সিলেটটুডে ডেস্ক

০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৬:০৫

এনআরসি: এরপর কি বাংলা, দিল্লি, তেলঙ্গানায়?

ছবি: পিটিআই।

লোকসভা ভোটের প্রচারে পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে অমিত শাহ বলেছিলেন, বাংলায় এনআরসি করব। অনুপ্রবেশকারীদের খুঁজে খুঁজে বের করে তাড়াব। ভোটে জিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে অমিত শাহ বলে দিয়েছেন, দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি বিদেশি-মুক্ত করব।

শনিবার আসামে এনআরসি বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের পরেই পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, তেলঙ্গানা-সহ বিজেপির রাজ্য নেতারা নিজের নিজের রাজ্যে এনআরসি চালুর দাবি তুললেন। কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলের নেতারা মনে করছেন, বিজেপি এনআরসি-কে সামনে রেখে অর্থনীতির দুরবস্থা থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করবে। মেরুকরণের রাজনীতি করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ২০২০-তে এনপিআর বা ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার চূড়ান্ত হবে। তা আগামী দিনে গোটা দেশে এনআরসি-র ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিছেন, তারা রাজ্যে ক্ষমতায় এলে ‘বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারী’-দের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠাবেন। তবে নাগরিকত্ব আইনে সংশোধন করে হিন্দু অনুপ্রবেশকারীদের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দেওয়া হবে।

আগামী বছর দিল্লির বিধানসভা ভোট। তার আগে এনআরসি-র দাবি তুলে রাজ্য বিজেপি সভাপতি মনোজ তিওয়ারির দাবি, ‘‘দিল্লিতে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। তাই এখানেও এনআরসি দরকার।’’ একই সুরে তেলঙ্গানায় বিজেপির পরিষদীয় দলনেতা রাজা সিংহের দাবি, তেলঙ্গানাতেও এনআরসি হোক। এমআইএম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দিকে আঙুল তুলে তার অভিযোগ, হায়দরাবাদের সাংসদ নিজের ভোটব্যাঙ্ক বাড়াতে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিচ্ছেন। ওয়াইসির পাল্টা যুক্তি, ‘‘বেআইনি অনুপ্রবেশকারীর মিথ এবার উধাও। আসামের চূড়ান্ত তালিকা থেকে ১৯ লক্ষের মতো মানুষ বাদ পড়েছেন। এবার অমিত শাহ ব্যাখ্যা দিন, তিনি কোথা থেকে ৪০ লক্ষ অনুপ্রবেশকারী পেয়েছিলেন?’’ তার অভিযোগ, বিজেপি যদি শুধু হিন্দুদের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দেয়, তা সমানাধিকারের নীতির বিরোধী হবে।

কংগ্রেস কিছুটা বিপাকে। কারণ রাজীব গান্ধীর সময়ই আসাম-চুক্তি এবং এনআরসি-র সিদ্ধান্ত হয়। দলের অবস্থান ঠিক করতে শনিবার দশ জনপথে সোনিয়া গান্ধীর উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। সেখানে হাজির ছিলেন আসামের সাংসদ গৌরব গগৈ, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমাও। পরে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা চাই, কোনও ভারতীয় নাগরিক যেন বাদ না পড়েন।’’ বিজেপির অন্য রাজ্যে এনআরসি চালু করার দাবি নিয়ে তার মন্তব্য, ‘‘ওদের সরকার, ওরা যেখানে খুশি এনআরসি করতে পারে। ওরা সংসদেও এনআরসি চালু করতে পারেন! আমার বাবা তো বাংলাদেশে থাকতেন। সেই হিসেবে আমিও বহিরাগত!’’

গোটা দেশে এনআরসি চালু প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের যুক্তি, অমিত রাজ্যসভায় এই বলেই দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতিও নতুন লোকসভার প্রথম অধিবেশনের শুরুতেই একই কথা বলেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ২০২০-র সেপ্টেম্বরের মধ্যে ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার তৈরি করে ফেলার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

কোনও এলাকায় যারা গত ছয় মাস ধরে রয়েছেন, তাদের নাম ও অন্যান্য তথ্য রেকর্ড করা হবে। এই এনপিআর তৈরি হলে তার ভিত্তিতে আসামের আদলে গোটা দেশে এনআরসি তৈরি হতে পারে।

সিপিএমের যুক্তি, আসামের এনআরসি-র নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষিত রয়েছে। গোটা দেশে সেটা চালু করার পিছনে বিজেপি সরকারের লক্ষ্য বিভাজন ও মেরুকরণের রাজনীতি। কংগ্রেস নেতা শশী তারুরের মন্তব্য, ‘‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, জাতীয়তাবাদ ও বিদেশিদের সম্পর্কে অহেতুক ভয়ের মধ্যে সূক্ষ্ম ফারাক রয়েছে। তা ছাড়া বিদেশিদের সম্পর্কে ঘৃণা পরবর্তী কালে দেশের অন্য অংশের মানুষের সম্পর্কে ঘৃণায় বদলে যেতে পারে।’’ সূত্র- আনন্দবাজার পত্রিকা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত