদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান ২ হাজার ৯ শত ২২ জন ভোটারের এই কেন্দ্রে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত  ১ হাজার ৫ শত জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।  এসব কেন্দ্রে তখন ভোটারদের উপস্থিতি ছিল বেশ কম। তবে পরিস্থিতি ছিল শান্তিপূর্ণ।

দুপুর সোয়া ১২ টায় সরকারী এমসি একাডেমী গোলাপগঞ্জ ভোট কেন্দ্রে ভোট প্রদান শেষে কেন্দ্রের বাইরে কথা হয় উপজেলার চিটা ফুলবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সুফিয়া বেগমের সাথে। তিনি জানান, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে সকাল থেকেই এই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলছে। কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং অফিসার সালেহ আহমদ জানান, ২ হাজার ১ শত ৯৬ জন ভোটারের এই কেন্দ্রে সোয়া ১২ টা পর্যন্ত ৩৫ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। অন্যান্য কেন্দ্র গুলোর তুলনায় এই কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম কেন জানতে চাইলে তিনি জানান, বিকেলের দিকে ভিড় কম থাকতে পারে এমন আশংকায় অনেক ভোটার শেষ সময়ে ভোট দিতে আসবেন বলে প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।

উপজেলার ১ নং হাজীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে মিলল ভিন্ন চিত্র। ২ হাজার ৯ শত ৯৪ জন ভোটারের এই কেন্দ্রে দুপুর সাড়ে ১২টায় গিয়ে দেখা গেল নারী ভোটারদের দীর্ঘ সারি। প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুর রহিম জানান, ৬টি বুথে এই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলছে। কেন্দ্রেটিতে কর্মরত পুলিশ সদস্য মো. সুমন মিয়া জানান, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সকাল থেকেই এই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলছে। তিনি ছাড়াও ২ জন আনসারের সশস্ত্র ছাড়াও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৬ জন পুরুষ ও ৪ জন নারী সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।

একই উপজেলার ৩ নং ফুলবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রের সামনে গিয়ে কথা হয় গুলাগাও গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদুর রহমানের সাথে। তিনি জানান শান্তিপূর্ণ ভাবে সকাল থেকেই এই কেন্দ্রে চলছে ভোট গ্রহণ।

সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ)

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কুচাই ইসরাব আলী ভোট কেন্দ্রে দুপুর পৌনে ১টার দিকে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে। এসময় তারা জানান, ভোট কেন্দ্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে হটাৎ করে কেন্দ্রটি লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়ে একদল দুর্বৃত্ত। পরে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও টহল পুলিশ সদস্যরা সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

একই উপজেলার ৪ নং কুচাই ইউনিয়ন পরিষদ ভোট কেন্দ্রে দুপুর সোয়া ১টা গিয়ে দেখা যায় কেন্দ্রের বাইরে পুরুষ ভোটারদের দীর্ঘ সারি। কেন্দ্রটির ভোটার ও গোটাটিকর এলাকার বাসিন্দা রুবেল আহমদ জানান, ভোটার আইডি কার্ড ছাড়া এই কেন্দ্রে কোন কাউকেই ঢুকতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়াও নতুন ভোটারদের আইডি কার্ড না থাকায় বিপাকে পরেছেন তারাও। তাই অনেককেই ভোট না দিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং অফিসার হারুনুর রশীদ জানান, 'আইডি কার্ড ছাড়া কাউকে কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগ সঠিক নয়। দুপুরের খাবার বিরতির জন্য খানিকটা সময় ধীর লয়ে করা হয় ভোট গ্রহণ।'                 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট জেলায় দায়িত্ব পালন করছেন ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৪৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সিলেটে সেনাবাহিনীর ১৪টি ইউনিট মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া বিজিবি ২৯.৫ প্লাটুন বিজিবিও নির্বাচনের মাঠে রয়েছে।

এছাড়া নির্বাচনে মোট ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন ১৫ হাজার ২শত ৫৪ জন। মোট রিজার্ভ ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে আছেন ১৫ হাজার ২৫ জন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটে মোট আসন সংখ্যা ৬টি। ৬ আসনে মোট প্রার্থী হচ্ছেন ৪৪ জন। জেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২২ লক্ষ ৫২ হাজার ৭৬৪ জন। মোট উপজেলা ১৩টি এবং সিটি কর্পোরেশন একটি।

প্রসঙ্গত, সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৪৪ হাজার ২১৯ জন। এর মধ্যে ২ লাখ ৮৬ হাজার ২ শত ৬৯ জন পুরুষ এবং ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫ শত ৭৫ জন নারী ভোটার।

এবার সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে প্রার্থী আছেন ১১১ জন। বিভাগে মোট ভোটার ৬৬ লাখ ২০ হাজার ৬০৬ জন। সিলেট বিভাগে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ২৮০৫টি।  

আপনার মন্তব্য

আলোচিত