নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৫:৫৭

ঝুমনের জামিন চাইলেন নির্মলেন্দু গুণ

হেফাজত নেতা মামুনুল হকের সমালোচনা করে দীর্ঘদিন করে কারাগারে থাকা ঝুমন দাসের জামিনের দাবি উঠেছে দেশজুড়েই। এই দাবিতে সোচ্ছ্বার হয়েছেন কবি নির্মলেন্দু গুণও।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের একাউন্ট থেকে শুক্রবার স্ট্যাটাস দিয়ে এমন দাবি জানিয়েছেন দেশের প্রধান এই কবি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশের দায়ের করা মামলায় প্রায় ছয় মাস ধরে কারাগারে আছেন সুনামগঞ্জের শাল্লার যুবক ঝুমন দাস। হেফাজতে ইসলামের সমালোচিত নেতা মামুনুল হকের সমালোচনা করে স্ট্যাটাস দেওয়ায় গত ১৬ মার্চ তাকে আটক করে পুলিশ।

এই স্ট্যাটাসের জেরে পরদিন ১৭ মার্চ ঝুমনের গ্রাম নোওয়াগাওয়ে হামলা চালায় মামুনুল হকের অনুসারীরা। তারা ঝুমন দাসসহ গ্রামের অনন্ত ৯০ টি হিন্দু বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটাপাট চালায়।

এসব তান্ডবের দায়ে দায়েরকৃত তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া প্রায় সকল আসামিরাই ইতোমধ্যে জামিন পেয়ে গেছেন। তবে এখনও কারাগারে রয়েছেন ফেসবুকে স্ট্যাটাসদাতা ঝুমন দাস। নিম্ম আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত পাঁচ দফা নাকচ হয়েছে তার জামিন আবেদন।

ছয় মাসেও ঝুমন দাস জামিন না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকেই। অনলাইনে ও রাজপথে তার জামিনের দাবিতে সোচ্ছার হচ্ছেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন।

ঝুমনের জামিনের দাবি জানিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ শুক্রবার ফেসবুকে লেখেন- 'ঝুমন দাসকে জামিন দিয়ে ওর বিচারের ঝাঁপি খুলুন। দেখি তার অপরাধ কতখানি। ওকে বিনা বিচারে আটকে রাখছেন কেনো?'

নির্মলেন্দু গুণের এই স্ট্যাটাসের নিচে অনেকেই সহমত জানিয়ে মন্তব্য করেছেন। শুক্রবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত এই স্ট্যাটাস ১৫০ জন মন্তব্য করেছেন এবং ৪৮ জন শেয়ার করেছেন।

এই স্ট্যাটাসের নিচে ফরিদত ভূইয়া নামের একজন লিখেছেন- জামিন পাওয়ার অধিকার সকল নাগরিকের। জামিন দিন। সুস্থ বিচার দাবি করছি।

দিনেশ সরকার নামে আরেকজন লিখেছেন- 'যারা অপরাধ করেছে তারা বাইরে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে আর নির্দোষকে জেলে রেখে তার পরিবারকে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে। অনতিবলম্বে তার মুক্তি চাই।

আদালত তো বারেবারে তার জামিন নাকচ করে দিচ্ছে, এবার দেখি আপনার স্ট্যাটাসে কারো টনক নড়ে কিনা!'
এদিকে, ঝুমন দাসের জামিনের দাবিতে গত বুধবার সারাদেশে একযোগে সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ সমাবেশ করে উদীচী।

ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে উদীচীর ওই সমাবেশে সন্তানকে নিয়ে যোগ দেন ঝুমনের স্ত্রী সুইটি রাণী দাস।

এসময় সুইটি রানী বলেন, ‘সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আমার স্বামী। আমি বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। আমি নিজেও অসুস্থ। নিরুপায় হয়ে স্বামীর মুক্তির দাবিতে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘যারা অপরাধী, তারা নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কী অপরাধ ছিল আমার স্বামীর?’

ঝুমনের জামিনের বিষয়ে তার ভাই নুপুর দাস বলেন, নিম্ম আদালতে নাকচ হওয়ার পর আমরা আবার উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করেছি। তবে এখনও শুনানির তারিখ পড়েনি।

যে কারণে গ্রেপ্তার ঝুমন
গত ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে শানে রিসালাত সম্মেলন নামে একটি সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এতে হেফাজতের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বক্তব্য দেন।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে আগে থেকেই সমালোচনায় ছিলেন মামুনুল হক। দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনি আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সংগঠনের নেতা-কর্মীদের প্রতিরোধের মুখে পড়েন। এ অবস্থায় দিরাইয়ের সমাবেশে এসে সরকারবিরোধী বক্তব্য দেন তিনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সমাবেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা করতে গিয়ে সাম্প্রাদায়িক বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেন মামুনুল।

এই সমাবেশের পরদিন ১৬ মার্চ মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন দিরাইয়ের পার্শ্ববর্তী উপজেলা শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের যুবক ঝুমন দাস আপন। স্ট্যাটাসে তিনি মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ আনেন।

মামুনুলের সমালোচনাকে ইসলামের সমালোচনা বলে এলাকায় প্রচার চালাতে থাকে তার অনুসারীরা। এতে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা ১৬ মার্চ রাতে ঝুমনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

এরপর রাতেই স্থানীয় বাজারে হেফাজতে ইসলামসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে প্রশাসন। এ সময় ঝুমনকে আটকের খবর জানিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়। প্রশাসনের আহ্বানে তখন শান্ত থাকার আশ্বাস দেন উপস্থিত সবাই।

তবে পরদিন ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সকালে কয়েক হাজার লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে হামলা চালায় নোয়াগাঁও গ্রামে। তারা ভাঙচুর ও লুটপাট করে ঝুমন দাসের বাড়িসহ হাওরপাড়ের হিন্দু গ্রামটির প্রায় ৯০টি বাড়ি, মন্দির।

১৬ মার্চ আটকের পর ১৭ মার্চ ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঝুমনকে আদালতে পাঠায় শাল্লা থানা পুলিশ। এরপর ২২ মার্চ ঝুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত