১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৬:১২
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রটি ভুয়া বলে জানিয়েছে ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) একুশে টেলিভিশন-ইটিভির এক ফটোকার্ড সেয়ার করে জানায়, ভাইরাল হওয়া শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রটি ভুয়া।
এতে বলা হয়, শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র দাবিতে ভাইরাল হওয়া চিঠিতে বেশ কয়েকটি অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। চিঠিতে ইংরেজি ০৫ আগস্টকে বাংলা ২০শে শ্রাবণ উল্লেখ করা হলেও সেদিন ছিল বাংলা ২১শে শ্রাবণ। সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্যাডে বাংলা তারিখ উপরে থাকলেও এখানে ইংরেজি তারিখ উপরে রয়েছে। তাছাড়া চিঠিতে বিভিন্ন বাক্যে ব্যবহৃত যতিচিহ্ন ‘।’ মোবাইলে টাইপ করা যা এর গঠন দেখে স্পষ্ট।
উল্লেখ্য, রিউমর স্ক্যানার দেশের অন্যতম প্রধান ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি তাদের ওয়েবসাইটে নিজেদের সম্পর্কে বলেছে, রিউমর স্ক্যানার একটি স্বাধীন সাংবাদিকতার উদ্যোগ যার প্রধান লক্ষ্য দেশের চলমান গুজব ও ভুয়া খবর নির্মূল করা এবং সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
অপরদিকে এএফপির ফ্যাক্ট চেকিং এডিটর কদরুদ্দীন শিশির ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে জানিয়েছেন, এই চিঠির উৎস কী? কে বা কারা এটি প্রকাশ করেছে তা কেউ জানে না! সবাই ফেসবুকে পেয়েছেন! ফেসবুকেও কে প্রথম প্রকাশ করেছে তাও এখন পর্যন্ত স্পষ্ট না।
এ রকম গুরুত্বপূর্ণ একটি পদত্যাগপত্র যাচাই না করেই সংবাদ পরিবেশন দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরনের ভুয়া টেক্সট ডকুমেন্ট নির্ভুলভাবে বানানো এত সহজ এবং সেটি ভুয়া প্রমাণ করা এত কঠিন যে ডকুমেন্টের সত্যমিথ্যা নির্ধারণের একমাত্র মাপকাঠি সেটি যে বা যারা প্রকাশ করছে তারা দায়িত্ব নিচ্ছে কিনা? যদি কেউ দায়িত্ব নেয় তাহলেই শুধু পরবর্তী ভেরিফিকেশন সম্ভব হয়ে ওঠে। অন্যথায় সূত্রবিহীন এ ধরনের ডকুমেন্টেকে অটোমেটিকালি ভুয়া বলেই ধরে নিতে হয়।
কদরুদ্দীন শিশির লেখেন, এই চিঠির ভাষা লক্ষ্য করলে স্পষ্ট হওয়ার কথা এটি ভুয়া। শেষ মূহূর্তেও শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকার মানসিক দৃঢ়তার যেসব বর্ণনা সংবাদমাধ্যমে বিগত এক মাসে উঠে এসেছে তাতে ‘সাম্প্রতিক ঘটনাবলী প্রমাণ করে যে, এ মুহূর্তে দেশকে এগিয়ে নিতে অন্য নেতৃত্বের প্রয়োজন’ বাক্যটি তার পক্ষে লেখা কোনোভাবেই সম্ভব না। শেখ হাসিনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাথে এমন বাক্য যায় না।
এছাড়া ‘এ ঘটনাগুলোতে আমি সম্পূর্ণ দায়িত্ব স্বীকার করছি’ বাক্যটি যদি আদৌ তিনি লিখে থাকেন তাহলে শেখ হাসিনার বিচারের জন্য এই চিঠিই হতে পারে সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে, তিনি নিজেই স্বীকার করছেন প্রাণহানির ঘটনাগুলোর দায় তার!
‘এসব সরল স্বীকারোক্তি সূত্রহীন মনের মাধুরী মিশিয়ে লেখা চিঠিতেই সম্ভব’ উল্লেখ করে তিনি লেখেন, এমন চিঠির প্রকাশের সূত্র না জানা থাকলে এ ধরনের ডকুমেন্ট আমলে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট পাওয়া গেলে বা প্রকাশিত হলে বিষয়টি বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সবচেয়ে ভালোভাবে অবগত থাকার কথা। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের একজন কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, তাদের কাছে এরকম কোন চিঠির তথ্য নেই।
আপনার মন্তব্য