বিনোদন ডেস্ক

১৮ অক্টোবর, ২০১৮ ১৯:৪৩

জাতীয় সংগীতের সুর দিয়ে কনসার্ট শেষ করতেন আইয়ুব বাচ্চু

কনসার্ট শেষে আইয়ুব বাচ্চুর গিটারে বেজে উঠত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। গিটারটা সোজা করে ধরে মঞ্চের সামনে এসে গিটারে তুলতেন ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ সুর। সঙ্গে সঙ্গে গোটা কনসার্টের সমবেত মানুষ দাঁড়িয়ে গিয়ে গিটারের সুরের সঙ্গে গলা মেলাতেন। কনসার্টস্থলে তৈরি হতো এক অন্য রকম পরিবেশ।

২০১৪ সালের ২৭ মার্চ প্রথম আলোর পক্ষ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। গান তখন শেষ পর্যায়ে। আইয়ুব বাচ্চু তাঁর গিটারে তখন জাতীয় সংগীতের সুর তুললেন। আর এতেই তৈরি হয় অন্যরকম এক আবহ।

কিছুক্ষণ আগেও মঞ্চের সামনে থাকা ছেলেমেয়েরা যে উল্লাস করছিল, তখন তা থেমে যায়। সারা মাঠে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। কেউ কেউ আবার সেই সুরের সঙ্গে কণ্ঠ মেলাচ্ছেন।

আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে
ওমা আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালোবাসি।’...

মঞ্চ থেকে নেমে আইয়ুব বাচ্চু জানিয়েছিলেন, গত ২২ বছর বেশির ভাগ কনসার্টে জাতীয় সংগীতের স্থায়ী অংশটুকুর সুর বাজিয়ে পরিবেশনা শেষ করেছেন তিনি। হাতে সময় থাকলে শুধু স্থায়ী অংশটুকু নয়, পুরো জাতীয় সংগীত বাজান।

তিনি বলেছিলেন, ‘দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে এ কাজটা করছি। ব্যান্ডের গানের শ্রোতাদের বেশিরভাগই স্কুল–কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। নতুন প্রজন্মের এই ছেলেমেয়েদের মধ্যে আমরা এভাবেই দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তুলতে চাই।’

গীতিকবি লতিফুল ইসলাম শিবলী বলেন, ‘আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন বাংলাদেশের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর। তিন দশক ধরে তিনি দেশে তারুণ্যের প্রতীক ছিলেন। দেশে–বিদেশে যেখানে গেছেন, কনসার্ট শেষে তিনি দেশকে তুলে ধরতেন জাতীয় সংগীতের সুরে। এটা দেশপ্রেমের চূড়ান্ত বহি:প্রকাশ। এই ভিন্ন ধারার উপস্থাপনের জন্য তিনি সবার হৃদয়ের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন।’

শিল্পী ফাহমিদা নবী বলেন, ‘আইয়ুব বাচ্চুর দেশপ্রেম কতটা প্রবল ছিল, তা বোঝা যায় তাঁর কনসার্ট শেষে। গিটারের সুরে জাতীয়সংগীতকে তিনি নিয়ে গেছেন দেশ-দেশান্তরে। গভীর দেশপ্রেম না থাকলে একজন শিল্পী বড় হতে পারে না। তাঁর মধ্যে সেই দেশপ্রেম ছিল প্রবল। প্রত্যেকের ভেতর এমন দেশপ্রেম থাকা উচিত। আজ তিনি মারা যাওয়ার পর মানুষ যেভাবে ছুটে এসেছেন, তাতে তাঁর দেশপ্রেমের প্রকাশ পাওয়া যায়। আমি গর্বিত তাঁর মতো শিল্পী আমাদের সময়ে ছিলেন।’

কনসার্টে গাওয়া তাঁর সব গানই ছিল জনপ্রিয়। ছিলেন গিটারের জাদুকর। গিটারের সুরে ‘সেই তুমি’ কিংবা ‘এক পুরুষে গড়ে ধন’, ‘হাসতে দেখ গাইতে দেখ’, ‘এক দিন ঘুমভাঙা শহরে’, ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘সেই তারা ভরা রাতে’, ‘এখন অনেক রাত’সহ আরও অনেক গান গাইতেন তিনি। নব্বইয়ের দশক থেকে শুরু করে তাঁর গাওয়া এখনকার সব গান তরুণদের মুখে মুখে।

সূত্র: প্রথম আলো

আপনার মন্তব্য

আলোচিত