আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল

২০ আগস্ট, ২০১৭ ১৬:৪৩

প্রধান বিচারপতি কি রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন?

আজ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা পাকিস্তানের কাছ থেকে পরিপক্বতার শিক্ষা নিতে বললেন। তার ভাষায়, “পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে ইয়ে করেছেন। সেখানে কিছুই হয়নি। আমাদের আরও পরিপক্বতা দরকার।”

তিনি এসব বললেন ষোড়শ সংশোধনী প্রসঙ্গে।

একটি মৌলিক বিষয় বোঝা দরকার। পাকিস্তান আমলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিকল্প হিসেবে আইয়ুব খান সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেছিল। লক্ষ্য ছিল নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার সামঞ্জস্য বিধান করা।

বিশ্বের সকল দেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ১৯৭২-এর সংবিধানে একে বাদ দিয়ে বিচার বিভাগ স্বাধীন করার বিধান করা হয়। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান পাকিস্তান প্রেমের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে সেই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনে বিচার বিভাগ স্বাধীন করার সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে বন্ধ করতে।

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পরই বিচার বিভাগ স্বাধীন করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। তারপর যদি বিচারপতিদের দায়বদ্ধতার স্থান হিসেবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলও রাখা হয় তাহলে তা গণতান্ত্রিক ধারাকে শুধু নষ্ট করবে না, সামরিক শাসনের মতো "বিচার বিভাগের রাষ্ট্র শাসন" নামে পৃথক একটি পাকি ডকট্রিনের সূচনা হবে।

পৃথিবীর কোনও গণতান্ত্রিক দেশে যা নেই সেই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে পাকিস্তানের উত্তরসূরিরা প্রতিষ্ঠা করতে পারে। স্বাধীনতার পক্ষের কেউ কিংবা রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কে জানে এমন কেউ এর পক্ষে অবস্থান নিতে পারে না। এই অবস্থান নিতে গিয়ে আজ প্রধান বিচারপতি পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত রাষ্ট্রপতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন!

তার আগে বলার প্রয়োজন, বিচারপতিরা কি সবাই দুধে ধোঁয়া?

বিচারপতিরা স্বপ্রণোদিত হয়ে জাতির পিতার হত্যা নিয়ে কিছু তো করেন নি বরং বিচারে বিব্রতবোধ করে অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে! তারা জেল হত্যাকাণ্ড নিয়ে কিছু বলেনি! বলেনি ২১ আগস্ট নিয়ে! স্বৈরশাসকদের বিরোধিতা দূরের কথা, সরাসরি তাদের দোসর হতেও তাদের বিবেক বাধা দেয়নি!

এরা কারা? আইনজীবীদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা খুব বেশি ইতিবাচক নয়। সামান্য গার্ডিয়ানশিপের মতো বিষয়ে এক বছরের বেশি সময় ধরে টাউট শ্রেণির উকিলরা যেভাবে হাইকোর্ট দেখায়, বলার মতো না! সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হাস্যকরভাবে আদালত অবমাননার মামলা হয় ৫৭ ধারায়! এমন দৃষ্টান্ত অগণিত! আদালতে মামলার পাহাড়। এই এডভোকেটরাই শুধু টাকার জন্য চোর, ডাকাত, খুনি, ধর্ষক সবার পক্ষে ওকালতি করে। এরাই একদিন বিচারপতি হয়ে জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে উঠে যাবে!
তদন্ত করতে চাইলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে!

পাকিস্তান ছাড়া ভারত, শ্রীলংকা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ সব দেশে বিচারপতিদের অন্যায়ের কারণে শাস্তি হয়েছে। সকল দেশে তাদের চূড়ান্ত জবাবদিহি সংসদের কাছে। কিন্তু বাংলাদেশকে হাঁটতে হবে পাকিস্তানের পথে?

মূল প্রসঙ্গে আসি। প্রধান বিচারপতির উপর আসলে মিডিয়ার ভূত চেপেছে। এ ভূত রাজনীতিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, এখন হাই কোর্টে পৌঁছেছে! মিডিয়ায় শিরোনাম হতে যেয়ে তিনি তার সীমারেখাকে অতিক্রম করে ফেলেছেন। ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর্যবেক্ষণে রাজনৈতিক মন্তব্য করে বাংলাদেশ ও সংসদকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। কলুষিত করা হয়েছে বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ স্থানকে।

আজ প্রধান বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনীর গেজেট প্রকাশ নিয়ে এটর্নি জেনারেলের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

কোনও রায়, আদেশ বা অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ করা সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রপতির এখতিয়ারভুক্ত। রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতির কাছে কোনভাবে দায়বদ্ধ নন।

প্রধান বিচারপতি গেজেট প্রকাশ নিয়ে এটর্নি জেনারেলকে বলেন, "আপনাকে নয়, আপনাদের বলছি - আপনি বলেন কবে কি হবে? ... আমরা বিচার বিভাগ ধৈর্য ধরছি, যথেষ্ট ধরছি।"

বলার অপেক্ষা রাখে না এ প্রশ্ন করা হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে এবং বাংলাদেশ সরকারকে। প্রধান বিচারপতি এই সরকারেরই নিযুক্ত একজন। ওয়াহাব মিঞা নামে যিনি আছেন, তাকে আমরা যুদ্ধাপরাধের রায়ের সময় চিনেছি। সরকারের উচিত এ দুজনকে ইমপিচ করা। ইমপিচ করার মতো যথেষ্ট গ্রাউন্ড রয়েছে। আমরা পাকিস্তানি ধারার গণতন্ত্র চাই না।

উল্লেখ্য, বিএনপির যারা এ নিয়ে অতি উৎসাহ দেখাচ্ছেন তারাও নিজের নাকই কাটছেন। আদালত জিয়ার শাসনামলকে অবৈধ ঘোষণা করে তার করা বিধান সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বহাল রেখেছ - এটা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড পলিসি।

  • আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল: সাবেক ছাত্রনেতা ও তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত