সিলেটটুডে ডেস্ক

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ০২:০৭

লন্ডনের পথে খালেদা

স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য দুই সপ্তাহের জন্যে লন্ডন গেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে ঈদ করে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার পর এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে যুক্তরাজ্যের পথে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে রওনা হন বিএনপি চেয়ারপারসন।

এই সফরে তার সঙ্গে রয়েছেন একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার ও গৃহকর্মী ফাতেমা আখতার। একই বিমানে লন্ডন যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল।

চোখ ও পায়ের চিকিৎসা এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতেই এই সফর বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

খালেদা জিয়ার ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে আছেন। তিনি সেখানে সপরিবারে বাস করেন।

প্রয়াত পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শারমিলা রহমান সিঁথি ও কন্যারাও এ উপলক্ষে লন্ডন আসবেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদুল আজহা একসঙ্গে উদযাপন করবেন খালেদা।
সফর শেষে আগামী ১ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশে ফিরবেন বলে জানানো হয়েছে।

খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিএনপির দায়িত্ব পালন করবেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

রাত সোয়া ৮টার দিকে ভিআইপি গেইট দিয়ে বিমান বন্দরের ঢোকেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা। নেত্রীকে বিদায় জানাতে তার আগে থেকে দলীয় নেতারা সেখানে ছিলেন।

বনানী ফ্লাইওভার থেকে সড়কে তীব্র যানজটের কারণে উল্টো পথ দিয়ে গাড়িবহর নিয়ে বিমানবন্দরে ঢোকেন খালেদা। বিমানবন্দরের প্রবেশ পথে সড়কের মোড়ে দাঁড়িয়ে নেতা-কর্মী-সমর্থকরা তাকে বিদায় জানান।

তার আগে সন্ধ্যা থেকে বিমান বন্দরের প্রবেশমুখে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। এতে টার্মিনালে যেতে বিএনপি নেতা-কর্মীরা বাধার মুখে পড়েন।

বিমানবন্দরে ছিলেন নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মোহাম্মদ শাহজাহান, গোলাম আকবর খন্দকার, আসাদুজ্জামান রিপন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ সালেহ এমরাহ প্রিন্স, শামীমুর রহমান শামীম, নুরে আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আখতার, অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, মমিনুল হক প্রমুখ।

তবে অন্যবারের মতো এবার বিমানবন্দরে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অনেককে দেখা যায়নি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘদিন পর ম্যাডাম তার পুত্রসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হচ্ছেন। আমরা ম্যাডামকে অনুরোধ করেছি, তিনি যেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এবারে ঈদ উদযাপন করে দেশে ফেরেন।”

তারেক ও তার স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন করেই খালেদা ফিরবেন বলে বিএনপি নেতারা আগেই জানিয়েছিলেন।

প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শামিলা রহমান সিঁথি, তার দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমানও মালয়েশিয়া থেকে ইতোমধ্যে লন্ডন পৌঁছেছেন।

২০০৬ সালে ক্ষমতা হারানোর পর যুক্তরাজ্যে খালেদার এটি দ্বিতীয় সফর। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে দেশে ফেরার পথে বড় ছেলে তারেককে দেখতে লন্ডনে গিয়েছিলেন তিনি।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় (২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা) হুলিয়া নিয়ে গত সাত বছর ধরে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে লন্ডনে রয়েছেন।

খালেদা জিয়া গত বছর ওমরাহ করতে সৌদি আরবে গেলে তারেকও লন্ডন থেকে সেখানে গিয়েছিলেন। এরপর আর মা-ছেলের দেখা হয়নি। এরপর মালয়েশিয়ায় থাকা খালেদার ছোট ছেলে কোকো মারা যান।

প্রতি বছরের মতো এবারও রোজার সময় ওমরাহ করতে সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল খালেদার। কিন্তু ওই সফর তিনি শেষ মুহূর্তে বাতিল করেন দলের শীর্ষ নেতাদের কারাগারে থাকার কথা বলে।

আর গত আগস্টে লন্ডন যাওয়ার তোড়জোড় করেও পরে যাননি বিএনপি চেয়ারপারসন। তার না যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনারও সৃষ্টি হয়।

পরে খালেদা জিয়া বলেন, তার পায়ের ব্যথা বেড়েছে। সেজন্য যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

লন্ডন সফরের আগে গত রোববার রাতে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে দলের কমিটি গঠনের কাজ দ্রুত করার তাগিদ দেন খালেদা।

খালেদা রওনা হওয়ার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, সাংগঠনিক কাজ সবাই মিলে এগিয়ে নিতে চেয়ারপারসন নির্দেশ দিয়ে গেছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত