জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ থেকে

১৫ জুন, ২০১৬ ১৫:৩৭

৩ মন্ত্রী ও ২ এমপির অনুষ্ঠানে পকেটমার, তোলপাড়

ঝিনাইদহে তিন মন্ত্রীর অনুষ্ঠানস্থল থেকে সরকারীদলের দুই এমপি ও প্রভাবশালী নেতাদের মোবাইল ও নগদ টাকা পকেটমারের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে ঝিনাইদহে টক অব দি টাউনের পাশাপাশি ফেসবুকে একটি লেখা ভাইরাল হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে।

বাবুল আজাদ নামে আওয়ামীলীগ সমর্থিত এক ঠিকাদার তার ফেসবুকে ঝিনাইদহের দুই এমপি আব্দুল হাই ও আনোয়ারুল আজিম আনারসহ নেতাদের পকেটমারের ঘটনাটি উল্লেখ করে দিয়ে চোর ধরে পুলিশের প্রতি টাকা উদ্ধারের দাবী জানিয়েছেন।

ফেসবুকে বাবুল আজাদ লিখেছেন “আজ ১৪/০৬/১৬ইং বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় ৩ জন মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু এসেছিলেন ঝিনাইদহ করতিপাড়া আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলির শোকসভায়। ছবির এই স্থান থেকে আমার প্যান্টের পকেট থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পকেট মেরে নিয়েছে এবং আমাদের মাননীয় এমপি সাহেব মো. আব্দুল হাই ভাইয়ের মানিব্যাগ সহ টাকা, কালীগঞ্জের এমপি আনার ভাইয়ের মোবাইল।

শৈলকূপা দুদসর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোয়েব জোয়ার্দারের উনপঞ্চাশ হাজার টাকাসহ আরো অনেকের টাকা, মানিব্যাগ ও মোবাইল পকেট মেরে নিয়েছে। আমি ঝিনাইদহ জেলা পুলিশকে অনুরোধ করবো যে আপনারা সাংবাদিক ভাইদের কাছ থেকে ভিডিও ফুটেজ নিয়ে এই সব চোরদের ধরুন। টাকা ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করার ব্যবস্থা করুন”। বাবুল আজাদের ফেসবুকের স্ট্যাটাস নিয়ে নানা রকম রসাত্মক মন্তব্যও করা হয়েছে।

একে আজাদ নামে একজন লিখেছেন “ পকেট মারা চোরও আছে এখানে ? ”।

ডিস রতন লিখেছেন “এটাতে বিএনপি জামায়াতের হাত থাকতে পারে”।

এমডি মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন “বাবুল ভাই আসলে বিষয়টা নৈহাটির শাসনের ভৌতিক কোন ব্যাপার কি না খতিয়ে দেখা উচিৎ। বেতার ইসলামিক মহারাজপুর লিখেছেন “নিজের নিরাপত্তা নিজেরা দিতে পারেনা তাহলো জনগণের নিরাপত্তা কিভাবে দিবেন??”।

জাফর হোসাইন লিখেছেন “অসৎ ভাবে উপার্জিত টাকা এভাবে হারিয়ে যায় ভাইয়া”। এমডি রফিক আজাদ লিখেছেন “ডাকাতের মাল চোরে খাইছে”।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ শহরের ব্যাপারীপাড়ার বাসিন্দা ঠিকাদার বাবুল আজাদ নিজের ফেসবুকে পকেটমারের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ঝিনাইদহ শহর থেকে কোরাতিপাড়া পর্যন্ত নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ছিল। রাস্তার দু ধারে পোশাক পরিহিত অস্ত্রধারী শত শত পুলিশ। আছে সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা। এর মাঝেও এমন ঘটনা ঘটবে ধারনাও ছিল না।

তিনি জানান, দুই এমপি ছাড়াও, সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন চেয়ারম্যান, দলীয় নেতাকর্মী ও ঠিকাদারসহ অনেক নামীদামী ব্যক্তির পকেটমার হয়েছে। কিন্তু লজ্জায় কেও মুখ খুলছে না। তিন মন্ত্রীর সমাবেশস্থলে পকেটমারের ব্যাপারে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ বলেন, আমি তো বিষয়টি জানি না। তাছাড়া ওই অনুষ্ঠানে আমি যায় নি। খোঁজ নিয়ে পরে বলতে পারবো।

উল্লেখ্য, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কোরতিপাড়া গ্রামে পুরোহিত আনন্দ গোপাল হত্যার প্রতিবাদে স্থানীয় স্কুল মাঠে সরকারের তিন প্রভাবশালী মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও বিমান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন যখন পর্যায়ক্রমে যখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তখন ঘটে বিপত্তি। প্রতিবাদ সভায় পকেটমারদের বেশুমার আচরণের শিকার হন ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুল হাই। পকেটমার তার মানি ব্যাগসহ টাকা নেয়। ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের একটি মোবাইল সেট নেয়।

এছাড়া ঠিকাদার বাবুল আজাদের ৫০ হাজার টাকা, গান্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন, শৈলকূপার দুধসর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোয়েব জোয়ারদার, ঝিনাইদহের সাবেক এক পৌর চেয়ারম্যানসহ অর্ধশত নেতাকর্মী টাকা ও মোবাইল খোয়া যায়। শত শত পুলিশ ও সাংবাদিকদের চলমান ক্যামেরার মধ্যে পকেটমারদের দৌরাত্ম্যের ঘটনায় নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা মোবাইল ও টাকা উদ্ধারেরও দাবী জানিয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত