রেজা ঘটক

৩১ আগস্ট, ২০১৬ ১৯:২৪

শহীদ কাদরীর মরদেহ কেন বাংলা একাডেমিতে নেওয়া হলো না?

কবি শহীদ কাদরী দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটানোর পর গত ২৮ আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের নর্থ শোর বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০১১ সালে একুশে পদক প্রাপ্ত কবি'র মরদেহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজ উদ্যোগে দেশে ফিরিয়ে আনেন। আজ শহীদ মিনারে কবি'র মরদেহে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করেন।

দেশে বাংলা একাডেমি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বের কথা আমরা জানি। এটি নাকি জাতির মননের প্রতীক। অথচ এই বাংলা একাডেমি একবারও কবি শহীদ কাদরী'র মরদেহকে একাডেমি প্রাঙ্গণে নেওয়ার মত আগ্রহ দেখালো না! এমন বাংলা একাডেমি জাতির কোন মননে কাজে লাগবে, আমি বুঝি না।

শহীদ মিনারে কবি'র মরদেহে বাংলা একাডেমি'র পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানালেই যে এই একাডেমি'র দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়, আমি তা মনে করি না।

অতীতে দেশের অনেক কবি-সাহিত্যিককে বাংলা একাডেমি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তাঁদের মরদেহ প্রিয় একাডেমি প্রাঙ্গণে কিছুক্ষণের জন্য রেখেছে। আজ কেন কবি শহীদ কাদরী'র বেলায় এই ব্যতিক্রম করা হলো?

তাহলে কী কবি শহীদ কাদরী যাদের উপর অভিমান করে এক সময় দেশ ছেড়েছিলেন, তাদের প্রেতাত্মারা এখনো বাংলা একাডেমি'র সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন?

কবি শহীদ কাদরীকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য না নেওয়াটা বাংলা একাডেমি'র একটি গর্হিত অপরাধের সামিল। একাডেমি'র মহাপরিচালক জনাব শামসুজ্জামান খান নিজেও শহীদ মিনারে একাডেমি'র অনেককে নিয়ে কবি'র মরদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। কিন্তু কবিকে কেন বাংলা একাডেমিতে নেওয়া হলো না, সেই প্রশ্নের জবাব কিন্তু তাকেই দিতে হবে। এমন বাংলা একাডেমি দিয়ে জাতি আসলে কী উদ্ধার করছে বুঝি না!

কবি শহীদ কাদরী মাত্র ১২৬টি কবিতা লিখেছেন। কবি'র প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা চারটি। উত্তরাধিকার (১৯৬৭), তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা (১৯৭৪), কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই (১৯৭৮), আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও (২০০৯)।

বাংলা একাডেমি কবি শহীদ কাদরী'র সঠিক মূল্যায়ন না করতে পারলেও বাংলা সাহিত্যে কবি শহীদ কাদরী এক জ্বলজ্বলে ধ্রুব তারার মত চিরদিন অমর থাকবেন।

রেজা ঘটক : নির্মাতা, কথাসাহিত্যিক।
[ফেসবুক থেকে]

আপনার মন্তব্য

আলোচিত