সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৯:১৮

ফেসবুকজুড়ে সালমান শাহ

মাত্র ৪ বছরের সংক্ষিপ্ত চলচ্চিত্রজীবনে ২৭টি ব্যবসাসফল ছবির নায়ক সালমান শাহর ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ  (৬ সেপ্টেম্বর)। ১৯৯৬ সালের রহস্যজনক এক মৃত্যুতে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন এ চিত্রনায়ক। পৃথিবী থেকে বিদায়ের ২০ বছর পরও এখনও আছেন সালমান, সালমান শাহ; তার ভক্ত-অনুরাগীদের মাঝে।

সালমান শাহকে বলা হয় নব্বুইয়ের দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক। প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। তার মৃত্যুর দুই দশক পর ফেসবুক সালমানময়। অনেক ভক্ত-অনুরাগী সালমান শাহর মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন। সালমান শাহের অভিনয়গুণ, মৃত্যুরহস্য ও ছবি শেয়ার করে অনেকেই লিখছেন, কমেন্ট করছেন।

সালমান শাহকে নিয়ে মোছাদ্দিক উজ্জ্বল ফেসবুকে লিখেন,

দিব্যা ভারতী তখন সবার বাজার ধ্বস নামিয়ে দিচ্ছিলেন। বিচলিত মাধুরী, শরীর সর্বস্ব মমতার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। পূজা ভাট তখন অভিনয় ছেড়ে প্রোডাকশন নিয়ে ব্যস্ত। শ্রীদেবী তখন খানিক সিনিয়রিটি নিয়ে এক সাইডে চেপে যান। টুইংকেল, রাভীনা আর টানতে পারছিলেন না দর্শক। সবার মনে একটা আতংক। সেই আতংকের নাম দিব্যা ভারতী। দিব্যা তখনো জানতেন না,কতো গভীর ষড়যন্ত্র চলছে তাকে নিয়ে! ছাদে সিনেমার সেট বানানো হলো। লাইট,ক্যামেরা,প্রোডাকশন এর অর্ধশত মানুষের সামনে দিয়ে শট দিতে গিয়ে ছাদ থেকে নিচে পড়লেন। তারপর সব শেষ! বোঝানো হয়েছিল,দিব্যার এই মৃত্যু ছিল দুর্ঘটনা। কিন্তু অনেক পরে জানা গেলো মূল রহস্য। অংকুরেই বিনষ্ট হয়ে গেলো একজন শিল্পীর জীবন।

আজ আসলে আমাদের রুপালী পর্দার একটি মানুষকে নিয়ে লিখবার কথা। কী লিখবো, কোথা থেকে শুরু করব সেই হিসাব মেলাতে না পেরে দিব্যা দিয়ে শুরু করেছিলাম কারণ বলিউড আর ঢালিউডের এই দুটো মানুষ চরম দুর্ভাগ্য নিয়ে পৃথিবীর বুকে এসেছিলেন। দুজনকেই মেরে ফেলা হয়েছিল একই কায়দায়!

আমাদের ঢাকার চলচ্চিত্রে সালমান শাহ্‌ কী ছিলেন সেইসব নিয়ে নতুন করে বলার কিছুই দেখছি না। এর আগেও বলা হয়েছে অসংখ্যবার। আজ তাই এই পোস্টটি খানিক এলোমেলো থেকে যাক। শুরুর সাথে শেষের কোনো মিল খুঁজে নেবার দরকারও নেই। সালমান কে কারা মারলো,কী কারণে মারলো সেইসব ও সবার জানা। থাক,সেইসব।

বিনম্র শ্রদ্ধা বাংলা চলচ্চিত্রের ধ্রুবতারা! সবটুকু ভালোবাসা আর প্রার্থনা আজ তোমার জন্য। ভালো থাকো ওপারে।

মোছাদ্দিক উজ্জ্বলের ওই স্ট্যাটাসে নিশি শারমিন কমেন্টে লিখেন,

শুধু অভিনয় আর ফ্যাশন না, বাস্তবে অনেক ফ্রেন্ডলি আর ফানলাভিং মানুষ ছিল। আমি আজও তার সাথে দেখা হবার দিনটা মিস করি......

সুদীপ্ত সুজয় ফেসবুকে লিখেন,

২০ বছর হয়ে গেল। বাংলা চলচ্চিত্রের রাজপুত্রের মৃত্যুর ২০টা বছর পেরিয়ে গেল। আজও জট খুলল না মৃত্যু-রহস্যের, আজও শাস্তি পেল না ঘাতকেরা। আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়েরা এতই শক্তিশালী যে আজ পর্যন্ত কোনো সরকারই তার কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারল না, তার বিরুদ্ধে সালমান হত্যার অনেক জলজ্যান্ত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত আইনিভাবে কোনো অভিযোগই আনা হলো না। বারবার তদন্ত হয় আর মাঝপথে থেমে যায়। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনতে পারে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সালমানের মৃত্যুর পর এবং কবর থেকে তুলে মোট দুবার ময়না তদন্ত করা হয়। দুবারই তখন রিপোর্ট দেয়া হয় আত্মহত্যা বলে। অথচ হত্যার অনেক আলামত স্পষ্ট ছিল। এমনও শোনা যায় হত্যাকারীরা ময়নাতদন্তকারী ডাক্তারদের ভয় দেখিয়ে প্রভাবিত করে ভুল রিপোর্ট করিয়ে দেন।

আজ ২০ বছর পরেও মনে হচ্ছে এইতো সেদিন এক শুক্রবারে বিটিভিতে সিনেমা দেখাকালীন হঠাৎ সংবাদ-পাঠিকার খবরে ভেসে এলো সেই দুঃসংবাদ। ছোট ছিলাম, এত বেশি বুঝতাম না। তবে এখনও জনৈক পাঠিকার পাঠ করা সংবাদটা চোখে ভাসে। সেই দুঃসংবাদটা আমি কখনও ভুলতে পারব না।

১৯৯৬ জাতীয় নির্বাচনে সালমান শাহ'র মা নীলা চৌধুরী আমাদের মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টেলিভিশন মার্কায় (সম্ভবত) নির্বাচন করেন। সেই নির্বাচনে ১৪৬ আসন পেয়ে আওয়ামী লিগের বিজয় আর ১১৬ আসন পেয়ে বিএনপির পরাজয় ছাড়া আর কিছুই মনে নেই। কিন্তু একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কথা এখনও মনে আছে। সেই প্রার্থী যে ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের রাজপুত্রের মা নীলা চৌধুরী। মনে আছে একবার এলাকায় রটেছিল মায়ের নির্বাচনী প্রচারণায় সালমান আমাদের এলাকায় আসবেন মায়ের সাথে। সে কী আনন্দ আমাদের। এসেছিলেনও তিনি। কিন্তু আমাকে একা যেতে দেয়া যাবে না বলে বাড়ি থেকে বলা হয়েছিল আসবেন না। আমার কচি হৃদয় সেদিন অনেক আশাহত হয়েছিল!

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অনেক নায়ক/অভিনেতা অল্প বয়সে, ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে থেকে অপঘাতে মৃত্যু কিংবা হত্যার শিকার হয়েছেন। সালমান শাহ'র আগে বাংলা সিনেমার সবচেয়ে স্টাইলিশ, ফ্যাশনেবল নায়ক জাফর ইকবাল, সোহেল চৌধুরী, জসিম আর সর্বশেষ মান্না মারা গেছেন। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি তাদের জন্ম ও মৃত্যুতারিখ আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি বলতে পারব না, বলতে পারবে না ৯৯.৯৯ জনই। কিন্তু মাত্র ৪ বছরের ক্যারিয়ারে, ২৭টি চলচ্চিত্র আর কয়েকটি নাটক-বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেও সালমান এত প্রভাব বিস্তার করে গেছেন যে এখনও তিনি সমান জনপ্রিয়, এখনও তার চলচ্চিত্রগুলো টিভিতে দেখালে চ্যানেলের টিআরপি বেড়ে যায় হু হু করে। আত্মহত্যা সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু সালমানের মৃত্যুতে ২২/২৩ জন তরুণী আত্মহত্যা করেছিলেন। আমার মনে হয় পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো অভিনেতার মৃত্যুতে এতজন ভক্ত আত্মহত্যার ঘটনা আর একটাও নেই!

সালমানের মৃত্যুকে আর ১০টা সাধারণ মৃত্যুর সাথে তুলনা করা যাবে না। কারণ এক সালমানের মৃত্যু আমাদের চলচ্চিত্রকে পিছিয়ে দিয়েছে ৫০ বছর। আমি নিশ্চিত একজন 'আইকনিক' সালমান আজ বেঁচে থাকলে অসংখ্য ভালো নায়ক/অভিনেতা ওঠে আসত, চলচ্চিত্রে বিনিয়োগের কমতি হত না। বাংলা সিনেমার এই দুরবস্থা হত না। টলিউড নয়, আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হত বলিউড।

আজ সালমানের মৃত্যু দিবস। সালমানরা আসলে মরেন না। সালমান অমর এক মহানায়ক হয়েই আজীবন বাঙালি চলচ্চিত্রপ্রেমীদের হৃদয়ে আসীন হয়ে থাকবেন। আজকের দিনে বরাবরের মত আমার একটাই দাবি সালমান মৃত্যু-রহস্য উদঘাটিত হোক। ২০ বছর হয়ে গেলেও আমি এখনও মনে করি তাঁর মৃত্যুরহস্য উদঘাটনযোগ্য। শুধু প্রশাসনের একটু সদিচ্ছা দরকার।

শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রিয় নায়ক...

সুদীপ্ত সুজয় অন্য এক স্ট্যাটাসে লিখেন,

হোমপেজ সালমানময়। মৃত্যুর ২০ বছর পরেও কেউ এত জনপ্রিয় থাকতে পারে তা সালমান শাহকে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। সালমান শাহকে নিয়ে লেখা প্রতিটি স্ট্যাটাস আর ছবিতে কোপায়া লাইক দিতেসি। লাইক দিতেও ভালো লাগে প্রিয় নায়কের জন্য!

শুভ ধর  লিখেন,

ও সালমান শাহ,
বাঙালি বালিকাদের ক্রাশ এখন তাহসান আর জঙ্গি নির্বাস।

রূপন সরকার লিখেন,

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রার্থনা এই যে আমি রুপন সরকার চিরদিনের কিংবদন্তী বাংলার মহানায়ক শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন (সালমান শাহ্‌ ) হত্যার বিচারকার্য দ্রুত কার্যকর করে দুষিদের ফাঁসি দেখতে চাই।

ফাহমি ইলা সালমান শাহ'র ৯টি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে লিখেন,

বাবা বলে ছেলে নাম করবে'/'এখানে দুজনে নিরজনে,সাজাবো প্রেমের পৃথিবী'/'তুমি মোর জীবনের ভাবনা হৃদয়ে সুখের দোলা'/'ভালো আছি ভালো থেকো'/'তুমি আমার এমনি একজন' -- অন্য দিনের চেয়ে আজ গানগুলো একটু বেশিই মাথায় ঘুরছে।

সময়টা ১৯৯৬ সাল, ৬ সেপ্টেম্বর। সবেমাত্র নতুন ঢাকায় এসেছি তখন। দুপুরে গোসল করে টিভির সামনে বসেছি ভাতের থালা নিয়ে। হঠাৎ খবরে শুনি 'সালমান শাহ' নেই। আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে- আমি ভাতের থালায় হাত রেখে কাঁদছি। আম্মু আর ছোটখালা শকড হয়ে বসে আছে। আমার ছোটবেলার ফ্যান্টাসি, প্রথম প্রেমও যদি বলি এই সালমান শাহ (শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন)। একটা নাটকও করেছিলো। সমসাময়িক সময়ে দেখা। কিছুদিন আগে নাটকটি আবার নেট থেকে নামিয়ে দেখেছিলাম।

তার নির্দিষ্ট কিছু স্টাইল, অভিনয় মানুষের মন কেড়েছিল। আবার কিছু স্টাইল, ফ্যাশন অনেকদিন পর্যন্ত যুবকদের মধ্যে ঘুরে বেড়াতো। কয়েকজন তো বলেন-'তার পরে এত স্মার্ট এত হৃদয়কাড়া নায়ক আর আসেইনি'।

সালমানের মৃত্যুর সঠিক রহস্য আজো উদঘাটন হয়েছে কি? কোথায় যেনো পড়েছিলাম-'যেখানে গুণীর কদর কম সেখানে গুণী জন্মায় বেশি।' সেটা এ অঞ্চলের মানুষের সাময়িক উন্মাদনা, সময় গেলে বেমালুম ভুলে যাওয়া কিংবা গুণের কদরের অভাবে ঝরে যাওয়া কিংবা সঠিক গুণের কদর না কোরে তাকে অস্ত্রের কোপে ঝাঁঝরা করে দেয়াতেই বোঝা যায়।।

ভালো আছি, (তুমিও যেখানে থাকো) ভালো থেকো।

বিনয় ধর লিখেন,

সেই দিনটির কথা এখনো স্পষ্ট মনে আছে আমার। সেদিন সন্ধ্যায় আমরা বন্ধুরা কলেজিয়েট স্কুলের বারান্দায় আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ করে এক বন্ধু এসে বলল যে, "জানিস! নায়ক সালমান শাহ্‌ মারা গেছে। সে আত্মহত্যা করেছে খবরে বলল।" খবরটা শুনে আমরা বন্ধুরা প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না!

একজন নায়ক জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা অবস্থায় কিভাবে জীবনের প্রতি মায়া ছেড়ে আত্মহত্যা করতে পারে!

সেদিন আড্ডা আর জমে উঠেনি। সবার মন এতো বিষণ্ণ হয়ে ছিল যে আমরা বন্ধুরা আড্ডা ছেড়ে বাসায় চলে গিয়েছিলাম। আমি কোন সিনেমাই একবার কিংবা দুইবারের বেশি সিনেমা হলে গিয়ে দেখি নাই। কিন্তু মৌসুমি আর সালমান শাহ্‌-এর প্রথম ছবি "কেয়ামত থেকে কেয়ামত" হলে গিয়ে নয়বার দেখেছি।

আজ বিশ বৎসর পরে নায়ক সালমান শাহ্‌-কে স্মরণ করছি শ্রদ্ধাভরে...

উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালে তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‌‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মুক্তি পায়। এরপর থেকেই বাংলা চলচ্চিত্রে ভরসার প্রতিশব্দ হয়ে ওঠেন ক্ষণজন্মা এ নায়ক।

সালমান  শাহ অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো-
১৯৯৩
কেয়ামত থেকে কেয়ামত
১৯৯৪
তুমি আমার, অন্তরে অন্তরে, সুজন সখী, বিক্ষোভ, স্নেহ।
১৯৯৬
প্রেমযুদ্ধ, কন্যাদান, দেনমোহর, স্বপ্নের ঠিকানা, আঞ্জুমান, মহামিলন, আশা ভালোবাসা।
১৯৯৬
বিচার হবে, এই ঘর এই সংসার,  প্রিয়জন,  তোমাকে চাই,  স্বপ্নের পৃথিবী,  সত্যের মৃত্যু নেই,  জীবন সংসার,  মায়ের অধিকার,  চাওয়া থেকে পাওয়া,
১৯৯৭
 প্রেম পিয়াসী, স্বপ্নের নায়ক, শুধু তুমি, আনন্দ অশ্রু, বুকের ভেতর আগুন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত