সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

০৯ অক্টোবর, ২০১৬ ১২:৩৮

রবি’র জানালা মোছার বিজ্ঞাপন নিয়ে সমালোচনা, আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের স্পন্সর মোবাইল অপারেটর রবির একটা বিজ্ঞাপন বেশ সমালোচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের পতাকার রঙের এক টি-শার্ট দিয়ে জানালা মোছার কারণে অনেকেই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপনটি বাংলাদেশ-ইংল্যান্ডের চলমান ক্রিকেট সিরিজের সময়ে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বারবার দেখানো হচ্ছে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ ফেসবুকে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় লিখেন-

লালসবুজের পতাকা দিয়ে জানালার গ্রিল মোছা যায় এই ভাবনা, ভাবনার চিত্রনাট্য, পরিচালক, অভিনেতা, ক্যামেরাকর্মী, বিজ্ঞাপন সংস্থা, সামগ্রীটির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর যে যে এই কাজটির সাথে যুক্ত ছিল তাদের সবার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবী জানাই।

আরেকটা কথা। আপনারা যারা এসব ভাবনা নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছেন। ওখানেই থেমে যান। এসব বিকৃত ভাবনা বিকাশের সময় এখনও আসে নাই। আমরা এখনও বেঁচে আছি।


লেখক আরিফ রহমান ফেসবুকে লিখেন-

রবির পতাকা দিয়ে জানালা মোছার বিজ্ঞাপনটা আমাদের সমাজের দেউলিয়াত্ত্বের প্রমাণ। দেশপ্রেম আমরা আনুষ্ঠানিকতা দিয়ে বুঝি। আমাদের পতাকার অবমাননা ঠেকাতে আইন করতে হয়। দেশপ্রেম আমরা বুক দিয়ে বুঝি না, কলিজা দিয়ে বুঝি না।

শহীদ বুদ্ধিজীবী চক্ষু বিশেষজ্ঞ ড. আলীম চৌধুরীর কন্যা ডাক্তার নুজহাত চৌধুরীর একটা বক্তব্য আমার কাছে সেইভ করা আছে, আমি মাঝেমাঝে শুনি। উনি কথা বলছেন... আর বাচ্চা মেয়েদের মত কাঁদছেন... কাঁদতে কাঁদতে বলছেন- জাতীয় পতাকার যেই লাল বৃত্ত সেখানে নাকি তাঁর বাবার একটু খানি রক্ত লেগে আছে। কথা বলতে বলতে এই মহিলা বাচ্চাদের মত কাঁদছেন, কাঁদছেন, কেঁদেই চলছেন।

শহীদ সুরকার আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদের একটা লেখা বারবার খুঁজে খুঁজে পড়ি। দুটো লাইন আছে এমন- "আমি চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাই দীর্ঘদেহী আলতাফ নুয়ে পড়ে টিনের থালায় ভাত আর পেঁপে ভাজিতে কাঁচা মরিচ মাখিয়ে লোকমা তুলে তৃপ্তি করে খাচ্ছে। কপালের চামড়া বেয়োনেটের আঘাতে ঝুলে আছে, প্রচণ্ড জ্বরের ঘোরে খোলা মুখের সামনের পাটির দাঁতগুলো ভাঙ্গা।
শেষবারের মত সবাইকে নিয়ে ভাত খাচ্ছে আলতাফ-
হাতের আঙ্গুলে জমে থাকা রক্ত দিয়ে সাদা ভাত লাল, সাথে সবুজ কাঁচা মরিচ..."

ভাগীরথীর দুই পা দুটো জিপে বেঁধে বিপরীত দিক দেয়ে চালিয়ে দেয়া হয়। দ্বিখণ্ডিত হয়ে পড়ে তাঁর দেহ। ধুলোর সাথে মিশে যায় তাঁর শরীর। কি অকল্পনীয় যন্ত্রণা!! ভাবা যায়!!!
ড. এম এ হাসানের যুদ্ধ ও নারী গ্রন্থে নীলফামারীর বিনোদ কুমার সাক্ষ্য দিয়েছেন- "...ধোপা যেভাবে কাপড় কাচে সেভাবে রেললাইনের ওপর মাথা আছড়ে, কখনও দু'পা ধরে টান দিয়ে ছিঁড়ে দু'টুকরা করে হত্যা করেছে শিশুদের। স্বাধীনতার অনেকদিন পরেও সেখানে মহিলাদের কাপড়, ক্লিপ, চুল, চুলের খোঁপা ইত্যাদি পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেখান থেকে আমি আমার ছোট বোনের ফ্রকের এক টুকরো কাপড় খুঁজে পাই..."

আইন করে জাতীয় পতাকার সম্মান দেয়া যায় না রে পাগলা, সম্মান কলিজা থেকে আসতে হয়...

আইনজীবী রাজেশ পাল ফেসবুকে লিখেন-

রবির বিজ্ঞাপনটির কথা শুনেছিলাম, আজ দেখলাম। মানসিকভাবে ঠিক কতটা নিম্নরুচির হলে কোন দেশের মানুষ তার নিজের দেশের পতাকা দিয়ে জানালা মোছার বিজ্ঞাপন বানাতে পারে, সেই বিজ্ঞাপন আবার মিডিয়া প্রচার করতে পারে, আর প্রচার করার পরেও কিভাবে এতক্ষণ জেলের বাইরে মুক্ত হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিতে পারে, তা এই অধমের ক্ষুদ্র জ্ঞানে বোধগম্য হলো না বলে আমি নিজেই আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

হায়দার হোসেনের গানটা একটু পরিবর্তন করে গাইতে ইচ্ছে হয়,
"কি দেখার কথা কি দেখছি, কি শোনার কথা কি শুনছি,
চার দশক পরে পতাকা দিয়ে, জানালার কাচ মুছছি"

লেখক সৌমিত জয়দ্বীপ ফেসবুকে লিখেন,

আমার দেশ, আমার পতাকা, আমার জাতীয় সঙ্গীত, আমার দিবস, আমার দেশপ্রেম নিয়ে বিদেশি কর্পোরেটদের ব্যবসা বন্ধ করতে দেশে কোন সরকার নেই!
~ আমি জনগণ, অনুচ্ছেদ ৭(১) অনুযায়ী রাষ্ট্রের মালিক।
'জাতীয় পতাকা বা জাতীয় পতাকাখচিত পোশাক দিয়ে জানালা মোছা'র এক দুর্লভ অথচ দুর্বল বিজ্ঞাপন করেছে রবি। দেখিয়েছে দেশপ্রেম! এই দুঃসাহস তারা কোথায় পেল? কারা তাদের অনুমতি দিল?

রবি বিসিবি পরিচালিত ক্রিকেট কিনেছে, জনগণ পরিচালিত বাংলাদেশ কেনেনি, এটা যেন তাদের হুশে থাকে!

আপনার মন্তব্য

আলোচিত