শাবি প্রতিনিধি

২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৮:৪৮

শাবি উপাচার্যের ‘অপকর্মের শ্বেতপত্র’ প্রকাশ

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ৫৩  ‘অপকর্মে’র বেনামি শ্বেতপত্র প্রকাশ হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগ সম্বলিত ‘শাবিপ্রবির বর্তমান উপাচার্যের বিভিন্ন অপকর্মের শ্বেতপত্র’ শিরোনামে এই শ্বেতপত্রটি কে বা কারা প্রকাশ করেছে তা জানা যায়নি।

এদিকে এই বেনামী শ্বেতপত্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র বলে দাবি করছেন শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। রোববার শ্বেতপত্রের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।

এ শ্বেতপত্রে প্রচারক হিসেবে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার শাবিপ্রবির শিক্ষক-কর্মকর্তাবৃন্দ’নাম ব্যবহার করা হয়। শ্বেতপত্রের দ্বিতীয় কিস্তি প্রক্রিয়াধীন বলে হুমকিও প্রদান করা হয় শ্বেতপত্রের শেষে। ২৪ পৃষ্ঠার এ শ্বেতপত্রে উপাচার্যকে দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আর্থিক অনিয়ম, স্বৈরচারী আচরণ, হুমকি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও শাবিপ্রবিকে কুমিল্লায়ন করার প্রচেষ্টা।

শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে শাবিপ্রবি'র অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন ১ম, ২য়, ৩য় স্থান এবং সর্বোচ্চ সিজিপিএ (৩.৮৪)প্রাপ্ত শিক্ষার্থীকে নিয়োগ না দিয়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম, ৫০তম, ৬৩তম, ৭১তম হওয়া শিক্ষার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে ছাত্রলীগের মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে ক্যাম্পাস থেকে নানা ইস্যুতে বহিষ্কার করারও অভিযোগ আনা হয়।

এবিষয়ে শাবিপ্রবি উপাচার্য বলেন, শিক্ষক নিয়োগে ভালো শিক্ষকের বিষয়ে আমি কোন আপোষ করি নাই। এছাড়া ছাত্রলীগের ওই গ্রুপটির ধারাবাহিক বিশৃঙ্খলার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় নয়।

শ্বেতপত্রে আরেকটি অভিযোগ আনা হয়, উপাচার্যের একাডেমিক কাউন্সিল মিটিং ও সিন্ডিকেটে স্বৈরাচারী আচরণ। তবে উপাচার্য বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবার আছে। অভিযোগটি পুরোপুরি বানোয়াট।

বলা হয়েছে, ভিসি দু'বছর মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় অবকাঠামোর দৃশ্যমান কোন উন্নতি করতে পারেননি। শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা আরো বেশকিছু অভিযোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নজীরবিহীনভাবে বিভিন্ন বিচারপ্রার্থীকে সংখ্যালঘু হওয়ায় বিচারের পরিবর্তে শাস্তি প্রদান, শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ ২০১৮ এর ৬নং উপধারার ১০নং উপধারার ভয়ভীতি  প্রদর্শন, জোবাইক সেবার নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আত্মসাৎ করা, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অব ভাইস-চ্যান্সেলর'র (আইসিভিসি) নামে অর্থ আত্মসাৎ প্রমুখ।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারকে অপমান, প্রমোশন আপগ্রেডেশনে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ আনা হয় উপাচার্যের বিরুদ্ধে। শ্বেতপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়  বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্ট ভায়োলেশন, সিটিং অ্যালাউন্স দ্বিগুণ করার মাধ্যমে তহবিল হাতিয়ে নেয়ার অপকৌশল, পিএইচডি থিসিসের এক্সামিনার রিপোর্টের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা।

অন্যদিকে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসির দায়িত্বে আসার কথাও ব্যাপকভাবে প্রচার করেন বলে উল্লেখ করা হয়। এবং এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে বলেও শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

বেনামী শ্বেতপত্র নিয়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য মূলত এ শ্বেতপত্রটি প্রকাশ করা হয়েছে। একটি স্বার্থান্বেষী মহল আছে যারা চায় আমি যাতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে না থাকি।

তিনি আরো বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়কে আমি হৃদয়ে লালন করি, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন দুর্নীতি আমি থাকাকালীন অবস্থায় হতে দেব না। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও কোন স্বার্থ আমি লালন করি না। যারা এ গুজব ছড়ায় তারা হচ্ছে জ্ঞান পাপী।


আপনার মন্তব্য

আলোচিত