রাবি প্রতিনিধি

০৩ জুলাই, ২০১৮ ১৬:০০

রাবিতে শিক্ষকের ‘নীরব প্রতিবাদে বাধা’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও লাঞ্ছনার প্রতিবাদে এক শিক্ষককে ‘নগ্নপদে নীরব প্রতিবাদ’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে না দেওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।

মঙ্গলবার (৩ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করে। পরে পুলিশ ও প্রক্টর অবস্থানকারীদের সরিয়ে দেয়।

এদিন সকাল সাড়ে ৮টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘নগ্নপায়ে প্রতিবাদ জানানোর’ স্ট্যাটাস দেন অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহা. ফরিদ উদ্দিন খান।

তার স্ট্যাটাসটি হল- “দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং লাঞ্ছনার প্রতিবাদে আজ (মঙ্গলবার) আমি নগ্নপদে অফিসে যাব। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জোহা স্যারের মাজারে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করবো। খালি হাতে, নগ্নপায়ে এবং নীরবে যে কেউ যোগদান করতে পারেন। কোন স্লোগান না, ফেস্টুন না, বক্তৃতা না, না কোনো রাজনীতি। এই নগ্নপায়ে নীরব প্রতিবাদ বোঝাবে আমরা আর সভ্য সমাজের নাগরিক নয় যেখানে বাকস্বাধীনতা আছে সেখানে ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদের সুযোগ আছে।”

পরে অক্ট্রয় মোড়ে অবস্থিত বাসভবন থেকে খালি পায়ে অফিসে আসেন। কিন্তু অফিস আসার পরে স্ট্যাটাসে উল্লেখিত পূর্বঘোষিত জোহা চত্বরে অবস্থান কর্মসূচিতে আসার প্রস্তুতি নিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ বিভাগের শিক্ষকরা ওই শিক্ষকের নিজস্ব চেম্বারে অবস্থান করেন এবং তিনি আসতে পারেননি।

সংবাদকর্মীরা ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক কেবিএম মাহবুবুর রহমান বলেন, “তাকে যেতে দিতে পারছি না। আমাদের অধিকার আছে তাকে বাধা দেওয়ার। তার ঝুঁকির কথা বিবেচনা করেই তাকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। এ সময় ফরিদ উদ্দিন বলেন, “স্যার আমাকে পাঁচ মিনিটের জন্য যেতে দেন”।

তবে সেখানে উপস্থিত সংবাদকর্মীরা ওই শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে ফরিদ উদ্দিন কোনো মন্তব্য করেননি।

তবে ফরিদ উদ্দিনের আহ্বানে বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় জোহা চত্বরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব, রায়হানা শামস ইসলাম, ফার্মেসী বিভাগের অধ্যাপক বায়তুল মোকাদ্দেছুর রহমান ও আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ। এ সময় চারপাশ থেকে শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হতে থাকে।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রশাসনের অনুরোধে শিক্ষকরা চলে গেলেও শিক্ষার্থীরা অবস্থান চালিয়ে যান। পরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে প্রক্টর ও পুলিশ শিক্ষার্থীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।

অবস্থানকারী একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, “যে বিশ্ববিদ্যালয়ে জোহা স্যারের রক্ত মিশে আছে, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা, আমরা শিক্ষার্থীরা কোনোভাবে মেনে নিব না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর যেভাবে হামলা করা হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তার প্রতিবাদে আমরা এই কর্মসূচি পালন করছি। হামলাকারীদের বিচার ও কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”

তারা বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরিদ খান নামের অর্থনীতি বিভাগের একজন শিক্ষক রাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা প্রতিবাদে আজ নীরব প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলেন। তিনি নগ্নপায়ে জোহা চত্বরে এসে এক ঘন্টা নীরবতা পালন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে বিভাগের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আসতে দেয়নি। আমরা এ ঘটনারও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি না আসা পর্যন্ত আমরা প্রশাসন ভবনের সামনেই অবস্থান করব।”

পরে মুঠোফোনে ড. মোহা. ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, “আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম যাওয়ার জন্য। কিন্তু বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক ও প্রশাসনের অনুরোধে যেতে পারিনি। সবকিছু বিবেচনা করে বুঝেছি আমার জন্য, আমার শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো হবে বলেই যেতে পারলাম না। এজন্য আমি খুবই লজ্জিত।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান তখন সেখানে সাংবাদিকদের বলেন, “কয়েক জন শিক্ষক বলেছেন যে গতকালকের ঘটনায় আমরা তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করার জন্য এখানে দাঁড়িয়েছি। তারপরে ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর তারা চলে যান। কিন্তু কিছু শিক্ষার্থী এটাকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার জন্য এখানে অবস্থান করে। এখন তারা সবাই চলে গেছে। পরিস্থিতি ভালো আছে।”

ফরিদ স্যারকে আসতে না দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “ তাকে আসতে বাধা দেইনি আমরা। তাকে বুঝিয়েছি যে, তার যদি খারাপ লাগে তবে তিনি যেনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেন।”

এর আগে রোববার ও সোমবার কোটা সংস্কারকারীদের ওপর হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এর মধ্যে সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের রাবি শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম তারেক গুরুতর আহত হন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত