অনলাইন ডেস্ক

২৮ জুন, ২০১৮ ০১:৫৭

‘যারা খুনের হুমকি দেয় তারা কেউ বই পড়ে না’

নিজের লিখা ‘অভিশাপ’ কবিতার প্রসঙ্গে কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন ‘‘ওই কবিতার চেয়ে কড়া লেখা আমার বইতে আছে। আসলে যারা খুনের হুমকি দেয় তারা কেউ বই পড়ে না। তা হলে অনেকেই অনেক আগে খুন হয়ে যেত! ‘অভিশাপ’ কবিতাটা ফেসবুকে দেওয়া। লোকে তো শুধু ফেসবুক পড়ে!’’

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন শ্রীজাত।

আমাদের প্রাণ কি ফেসবুকে আটকে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীটা ফেসবুক নয়। এত বই ছাপা হচ্ছে। বইমেলায় আমি রোজ যাই বলে জানি, ভিড়ের জন্য অনেক স্টলের দরজা বন্ধ করে দিতে হয়। অনেক প্রকাশক চার-পাঁচ বছরেই বেস্ট সেলার বই প্রকাশ করছেন। এগুলো কী করে হচ্ছে?’

‘এই যে শুজাত বুখারিকে মেরে দেওয়া হল, তার আগে গৌরী লঙ্কেশ— এতে তো এক জন নাগরিক হিসেবে আমি অন্ধকারে ফিরে গেলাম আবার। কেননা, এই মানুষগুলো যা বিশ্বাস করতেন, আমিও তা বিশ্বাস করি। অথচ এঁদের বাঁচানোর কোনও ক্ষমতাই আমাদের নেই। তা হলে লিখে কী হবে? যেখানে পৃথিবীতে প্রত্যেক দিন অসংখ্য নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, বাকস্বাধীনতার গলা টিপে তাকে খুন করা হচ্ছে, সেখানে আপনি ডিপ্রেশনকে এড়াবেন কী ভাবে?’ বললেন শ্রীজাত।

‘আমি মনুষ্যত্ব ছাড়া কোনও ধর্ম মানি না’ এমন মন্তব্য করে সাক্ষাৎকারে শ্রীজাত বলেন, ‘চারপাশের এই ধ্বংস দেখতে দেখতে মনে হয়, অন্ধকারের পৃথিবীতে লিখে আর কী হবে? একটা সময়ে অবসাদের কারণেই লিখতে পারিনি অবশ্য।’

শুজাত বুখারিকে মারা যাওয়া স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘শুজাত বুখারি যখন মারা যান, আমি সেই মুহূর্তে শঙ্খবাবুর বাড়িতে, ওঁর সামনে বসে। ওঁর নাতনি সাম্পান দুঃসংবাদটা দেয়। খবরটা শোনার পর শঙ্খবাবুর মুখ দেখে বুঝলাম, উনি আমার চেয়ে অনেক, অনেক বেশি হতাশ। শঙ্খ ঘোষের যদি হতাশা আসে, আমার তো অবসাদে ডুবে মরে যাওয়া উচিত।’

বাইরের জগত ছাড়াও লেখার জন্য মন খারাপ হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রীজাত বলেন, ‘হয় বৈকি। যখন বুঝতে পারি, যে-লেখা লিখতে চাই, সে-লেখা আসছে না। ফেসবুকে একটা লেখার নীচে দশ হাজার লাইক আর পাঁচশো শেয়ার হতে পারে, কিন্তু তা দিয়ে তো আর বিচার হয় না, লেখকের নিজের মধ্যে লেখার চূড়ান্ত বিচারক থাকে। তার সামনে নিজের লেখাকে নিয়ে নগ্ন হয়ে দাঁড়াতে হয় রোজ। আর তখনই বুঝতে পারি, হচ্ছে না। চল্লিশ হাজার শব্দের একটা উপন্যাস ছেপে বই হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরেও তাকে ঘিরে অপূর্ণতার বোধ কাজ করে।’

শ্রীজাত বলেন, ‘লেখার বিষয় আমার হাতে আছে। কিন্তু কাল যদি কেউ আমায় মেরে ফেলে তা আমার হাতে নেই। আমাকেও তো এক সময়ে দেহরক্ষী নিয়ে ঘুরতে হয়েছে! আমি এক জন ছাপোষা লোক, সন্ধে হলে সেলিমপুরের মোড়ে দশ টাকার মুড়ি বরাদ্দ যার। তার পিছনেও একজন কোমরে পিস্তল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন, যাতে কেউ আমার কোনও ক্ষতি না করতে পারে। এর মধ্যে দিয়েও যেতে হয়েছে, একটা কবিতার জন্য।’

সাক্ষাৎকারে সাহানা বাজপেয়ী প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘যাদের ছোট থেকে বড় হতে দেখেছি, তাদের সাফল্যে ভাল লাগা আসে। সাহানা (বাজপেয়ী) যখন হাউস অব কমন্সে এক জন বাঙালি গাইয়ে হিসেবে মঞ্চে ওঠে, আমার গর্ব হয়।’

 

সূত্র:আনন্দবাজার পত্রিকা

আপনার মন্তব্য

আলোচিত