শাবি প্রতিনিধি

১৬ মে, ২০১৯ ১৩:১৮

লম্বা ছুটিতে হল বন্ধ রাখবে শাবি প্রশাসন

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদ-উল-ফিতরের ছুটির মধ্যে আবারও হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গত তিন বছর ধরে বিভিন্ন বন্ধে ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিতিশীলতার কথা বলে হল বন্ধ রেখে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

প্রতিবছর সাময়িকভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে হল বন্ধ করা হলেও এখন থেকে বড় বড় সকল ছুটিতে হল বন্ধ রাখা হবে বলে জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট হাসান জাকিরুল ইসলাম।

রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এবার গ্রীষ্মকালীন ছুটি, শবে-কদর ও ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ১৫ মে থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত সকল একাডেমিক এবং ২২ মে থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত সকল অফিস কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

আর প্রভোস্ট হাসান জাকিরুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ একমাসের ছুটির মধ্যে ২৪ মে থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত ছেলে ও মেয়েদের সকল আবাসিক হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

হল বন্ধ রাখার ‘যৌক্তিক কারণ’ তার ভাষায় ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এখন থেকে প্রতি বড় বড় ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল বন্ধ রাখা হবে। অবশ্যই এর যৌক্তিক কারণ আছে। বন্ধের সময় কারা হলের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে? অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হলে কারা সামাল দিবে?

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি নাযিরুল আযম বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটির সময় হল বন্ধ থাকতে পারেনা। শিক্ষার্থীরা চাইলে হলে থাকতে পারবে। পড়াশোনা করতে পারবে। এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।

শিক্ষার্থীদের এমন দাবির বিপরীতে গিয়ে কী কারণে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো এমন প্রশ্নে প্রভোস্ট হাসান জাকিরুল ইসলাম বলেন, বন্ধের সময় সবাইকে বাড়ি যেতে হয়। আমরাও বাড়ি যাই। কীভাবে আমরা হল খোলা রেখে বাড়ি যাই? তাছাড়া হলেও তেমন শিক্ষার্থীরা থাকে না। তাই আমরা এখন থেকে হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

হল বন্ধ করতে হলে সিন্ডিকেট থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে হয়। এবারের হল বন্ধের সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেট থেকে নেওয়া কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রারের সাথে হলের প্রভোস্টদের মিটিং-এ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সিন্ডিকেট ছাড়া হল বন্ধের এ সিদ্ধান্তকে অনৈতিক বলে দাবি করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিচালনার সাথে জড়িত এক শিক্ষক জানান, সিন্ডিকেট ছাড়া হল বন্ধের কোন নিয়ম নেই। বিশেষ প্রয়োজনে যদি বন্ধ করতে হয় জরুরি ভিত্তিতে সিন্ডিকেট ডেকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এছাড়া হল কোন কারণ ছাড়া বন্ধ হবে কেন? শিক্ষার্থীরা চাইলে হলে থাকতে পারবে, পড়াশোনা করবে এটাই নিয়ম। কিন্তু এখন হল বন্ধের নাম করে হল ভেকেন্ট করে দেওয়া হয়।

এভাবে হল বন্ধের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কি দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসছে এমন প্রশ্নে হাসান জাকিরুল ইসলাম বলেন, হ্যাঁ, কারণ আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থিতিশীল পরিবেশ চাই।

গেল তিন বছরে বিভিন্ন ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হল বন্ধ রাখলেও তার প্রতিবাদ করেছেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল করে তারা হল খোলা রাখার দাবি জানিয়েছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রোপেল চাকমা বলেন, আমরা প্রতিবারই হল বন্ধের প্রতিবাদ জানাই। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবি উপেক্ষা করে প্রতিবারই হল বন্ধ করা হয়। অনেকে আছে হলে থাকতে চায়, পড়তে চায়, টিউশনির বেতন পায় না, তাদের দায়িত্বকে নেবে?

রোপেল বলেন, নিরাপত্তার কথা বলে হল বন্ধ করে দেওয়া হয়, কিন্তু এই নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব কার? এই দায়িত্ব হল প্রশাসনের, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলনে নামব।

তবে এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে প্রশাসন যা ভালো মনে করে, তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। তবে যাতে তারা শিক্ষার্থীর স্বার্থবিরোধী কোন সিদ্ধান্ত না নেয়।

হল বন্ধের বিষয়টি কি শিক্ষার্থীর স্বার্থবিরোধী নয় এমন প্রশ্নের জবাবে রুহুল বলেন, এক্ষেত্রে যারা হলে থাকতে চায়, তারা হল প্রভোস্টেও কাছে অ্যাপ্লিকেশন করে থাকতে পারে। প্রভোস্ট সেটা বিবেচনা করতে দেখতে পারেন।


আপনার মন্তব্য

আলোচিত