রাজু আহমেদ

২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৩:১১

পচনের তলানিতে পৌঁছে গেছি?

শরীয়তপুরে ২১ মাসের শিশু ধর্ষিতা! ধর্ষক ১৮ বছরের তরুণ। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী টানা ৫দিন প্রেমিকের বাড়িতে অনশন শেষে সেখানেই বিষপানে আত্মহত্যা! প্রেমিকা বাড়িতে এসেছে শুনে প্রেমিকের বাড়ি থেকে পলায়ন। এসব জেনে খুব যত্ন করে বলতে ইচ্ছা করে, কর্ণ তুমি বধির হও, চোখ অন্ধ হও, মুখ মুক রও, অনুভূতি স্থূলতা দেখাও, বিবেক ঘুমাও নিরলে।

এর বাইরে কি বলার আছে? আর কতটা বলার যোগ্যতাই বা আমরা রাখি? একজন ১৮ বছরের তরুণের কাছে যখন ২১ মাসের শিশু নিরাপদ না হয় তখন চপেটাঘাত জুটে যায় তারুণ্যের ভালে। মোবাইলের প্রেম কতটা শক্তিশালী হলে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন করতে পারে প্রেমিকা?

সমাজ সংস্কারকরা একবাক্যে বলে দেবেন এগুলো বিচ্ছিন্ন ব্যাপার। আর কতগুলো শিশু ধর্ষিতার ভাগ্যবরণ, আত্মহত্যা করলে সেগুলো নিয়ে ভাবনার সময় আসবে তা বোধহয় কোনদিন নির্ধারিত হবেনা।

সমাজ সংস্কারকরা যুক্তি-পাল্টা যুক্তির খেলা খেলবেন অথচ সমস্যার মূল তলিয়ে দেখবেন না একবারও।

কিসের কারণে আজ সমাজ এমন ব্যাধিতে রুগ্ন হলো তা প্রকাশ করার ভার কার? সবাই শাস্তি চেয়ে চিৎকার করে যাবো কিন্তু শাস্তি কি অপরাধ কমাতে সক্ষম? যেসব আনুষঙ্গিক উপসর্গ তারুণ্যকে বিপথে টানলো সেসব উপলক্ষণের মনোদৈহিক চিকিৎসার ভার কে নেবে? কে তারুণ্যকে উপহার দেবে সুস্থ সংস্কৃতি? নৈতিক শিক্ষা দ্বারা এ জাতিকে আবারও উজ্জীবিত করবে কে?

স্বার্থ হাসিলের অন্ধ খেলায় যখন গোটা সমাজ মগ্ন তখন কে এগিয়ে আসবে সমাজের সকল অসুস্থতা দূরীকরণের তীব্র বাসনা নিয়ে?

চারদিকে যা শুরু হয়েছে তাতে ২১ মাসের কেন ২১ দিন কিংবা ২১ ঘণ্টার কেউ ধর্ষিত-ধর্ষিতা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে কি?

চারদিকে চরমভাবে ভাঙ্গনের খেলা চলছে। সমাজনীতি, রাজনীতির সাথে ধস নেমেছে মানুষের বিবেকবোধেও। ন্যায়-অন্যায়, নৈতিকতা-অনৈতিকতা, ঔচিত্য-অনৈচিত্যের ভেদ ধরিয়ে দিয়ে সুপথে চলার আদেশ এবং বিপথ পরিহার কার নিষেধ করার মত যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতি তরুণ প্রজন্মকে তলাচ্ছে খুব।

পরের মা-বোনের চেয়ে নিজের মা-বোন আজ বেশি অ-নিরাপত্তায় ভুগছে আপনদের দ্বারা। সর্বত্র কেবল কলুষতার ঘনঘটা শুরু হয়েছে। লাগাম টানতে না পারলে আমাদের ভুগতে হবে বহু।

আর্থিক ধস কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা মানুষের আছে কিন্তু চারিত্রিক ধস শুরু হলে পঙ্গুত্ব বরণ করবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। একবার ভাবুন, ভেবে জাগুন। মানুষ হতে না পারলে আমাদের পচনের গন্ধ বের হবে না হয়ত কিন্তু আমাদের সৃষ্ট ক্ষত দহন করবে গোটা সমাজকে।

দিনে দিনে তলিয়ে যাবো অন্ধকারের অতল গহ্বরে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত