নিউজ ডেস্ক

০২ জুন, ২০১৫ ২১:৪৮

মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর নিহত সেনাদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ হচ্ছে

স্বাধীনতার তেতাল্লিশ বছরের পর মিত্রবাহিনীর নিহত সেনাদের সম্মান জানাতে যাচ্ছে সরকার। সম্মানের অংশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে নিহত মিত্রবাহিনীর সেনাদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশের ভেতরে যে যুদ্ধক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি মিত্রবাহিনীর ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন, সেখানেই নির্মিত হবে এই স্তম্ভ। সে হিসেবে সম্ভাব্য এ স্মৃতিস্তম্ভ ভৈরব কিংবা আশুগঞ্জে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগের জন্য ভারতীয় সেনা সদস্যদের সম্মান জানিয়ে তাঁদের পরিবারগুলোর প্রতি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ পাঠানো হবে স্মারক উপহার।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘এডিপি সবুজপাতাবহির্ভূত নতুন প্রকল্প’ হিসেবে যে ছয়টি প্রকল্প রয়েছে, তাতে ৫ নম্বরে রয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধকালে শহীদ/নিহত মিত্রবাহিনীর সদস্যদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ’ প্রকল্প।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক একটি জাতীয় সংবাদপত্রকে বলেন, ‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনী হিসেবে ভারতীয় সেনা সদস্যরা সহায়তা করতে এসে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু তাঁদের সেই ত্যাগের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে নিহত ভারতীয় সেনাদের স্মরণে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়নি। এখন সেই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ কাজ করবে।’

তিনি আরও জানান, মুক্তিযুদ্ধের যে যুদ্ধক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন, সেখানেই এটি নির্মিত হবে। এ বিবেচনায় ভৈরব কিংবা আশুগঞ্জে তা নির্মিত হতে পারে। স্থান নির্বাচন চূড়ান্ত হলে এটি প্রকল্প আকারে গ্রহণ করা হবে।

মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে নিহত ভারতীয় সেনাদের স্মরণে আলাদা স্মৃতিস্তম্ভ না থাকায় তাঁদের আলাদাভাবে স্মরণ করা হয় না। তাই এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধে নিহত ভারতীয় সেনা সদস্যদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁদের পরিবারের প্রতি সম্মান জানানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেয়েছে বলে জানা গেছে। তবে কোন প্রক্রিয়ায়, কবে, কোথায় এই সম্মান প্রদান করা হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এ-সংক্রান্ত সারসংক্ষেপে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে একটি কৃতজ্ঞতাসূচক পত্র, সনদ ও একটি স্মারক উপহার এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে পিতল বা রুপার ক্রেস্ট দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী হিসেবে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। এরপর ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত যেসব ভারতীয় সেনা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাঁদেরকেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মান জানানো হবে। তবে এ-সংক্রান্ত কোনো চুড়ান্ত তালিকা সরকারের হাতে নেই। এই তালিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সরকারের কাছে মুক্তিযুদ্ধে নিহত ভারতীয় সেনাদের যে তালিকা রয়েছে তাতে এক হাজার ৯৮৪ জনের উল্লেখ রয়েছে। আর মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি নামক সংগঠনের জুলাই ২০১৪ তারিখের স্মরণিকায় তিন হাজার ৯৯৩ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে নিহতদের নাম, পদবি, সার্ভিস কোড, মৃত্যু তারিখের উল্লেখ রয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘জোছনা ও জননীর গল্প’-এর ভূমিকায় লিখেছেন, “ভারতীয় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম ছোট করে দেখানোর একটি প্রবণতাও আমাদের আছে। আজ থেকে ৫০ বছর পর কেউ যদি বাংলাদেশে প্রকাশিত উপন্যাস এবং ছোটগল্প পড়ে যুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা করতে চায়, তাহলে তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিষয়ে কিছুই জানবে না। আমাদের গল্প-উপন্যাসে বিদেশি সেনাবাহিনীর বিষয় সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। লেখকরা হয়তো ভেবেছেন এতে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবের হানি হবে। ঋণ স্বীকারে অগৌরবের কিছু নেই। মহান জাতি এবং মহান মানুষরাই ঋণ স্বীকার করেন। আমি আমার বইটিতে আমাদের দেশের স্বাধীনতার জন্য যেসব ভারতীয় সেনা প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের একটি তালিকা দিতে চেয়েছিলাম, যাতে পাঠকরা বলেন, ‘আহা রে!’ তালিকা শেষ পর্যন্ত দিলাম না, কারণ তাতে বইয়ের পৃষ্ঠাসংখ্যা আরো ১০০ বাড়ত।” সংবাদ সূত্র: কালের কণ্ঠ। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত