আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল

০৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ২০:৫২

শিরক কি খণ্ডকালীন ব্যবসার নাম?

১৯৯৯/২০০০ সালের দিকে শিখা চিরন্তন ও শিখা অনির্বাণের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হলো। মূর্তিপূজা ও অগ্নিপূজা বিরোধী ইনকিলাব। কওমি নেতারা ঘোষণা দিলেন যত প্রাণই যাক তারা দাবি থেকে সরবেন না। অতঃপর ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলো। খালেদা জিয়ার বাসা ও মুজিবনগরে জিয়ার ভাস্কর্য বসানো হলো। তৌহিদী জনতা তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে নির্বাচনী জনমত যখন আওয়ামী লীগের পক্ষে তখন শুরু হলো লালনের ভাস্কর্য বিরোধী আন্দোলন। আবার তারা ঘুমিয়ে গেলেন। ২০১০ সালে বিএনপির কার্যালয়ে জিয়ার ভাস্কর্য বসলো। কিন্তু তাদের মাঝে তৌহিদী চেতনা ফিরে এলো জাস্টিসিয়া ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের জন্য। মোল্লাদের এমন দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাবকে কী বলবেন? শিরক কি খণ্ডকালীন ব্যবসার নাম?

আমাদের মোল্লাদের দ্বৈতনীতির কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি;
১. শিরকের ভয় দেখিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছে এবং তাদের আপত্তি শুধু একটি ভাস্কর্য নিয়েই। ভাস্কর্যকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আপত্তিজনক মনে করলে সব ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলার দাবি জানানোর কথা। তারা তা করছে না। অর্থাৎ তারা অঘোষিত ঘোষণা দিচ্ছে যে দেশের অন্যান্য ভাস্কর্য হালাল।

২. মামুনুল হক ভাস্কর্য সম্পর্কে হাদিস বলার সময় আরবিতে "তাসবীরুন" পড়ে বাংলা অনুবাদে বলে মূর্তির কথা। তাসবীর মানে কি মূর্তি?

৩. কোরআনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে কারো পাপের বোঝা কেউ বহন করবে না। ভাস্কর্যের কারণে বঙ্গবন্ধুর আজাব হবে এটা ডাহা মিথ্যা কথা। কোনো দলিল দিয়েই এটা প্রমাণ করতে পারবে না। ভাস্কর্য মতপার্থক্যের বিষয় না হয়ে শিরক হলেও প্রযোজ্য হতো না। নুহ নবীর ছেলের জন্য কি তিনি দায়ী ছিলেন? সবচেয়ে বড় আজাব হয় মিথ্যার জন্য। তাই আজাব হলে মামুনুল হকের মিথ্যার কারণে আজিজুল হকের হওয়ার কথা।

৪. যে হাদিসে মূর্তি ভাঙার কথা বলা হয়েছে সেখানে পাকা কবরের কথা কি বলা হয়নি? হুকুম কি আংশিক জারি হয়? এ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি কী?

৫. পুতুল জায়েজ এ সম্পর্কিত হাদিস বলে এক হুজুর বলেছেন, আম্মা আয়েশা তখন শিশু ছিলেন। শিশুদের জন্য পুতুল জায়েজ। এই মিথ্যাচার কি ইচ্ছাকৃত নাকি জানার অভাবে? হাদিসে বলা আছে তাবুকের যুদ্ধের কথা। তাবুকের সময় আম্মা আয়েশা শিশু ছিলেন? পুতুল জায়েজ হলে পুতুল তৈরি করবে কে? পুতুল তৈরি জায়েজ ঘোষণা আসবে কোথা থেকে?

৬. ভাস্কর্য সম্পর্কে মামুনুলদের বক্তব্য হচ্ছে, কোন দেশ কী করে তা আমাদের দেখার বিষয় না। আবার তিনিই ছবি জায়েজ প্রমাণের জন্য সৌদি ফতোয়ার উদাহরণ দেন। দেওবন্দের সুস্পষ্ট ফতোয়া হচ্ছে ছবি, ক্যামেরা, ভিডিও হারাম। সৌদি ফতোয়া গ্রহণ করলে তিনি কিভাবে হানাফি থাকেন? তিনি ইচ্ছামতো ফতোয়া গ্রহণ করতে পারলে, আমরা ভাস্কর্যের পক্ষে সৌদি, মিশর, ইন্দোনেশিয়ার মুফতিদের ফতোয়া গ্রহণ করলে আপত্তি কেন?

৭. ভাস্কর্য যে কারণে হারাম সেই কারণে পেইন্টিং কি হারাম নয়? পেইন্টিং এর ক্ষেত্রে ভাস্কর্যের চেয়ে কম গুনাহ হবে- এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবে? তাহলে শুধু ভাস্কর্যের কথা কেন? ঈমান ঠিক থাকলে তো পেইন্টিং এর বিরুদ্ধেও ফতোয়া দেয়ার কথা।

৮. জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে মামুনুল হক বলেন, জাতীয়ভাবে জিয়ার ভাস্কর্যের কথা জানেন না। জাতীয় শিরক কোনটি, আর আন্তর্জাতিক শিরক কোনটি? বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য শিরক হলে অপরাজেয় বাংলা কি সোওয়াবের? মোল্লাদের ফতোয়া কি শুধু বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়?

যে কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছি এমন অনেক প্রশ্ন তোলা যায়। মোল্লারা তৌহিদী চেতনা থেকে আন্দোলন করছে এমন মনে করার মতো ক্ষেত্র তারা তৈরি করতে পারে নি। কোনো মুমিন দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করতে পারে না। মামুনুল হকসহ এই ইস্যুতে সোচ্চার মোল্লারা যদি সত্যিকারের মুসলিম হন, তাহলে তারা নিশ্চয়ই সকল ভাস্কর্য, পেইন্টিং, ছবি, ভিডিও ইত্যাদিকেও নাজায়েজ ঘোষণা দেবেন। এগুলো নাজায়েজ, কিন্তু নাচ, গান, নাটক, সিনেমা চলে কিভাবে? দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে তারা এগুলো নিয়েও ফতোয়া দেবেন বলে আশা রাখি। মদ, বার, ব্যাংক এগুলো কী করবেন? জায়েজ ঘোষণা দিয়েছেন? নারীদের হিজাব? এগুলোর কোনোটাই যেহেতু পারবেন না, তাহলে অফ যান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত