শাকিল মাহমুদ

২৬ ফেব্রুয়ারি , ২০১৭ ০৩:২৫

অভিজিৎরা হারলে হেরে যাবে বাংলাদেশ!

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এবার কিছু বই কিনলাম হুমায়ুন আজাদ, তসলিমা নাসরিনের বেশ কয়েকটা বই সংগ্রহ করেছি। এছাড়াও পরিচিত, অপরিচিত অনেক লেখক, কবি'র বই-ই সংগ্রহ করেছি যথা সাধ্য। এক বেলা না খেয়ে ২০০ টাকা বাঁচিয়েছি কিংবা গুলশান থেকে হেঁটে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান গিয়েছি এবং আবার হেটে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান থেকে হেটে গুলশান এসেছি। এতে করে যে টাকা বেঁচেছে তা দিয়ে বই কিনেছি। বন্ধু মহলের দু-একজনকে উপহারও দিয়েছি।

আমি চাই বই সবাই পড়ুক, যা পড়ে অহরহ তারাও এবং যাদের বই পড়ায় অনীহা তারাও। আমি চাই মানুষ সত্যিকার অর্থে পাঠক হোক, মুক্তচিন্তা করতে বই পড়ুক।

এবার আসি আসল কথা। হুমায়ুন আজাদ, তসলিমা নাসরিন সহ অন্যান্যদের সাথে এবার চেয়েছিলাম অভিজিৎ রায়ের কিছু বই সংগ্রহে রাখতে। তাই একদিন মেলা প্রাঙ্গণে জাগৃতি প্রকাশনীর স্টলে গেলাম যে প্রকাশনা হতে অভিজিৎ রায়ের মূল্যবান বেশ কয়েকটা বই প্রকাশ করা হয়েছে। তো যাই হোক, জাগৃতির স্টলে গিয়ে খুঁজতে লাগলাম, কিন্তু ডিসপ্লেতে কোথাও অভিজিৎ রায়ের কোন বইয়ের হদিস পেলাম না। কিন্তু হতাশ হলাম না।

অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশের ফলে মৌলবাদীরা জাগৃতির সত্ত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপনকে জাগৃতির অফিসে কুপিয়ে খুন করেছে। হয়তো কোন প্রকার অঘটন যাতে না ঘটে সে কারণে অভিজিৎ রায়ের বই ডিসপ্লে করা হয় নি। হয়তো লুকিয়ে কোথাও রাখা হয়েছে। পাঠক চাইলেই পাবে। তো এ আশা নিয়ে যখন স্টলে কর্মরত একজনকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম,
- ভাই অভিজিৎ রায়ের বই আছে?
তখন স্টলে কর্মরত লোকটি এমন প্রতিক্রিয়া দেখালো যে অভিজিৎ রায় একজন রাষ্ট্রদ্রোহী কেউ এবং আমি তার মত এক রাষ্ট্রদ্রোহীর বই চেয়ে মহা অপরাধ করেছি ও ঘোরতর পাপ করেছি।

আমি আশ্চর্য হলাম যে প্রকাশনার পূর্ব সত্ত্বাধিকারী দীপন অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশের ফলে খুন হলো সে প্রকাশনার বর্তমান সত্ত্বাধিকারী কিভাবে মৌলবাদের পদতলে মাথা নুইয়ে জলাঞ্জলি দিলো সব চিন্তা-চেতনা, আদর্শ!(?)

অভিজিৎ রায়রা হারলে হারবে বাংলাদেশ! অভিজিৎ রায়রা কি হেরে যায় নি? যেখা দীর্ঘ একটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও অগোচরে অভিজিৎ রায়ের খুনিরা, মৌলবাদের ভয়ে চুপসে গিয়ে বই বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে জাগৃতি সেখানে কিভাবে এখনও বলি অভিজিৎরা হারে নি বা তাদের হারিয়ে দেয়া হয় নি!(?)

আমরা আজ প্রতি নিয়ত হারছি। কখনও মৌলবাদের চাপাতির কোপে, কখনও রাষ্ট্রের ব্ল্যাসফেমি ৫৭ ধারা নামক আইনের কাছে। এরপরেও কি বলবো, মৌলবাদীরা জয়ী নয়!(?) অভিজিৎরা হারে নি, বাংলাদেশ হারে নি!(?)

নতজানু হয়ে মৌলবাদের চাপাতি ও রাষ্ট্রের ব্ল্যাসফেমি ৫৭ ধারার কাছে আজ অভিজিৎদের আদর্শ, মুক্তচিন্তা সপে দেয়া হয়েছে। জোর করে অভিজিৎদের, বাংলাদেশকে হারিয়ে জয়োল্লাসের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে মৌলবাদী খুনিদের, ৫৭ ধারা জারিকারীদের।

সুতরাং হতাশ হয়ে আজ বলতে হচ্ছে, অভিজিৎরা হারে না কিন্তু জোর করে তাদের হারিয়ে দেয়া হয়, হারিয়ে দেয়া হয় বাংলাদেশকে। জলাঞ্জলি দেয়া হয় মুক্তচিন্তাকে, মুক্তচিন্তার পথকে অবরুদ্ধ করে দিয়ে জয়োল্লাস করার সুযোগ দেয়া হয় মৌলবাদী ও ৫৭ ধারা জারিকারীদের।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত