সিলেটটুডে ডেস্ক

০২ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০৫

‘আচ্ছা মা, তোমরা কয় টাকা দেওয়ার জন্য রেডি?’

চাকরি প্রত্যাশীর স্ত্রীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের অডিও ফাঁস

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপ-উপাচার্য (প্রোভিসি) অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়ার সঙ্গে এক চাকরি প্রত্যাশীর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস হয়েছে।

সোমবার রাতে ৫৫ সেকেন্ডের এ অডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কথোপকথনে কত টাকা দিতে প্রস্তুত, চাকরি প্রত্যাশীর স্ত্রীকে এমন প্রশ্ন করেন অধ্যাপক জাকারিয়া। এছাড়াও তিনি তাকে আশ্বস্ত করে বলেন- 'উপরে আল্লাহ তায়ালা আর নিচে আমি'। যদিও উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া মঙ্গলবার বিকালে এক বিবৃতিতে ফোনে কথা বলার কথা স্বীকার করলেও বলেছেন, ‘ওই অডিও এডিট করে গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে।’

অডিওতে আসা কথোপকথন তুলে ধরা হল-

উপ-উপাচার্য: হ্যাঁ, তুজ সাদিয়া। আমি প্রফেসর জাকারিয়া (চৌধুরী মো. জাকারিয়ার), প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর।

নুরুল হুদার স্ত্রী: আসসালামু আলাইকুম, স্যার।

উপ-উপাচার্য: ওয়ালাইকুমুস সালাম। আচ্ছা মা, একটা কথা বলতো, আমার খুব শুনতে

ইচ্ছা, তোমরা কয় টাকা দেওয়ার জন্য রেডি?

নুরুল হুদার স্ত্রী: স্যার, সত্যি কথা বলতে...

উপ-উপাচার্য : না না, সত্যি কথাই তো বলবা। উপরে আল্লাহ তায়ালা, নিচে আমি।

চাকরি প্রত্যাশীর স্ত্রী: অবশ্যই, অবশ্যই। স্যার, আপনি যেহেতু তার অবস্থা জানেন, আরেকটা বিষয় এখানে স্যার, সেটা হচ্ছে, আপনি হুদার... মানে, এমনিতে সে কতটা স্ট্রিক প্রিন্সিপালের..., আপনি বোধহয় এটাও জানেন স্যার, একটু রগচটা ছেলে।

উপ-উপাচার্য: আচ্ছা রাখো রাখো, এখান থেকে কথা বলা যাবে না।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলার মধ্যে গত নভেম্বরে ফোনালাপটি হলেও তা ফেসবুকে প্রকাশ হয়েছে সোমবার। ২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে তিনজন প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হয়। সেখানে প্রার্থী ছিলেন এই বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র নুরুল হুদা, যিনি স্নাতকে ৩.৬৫ ও স্নাতকোত্তরে ৩.৬০ সিজিপিএ পেয়ে প্রথম হয়েছিলেন। আইন অনুষদে সেরা ফল করায় ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক এবং ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন নুরুল হুদা। তার বাড়ি উপ-উপাচার্য জাকারিয়ার জেলা লালমনিরহাটে।

২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা হয়। পরে ১৭ নভেম্বর সিন্ডিকেট সভায় নির্বাচিতদের নিয়োগ অনুমোদিত হয় এবং পরদিন ১৮ নভেম্বর নিয়োগপ্রাপ্তরা বিভাগে যোগ দেন। নুরুল হুদা তাদের মধ্যে ছিলেন না। চাকরি পেয়েছিলেন উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার মেয়ের জামাই সাইমুন তুহিন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডুর মেয়ে নূর নুসরাত সুলতানা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী বনশ্রী রানী।

ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলার মধ্যেই নুরুল হুদার স্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী তুজ সাদিয়ার সঙ্গে উপ-উপাচার্যের ওই ফোনালাপ হয়েছিল বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে।

বিবৃতিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপ-উপাচার্য (প্রোভিসি) অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া বলেছেন, “নুরুল হুদা দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার ছাত্র জীবনের শুরু থেকে আমি স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে দেখভাল করছি। তার লেখাপড়া চলমান রাখতে তাকে দুটি স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে বিশ্বস্তসূত্রে জানতে পারি, নুরুল হুদা চাকরি পেতে অসাধু কিছু ব্যক্তির কবলে পড়ে আর্থিক লেনদেনে জড়িয়ে পড়েছে।

“নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে ইসলামী ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার একটি স্লিপও আমার নজরে আসে। স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে তার এহেন অসাধুকর্ম রোধে খোঁজ নেওয়ার জন্য তার স্ত্রীকে ফোন দিয়েছিলাম। কারণ হুদার স্ত্রীর বাড়ি সৈয়দপুরে। হুদার স্ত্রী সে সময় ব্যাংক লেনদেনের বিষয়টি স্বীকারও করে, তবে বিস্তারিত বলতে রাজি হয়নি।”

জানা যায়, নিয়োগ বোর্ডে ওই সময় ৫ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বোর্ডে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক জাকারিয়াও ছিলেন। এছাড়াও উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান, আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল হান্নান, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ডা. রুস্তম উদ্দিন আহমেদ ও এক্সপার্ট হিসেবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহজাহান মণ্ডল উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত