নিউজ ডেস্ক

২১ মার্চ, ২০১৫ ০৩:৫৮

ডিসিসি নির্বাচন: আওয়ামীলীগই যেখানে আওয়ামীলীগের প্রতিপক্ষ

ঢাকার আসন্ন দুই সিটি করপোরেশন (ডিসিসি উত্তর-দক্ষিণ) নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। যাঁরা আছেন, তাঁরা নিজ দলেরই বিদ্রোহী প্রার্থী! এখন বলতে গেলে আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ!

এদিকে দলীয় সমর্থন পেতে ও ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই ডিসিসি উত্তর-দক্ষিণে প্রায় দেড় ডজন প্রার্থী জোরেশোরেই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন। এমনকি দুই ডিসিসির গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো দল-সমর্থিত প্রার্থীদের পাশাপাশি বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির সংলাপ সংবলিত দৃষ্টিনন্দন বিলবোর্ড ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে।

প্রতিদিনই তাঁরা নিজ নিজ এলাকার ভোটাদের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিচ্ছেন। আর ফেসবুক তো আছেই। ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ছাড়াও মাঠে নেমেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। দলীয় সমর্থন পাওয়ার পরই তাঁরা নেমে পড়েছেন প্রচার-প্রচারণায়।

এদিকে বসে নেই সম্ভাব্য কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। যে যেভাবে পারছেন, মাঠে-ঘাটে নিজেদের প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে প্রায় হাজারখানেক কাউন্সিলর প্রার্থী ইতোমধ্যেই নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের অলিগলি, ভোটারদের বাড়ির দেয়াল থেকে শুরু করে সর্বত্র ছেয়ে গেছে ব্যানার-ফেস্টুন ও লিফলেটে।

দলীয় সমর্থন নিশ্চিত করতে এসব প্রার্থীও নানামুখী তদবির-লবিংয়ের পাশাপাশি আয়োজন করছেন সভা-সমাবেশের। দুই সিটি করপোরেশনে প্রার্থী হিসেবে ঢাকার উত্তরে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হক ও দক্ষিণে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফপুত্র সাঈদ খোকনকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত করে ফেলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ দুজনকে সম্প্রতি গণভবনে ডেকে নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর পরপরই আওয়ামী লীগ সমর্থিত এ দুই প্রার্থী চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা।

অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটিতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রার্থী আনিসুল হকের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের আরও ছয় মেয়র প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য একেএম রহমতউল্লাহ, আওয়ামী লীগ ও ব্যবসায়ী নেতা এসএ মান্নান কচি, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার, সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলাম, ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তর সভাপতি মাঈনুল হোসেন খান নিখিল ও মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাদেক খান। এর মধ্যে ডিসিসি উত্তরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে কামাল আহমেদ মজুমদারের নামে ব্যানার-ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে।

জাতীয় পার্টি থেকে উত্তরের প্রার্থী হলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব বাহাউদ্দিন বাবুল। তিনি ইতোমধ্যেই প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। এছাড়া নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাও (যিনি আইসিটি মামলায় বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে), ডিসিসি উত্তরে প্রার্থী হচ্ছেন বলে তাঁর সংগঠনের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের পর থেকেই ঢাকার দক্ষিণ সিটি মেয়র প্রার্থী হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগের (দক্ষিণ) সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খোকন এ সিটির ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ইতোমধ্যে দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন থানায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করছেন সাঈদ খোকন। এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়েও গণসংযোগ করছেন তিনি।

এদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম। প্রচার-প্রচারণায় তিনিও পিছিয়ে নেই। বিএনপি এ নির্বাচনে না এলে দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিপুল ভোটে তাঁর জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। কারণ নির্বাচনে বিএনপি না এলে তাদের ভোট হাজী সেলিমের বাক্সে যাবে বলেও তাঁদের ধারণা।

এছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনিও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দক্ষিণের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পোস্টার লাগানোর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের পাশাপাশি দক্ষিণে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী হিসেবে দলের প্রেসিডিয়াম মেম্বার হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদও দলীয় সমর্থন পাওয়ার পর মাঠে নেমেছেন।

চলমান আন্দোলনে জ্বালাও-পোড়াও মামলায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বেশিরভাগ নেতাই কারাগারে কিংবা আত্মগোপনে। জোট নেতাদের অভিযোগ, ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানিতে তাঁদের ঘরছাড়া করে ডিসিসি নির্বাচন দিচ্ছে সরকার।

বিএনপির পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে ব্যবসায়ী ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আউয়াল মিন্টু, দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন ও মহানগর বিএনপি নেতা আবদুস সালাম ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।

দুই সিটিতে ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও তরিকত ফেডারেশনের অর্ধডজন সম্ভাব্য প্রার্থী নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। ১৪ দলের শরিকদের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকার উত্তরে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য কামরুল আহসান, জাসদ স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর সমন্বয়ক মীর হোসাইন আখতার এবং তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এমএ আউয়াল এমপি।

দক্ষিণে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় আছেন ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগর সভাপতি আবুল হোসাইন, জাসদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি শহীদুল ইসলাম এবং তরিকত ফেডারেশনের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ তৈয়বুল বশর মাইজভান্ডারী।

এছাড়া সিপিবি ও গণফোরাম থেকেও বেশ কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে। তাঁরা হলেন ঢাকা উত্তরে সিপিবির জাতীয় পরিষদ সদস্য ও যুব ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল কাফী রতন এবং দক্ষিণে সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহিন হোসেন প্রিন্স। ঢাকা দক্ষিণে গণফোরাম নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টুর নামও শোনা যাচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত