বিনোদন ডেস্ক

২২ জানুয়ারি, ২০১৯ ১২:৪৮

৮টি ব্লক ধরা পড়েছিল বুলবুলের হার্টে

দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন কিংবদন্তি সংগীত ব্যক্তিত্ব আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। গত বছরের মাঝামাঝি বুলবুলের হার্টে আটটি ব্লক ধরা পড়েছিল।

গত বছর ১৬ই মে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল লিখেছিলেন, একটি ঘরে ছয় বছর গৃহবন্দী থাকতে থাকতে আমি আজ উল্লেখযোগ্যভাবে অসুস্থ। আমার হার্টে ৮টা ব্লক ধরা পড়েছে। এরই মধ্যে কাউকে না জানিয়ে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম।

সেখানে সিসিইউতে চার দিন ছিলাম। আগামী ১০ দিনের মধ্যে হার্টের বাইপাস সার্জারি করানোর জন্য প্রস্তুত আছি। তিনি আরও লিখেন, কোনো সরকারি সাহায্য কিংবা শিল্পী, বন্ধুবান্ধবের সাহায্য আমার দরকার নাই। আমি একাই যথেষ্ট। শুধু অপারেশনের আগে ১০ সেকেন্ডের জন্য বুকের মাঝে বাংলাদেশের পতাকা আর কোরআন শরিফ রাখতে চাই। এর পর আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দায়িত্ব নেয়ার পর বুলবুলকে ভর্তি করা হয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। সবাই ধারণা করেছিল তার ওপেন হার্ট সার্জারি করা হবে। কিন্তু শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা বুলবুলের বাইপাস সার্জারি না করে রিং পরানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. অধ্যাপক আফজালুর রহমানের অধীনে বুলবুলকে ভর্তি করা হয়েছিল। ডা. আফজাল বুলবুলের হার্টে দুটি স্টেন্ট (রিং) স্থাপন করেন। রিং পরানো শেষে সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরেন বুলবুল।

এরপর থেকে তিনি বাসাতেই বেশি সময় কাটাতেন। গানে আর তাকে খুব একটা দেখা যায়নি। তার জীবনযাপনেও বেশ পরিবর্তন আসে। হার্টের অসুখই কাল হলো বুলবুলের। রিং পরানোর পর জীবনযাপন বদলালেও বাঁচতে পারেননি বুলবুল।

জনপ্রিয় এ শিল্পীর ব্যক্তিগত সহকারী রোজেন জানান, ভোর ৪টার দিকে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল মুঠোফোন থেকে তাকে ফোন করেন। বলেন, তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে, তার হার্টঅ্যাটাক হয়েছে। রোজেনের ভাষ্য, ভোর ৪টার দিকে স্যার ফোন করে বলেন, তাড়াতাড়ি বাসায় আসো, আমার হার্টঅ্যাটাক হয়েছে। এর পর ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে আমি স্যারের বাসায় যাই। কিন্তু গিয়ে তার কোনো পালস পাইনি। বুলবুলকে দ্রুত রাজধানীর ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা তাকে সাড়ে ৫টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ চক্রবর্তী জানান, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মৃত্যু হয়েছে হার্টঅ্যাটাকে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা এটিই নিশ্চিত হয়েছেন। হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা যান। বুলবুলের সঙ্গে তার কোনো কথা বলার সুযোগ হয়নি বলেও জানান রোজেন। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল তিন শতাধিক চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন। চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করে দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।

এই জনপ্রিয় শিল্পীর জন্ম ১৯৫৭ সালের পয়লা জানুয়ারি ঢাকায়। ১৯৭১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে বুলবুল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাইফেল হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন রণাঙ্গনে। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ স্মৃতি-বিস্মৃতি নিয়ে বহু জনপ্রিয় গান লিখেছেন ও সুর করেছেন। ‘এই দেশ আমার সুন্দরী রাজকন্যা’, ‘আয় রে মা আয় রে’, ‘উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম’, ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘মাঝি নাও ছাইড়া দে, ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে’, ‘সেই রেললাইনের ধারে’, ‘মাগো আর তোমাকে ঘুম পাড়ানি মাসি হতে দেব না’- এমন বহু কালজয়ী গানের স্রষ্টা এই শিল্পী।

ব্যক্তিগত জীবনে এক সন্তানের জনক ছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তার ছেলে সামির আহমেদ। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শিল্পাঙ্গনে। শোকে স্তব্ধ গানের জগতের লোকজন। বুলবুল রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও রাষ্ট্রপতির পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত