নিউজ ডেস্ক

২৯ জানুয়ারি, ২০১৫ ০২:৩৯

টানা অবরোধে অচল হয়ে পড়েছে শিক্ষাব্যবস্থা!

টানা অবরোধের কারণে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষার বিদ্যাপিঠগুলোতে এখন ক্লাস পরীক্ষা অনিয়মিত। একের পর এক পরীক্ষা স্থগিত হচ্ছে। আর বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা হচ্ছে না। 

একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধের কারণ দেখিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরীক্ষা একের পর এক স্থগিত করা হচ্ছে। আর বাকিগুলোর ক্লাস হলেও পরীক্ষা নিয়মিত হচ্ছে না। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজের ক্লাস হলেও শিক্ষার্থী উপস্থিতি খুবই নগণ্য।

হরতালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষকও ক্যাম্পাসে আসেন না। অবরোধের মধ্যে হরতাল আহ্বান করা হলেও ক্লাস পরীক্ষা উভয়ই বন্ধ থাকে। ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা দুইটিই অনিয়মিত। ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে কোর্স শেষ করা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। দীর্ঘ সেশনজটের কবলে পড়তে হবে শিক্ষার্থীদের।

অবরোধ ও হরতালের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্র নিহত হওয়া ও ক্যাম্পাসে ভাঙচুরের কারণে ১ মাস ৬ দিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। গত ৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও ৯ জানুয়ারি থেকে আবার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এই সময়ে অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল শতাধিক ক্লাস ও পরীক্ষা। আবাসিক হল খোলা থাকলে সহিংসতা হতে পারে—এমন আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।  

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বিভাগেই ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। ১ থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত শীতকালীন ছুটি শেষে ১২ জানুয়ারি ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। টানা অবরোধে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কারণে বিভিন্ন বর্ষের চলমান পরীক্ষা একের পর এক স্থগিত করা হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী সেশনজটের কবলে পড়বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরোধ চলাকালীন ক্লাস ও পরীক্ষা চললেও দুই দিনের হরতালে ক্লাস হয়নি, তবে বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রায় একশ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলের বাইরে খুব একটা বের হচ্ছে না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অবরোধে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও ক্লাস সংখ্যা এবং শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে গেছে। হরতালের কারণে দুইদিন বন্ধ ছিল শাটল ট্রেন। এ কারণে বিভিন্ন বিভাগে একাধিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করছে তাদের মধ্যে শঙ্কা রয়েই গেছে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরোধে কোন গাড়ি চলছে না। ভাড়া করা ১১টা গাড়ি শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আনা নেয়া করতো; কিন্তু অবরোধে এগুলো বন্ধ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি নিজস্ব গাড়ি রয়েছে। এ গাড়ি দুইটি ক্যাম্পাসের বাইরে বের হচ্ছে না। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী আনা নেয়া করা যাচ্ছে না। যারা ক্যাম্পাসে আসছে তারা নিজ উদ্যোগে আসছে। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি বিভাগের মধ্যে অধিকাংশ বিভাগে ক্লাস পরীক্ষা অনিয়মিত, উপস্থিতিও নগণ্য। লোক প্রশাসন বিভাগের একটি পরীক্ষা নভেম্বরে হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত পরীক্ষা নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) ক্লাস পরীক্ষা নিয়মিত হলেও অবরোধে কমে গেছে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি। রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক বিভাগ স্বাভাবিক থাকলেও অনেকটাই শিক্ষার্থী শূন্য। ক্লাস পরীক্ষা অনিয়মিত।

ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহন ক্যাম্পাসের বাইরে আসা-যাওয়া করে না। যেসব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাইরে থাকে তারা নিজ উদ্যোগে ক্যাম্পাসে আসে।

অন্যদিকে অব্যাহত হরতাল-অবরোধের মুখে আগামী সপ্তাহে দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হওয়ার কথা। পূর্ব নির্ধারিত এই পরীক্ষা আগামী ২ ফেব্রুয়ারি হওয়ার কথা। শিক্ষামন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে অনড়। তবে শিক্ষামন্ত্রী বুধবার বলেছেন, পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে অবরোধ অন্তরায়। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। এরকম বাস্তবতায় বৃহস্পতিবার সকল শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানদের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন শিক্ষামন্ত্রী। এই বৈঠকেই চূড়ান্ত হবে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়।

আগামী ২ ফেব্রুয়ারি সোমবার শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। শেষ হবে ১০ মার্চ। এরপর ১১ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত চলবে ব্যবহারিক পরীক্ষা। ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর খাতা দেখে ফল প্রস্তুত করতে তিন মাস লাগবে। সে ক্ষেত্রে যথাসময়ে পরীক্ষা শেষ হলেই জুনের শেষ সপ্তাহে ফল প্রকাশ করা সম্ভব। শিক্ষাবর্ষ অনুসারে, ১ জুলাই থেকে এইচএসসি প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আবার এপ্রিলের শুরু থেকেই এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। ফলে মন্ত্রণালয় যথাসময়ে পরীক্ষা শেষ করতে বদ্ধপরিকর।

আগামী এপ্রিল থেকে শুরু হবে এইচএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতির সময় এখন। যথাসময়ে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে না পারলে এইচএসসি পরীক্ষাও যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে না। ফলে এর প্রভাব পড়বে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ওপরও।



আপনার মন্তব্য

আলোচিত