সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

২৪ ফেব্রুয়ারি , ২০১৯ ১৪:৩৬

ইউনিভার্সাল শিক্ষা তত্ত্ব উদ্ভাবন করেছেন রেজাউল

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা ড. রেজাউল আবেদীন সম্প্রতি “ইউনিভার্সাল শিক্ষা তত্ত্ব বা সার্বজনীন শিক্ষা তত্ত্ব/ সূত্র” উদ্ভাবন করেছেন বলে জানা গেছে। শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি নিজেই এ তথ্য জানান।

বিজ্ঞপ্তিতে তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে বর্তমান বিশ্বময় সার্বজনীন শিক্ষা তত্ত্বটি (Universal Education Theory) কার্যকর হবে কারণ এটি  মানুষের একাডেমিক ও সামাজিক জীবনে নৈতিক শিক্ষা লাভের জন্য বা তাদের  ব্যক্তিগত সার্বজনীন শিক্ষা লাভ ও প্রশিক্ষণের জন্য পুনঃনির্দেশিত করবে। এছাড়া, নৈতিক শিক্ষা ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ উভয় পরিসরে দুর্নীতি, ম্যানিপুলেশন প্রতিরোধের জন্য মানুষের মন ও মানসিকতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

তার উদ্ভাবিত সূত্র UE = [ HV + (EA + EST) + MR ] – Ie এভাবেই প্রকাশ করেছেন তিনি।

যেখানে তিনি,   UE= Universal Education,  HV= Human being as an Individual who requires Value addition, EA= Education for Academic sources, EST= Education from Self Learning and Talent from Almighty Allah (SWT),  MR= Morality / Moral Education from Religion, Ie= Eradication of all Evils from individual character (Individual Evils)/ Eradicating the evils of corruption.

তিনি বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করে জানান, মানুষ জন্মগতভাবে সবাই মেধাবী, বুদ্ধিজীবী এবং নৈতিক হয়ে জন্মায় না। সুতরাং, তাদের সবাইকে  অবশ্যই ইউনিভার্সাল এডুকেশন বা (সার্বজনীন শিক্ষা) অনুসরণ করতে হবে যা তাদের ব্যক্তিগত চরিত্র থেকে সম্ভাব্য মন্দ স্বভাব  হ্রাস করতে বা সরাতে সাহায্য করবে। ব্যক্তির মন্দ রোধ বা অপসারণের মাধ্যমে  মানুষ তার (বিশ্বাসী) নেতৃত্বের জন্য নৈতিক শক্তি এবং মানকে সর্বাধিক পর্যায়ে উন্নীত করতে সহায়তা করতে পারে। এখানে এমন নৈতিক ও সার্বজনীন শিক্ষা (Universal Education) সকল মানুষকে  দুনিয়ায় তার (বর্তমান জীবন) বা পরের (মৃত্যুর পর জীবন) উভয় জীবনে মন্দ প্রভাব থেকে তাকে বাঁচাতে সাহায্য করবে।

বেশিরভাগ একাডেমিক শিক্ষায় এটি দেখা যায় যে, ধর্মীয় শিক্ষা বা নৈতিক শিক্ষা প্রায় অনুপস্থিত বা উপেক্ষিত, তাই মানুষেরা নৈতিকতার শিক্ষায় নিজেকে উন্নত বা উদ্ভূত করতে পারে না বা নৈতিকতায় প্রভাবিত হয়ে প্রকৃত শিক্ষা সে পায় না। নৈতিক শিক্ষা মানুষের জীবনে নৈতিকভাবে বিবেক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিকতার ঐশ্বরিক প্রভাবে  প্রশিক্ষিত হতে শেখায়। কেন নৈতিক শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ? এটি মূলত একটি কারণ, এটি খারাপ কাজ বা দুর্নীতির উদ্দেশ্য বা অন্যদের ক্ষতি সাধন করা হতে বিরত রাখতে সহায়তা করে, তাছাড়া অন্য সব ভাল কাজের প্রতি মানুষকে নির্দেশ করে। সাধারণত, লোকেরা অন্যের সম্পদ বা অন্য সম্পদের প্রতি আকৃষ্ট হয় না বা দুর্নীতি করে পরের সম্পদ হরণ করে না কিন্তু যদি তারা (কর্মচারীরা) নৈতিকভাবে প্রশিক্ষিত না হয় তবে পরিস্থিতি এমন হতে পারে যেমন ভূমি মালিকদের বা ব্যবসায়ের মালিকদের অনুপস্থিতিতে তারা অর্থ বা সম্পদের আত্মসাৎ করে  তাদেরকে প্রতারিত করতে পারে। কিংবা দুর্বল মানুষ ন্যায় বিচারের সময় সমাজের সবল বিচারকদের কাছে অবিচারের সম্মুখীন হতে পারে বা ন্যায়বিচার হতে বঞ্চিত হতে পারে । এটা ও নৈতিকতার শিক্ষা গ্রহণ না করার আরেকটি জ্বলন্ত উদাহরণ। যথাযথ একাডেমিক বা নৈতিক শিক্ষার অভাবে একজন ব্যক্তি হয়তো তার খারাপ সঙ্গী বা সমাজ থেকে কিছু খারাপ অভ্যাস, অবাঞ্ছিত জ্ঞান, দুষ্ট দক্ষতা, খারাপ মনোভাব, অপরাধমূলক স্বভাব ও আচরণ, প্রতারণামূলক প্রবণতা এবং শয়তানি চরিত্র ইত্যাদি ধারণ করতে পারে। কিন্তু এই পরিস্থিতি এবং এ অবস্থা থেকে মানুষকে ধর্ম থেকে  নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষাই একমাত্র প্রতিরোধ করতে পারে ও সম্ভাব্য পদস্খলন থেকে বাঁচাতে পারে। মানুষ যখন এই ধরনের মন্দ স্বভাব ও কু- স্বতন্ত্র চরিত্রগুলি নিজের জীবন থেকে নির্মূল করতে সক্ষম হয় তখন সার্বজনীন শিক্ষা তত্ত্ব বা সূত্রটি তার কার্যকারিতা দেখে। সার্বজনীন শিক্ষা মানে, যেখানে মানুষ তাদের সামাজিক অবস্থা, লিঙ্গ, জাতি, জাতিগত ঐতিহাসিক পটভূমি বা শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতা সত্ত্বেও, নৈতিক শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সকল মানুষের বিশ্বময় সমান অপার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি একজন ব্যক্তি যথাযথ সার্বজনীন শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ লাভ করেন তবে সে তার অর্থনীতি, সমাজ, জাতি, দেশকে যথোপযুক্তভাবে উন্নত করতে সক্ষম হতে পারে। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আর্থিক বা অর্থনৈতিক দুর্নীতি, মেনিপুলেশনের মত কোন অনৈতিক ক্রিয়াকলাপে জড়িত হবে না; এবং তার মাঝে পক্ষপাত, স্বজনপ্রীতি, লোভী মনোভাব উত্থাপিত হবে না। ইউনিভার্সাল শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষার ফলে, স্রষ্টা হতে রহমত, উদারতা, বদান্যতা, এবং দাতব্য ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গুণাবলীর বিকাশ সাধন হবে। এটি মানবতায় আত্মত্যাগ, পরোপকারের জন্য নিঃস্বার্থে ভালবাসা বৃদ্ধির প্রবণতা  এবং রক্ত-সম্পর্ক ব্যতীত মানবতায় উত্তম  কর্মের জন্য অতি উচ্চ নৈতিক আদর্শগুলিকে উন্নীত করতে সহায়তা করবে। ব্যক্তির নৈতিক উৎকর্ষতা আসলে মূলত একাডেমিক শিক্ষার সাথে ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষা অধ্যয়ন বা অনুশীলন থেকেই আসে।

সাধারণ নৈতিকতা (Ordinary morality) ইউনিভার্সাল শিক্ষা তত্ত্ব বা সূত্র কিছু কিছু ক্রিয়াকলাপকে স্বাগত জানায় না। উদাহরণস্বরূপ, একজন ধনী ব্যক্তি ধর্মীয় আদেশে হজ্ব সম্পাদন করতে পারেন তা খুব ভাল কিন্তু পরে যদি তিনি সত্যের বিরুদ্ধে ঘুষের কাজকর্ম বা পক্ষপাতের অনুশীলন করেন তবে এতে প্রমাণিত হয় যে, সেই সংশ্লিষ্ট ধনী ব্যক্তির এখানে প্রকৃত নৈতিক শিক্ষা অনুপস্থিত কারণ তিনি নৈতিকভাবে শিক্ষিত নন, পবিত্র হজ্জব্রত সম্পাদন করে আর নৈতিকতা বিবর্জিত গর্হিত পাপ কাজ তিনি তার জীবনে করবেন না এমনটি চর্চা করলেই এখানে নৈতিক শিক্ষায় তিনি শিক্ষিত তেমনটি প্রমাণিত হবে। আরেকটি উদাহরণ, ডাক্তারদের তাদের চিকিৎসা সেবায় অস্ত্রোপচারের সময় ও পরামর্শের সময়কালে রোগীদের কাছে উচ্চ চার্জ দাবি করা উচিত নয় কারণ এটি মানবজাতির জন্য সেবাভিত্তিক একটি মহান পেশা যা মুনাফা ভিত্তিক গতানুগতিক পেশা নয়। ধনী জনগোষ্ঠীর কাছে রমজান / ফিতরায়ের যাকাত ভাগ না করলে ধনী ব্যবসায়ী বা ধনী ব্যক্তিরা (যাকাত বা ফিতরা মূলত নির্দিষ্ট ধরণের সম্পত্তির উপর ইসলামী আইনের অধীনে অর্থ প্রদানের জন্য ধনী বা সামর্থ্যবান মুসলমানদের উপর অর্পিত বার্ষিক কর এবং দাতব্য ও ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত)। এই আইন ধর্মীয় নৈতিকতা শিক্ষা হইতেই স্পষ্টভাবে আসে। যারা তা মানবেন না, তারা ধর্মীয় নৈতিকতা শিক্ষা গ্রহণ করেননি।

মানুষের বিভিন্ন উৎস থেকে শিখতে পারে যেমন একাডেমিক শিক্ষা, নিজে নিজে শিক্ষা বা স্বশিক্ষা, এবং স্রষ্টা থেকে জন্মগত প্রতিভার মাধ্যমে শিক্ষা, ধর্মীয় অধ্যয়ন থেকে নৈতিক শিক্ষা নৈতিকতার শিক্ষা লাভ করা ইত্যাদি। প্রতিটি ব্যক্তির আলাদা অনন্য প্রকৃতি বা চরিত্র থাকতে পারে কিন্তু এই ব্যক্তি  তার পার্শ্ববর্তী বায়ুমণ্ডল থেকে কিছু বিষাক্ত মন্দ চরিত্র তার নিজের চরিত্রের সাথে মিশিয়ে একত্র করে ফেলতে পারে যা সার্বজনীন শিক্ষা তত্ত্ব বা ইউনিভার্সাল শিক্ষা তত্ত্ব প্রয়োগ করে উন্নত করা যেতে পারে। এটা দৃঢ়ভাবে অনুমান করা যেতে পারে যে, শিক্ষার সকল স্তরে নৈতিক শিক্ষার অতীব প্রয়োজন। কিছু লোক বিশ্বাস করে যে, নৈতিক শিক্ষা (Moral Education) কেবলমাত্র কোমলমতিদের স্কুল পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত তবে এটি আক্ষরিক অর্থে সত্য নয়, কারণ গড়পড়তার মধ্যে প্রত্যেক মানুষ সমানভাবে যোগ্যতায় বা মেধায় সমমানের ও মর্যাদার হয় না। স্কুল পর্যায়ে নৈতিক শিক্ষা চলমান রাখার পাশাপাশি,  কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তরে ও যদি তারা নৈতিক মনোবিজ্ঞান (moral psychology) বা নৈতিক ব্যবসা প্রশাসন (moral business administration) বা ব্যবসায়িক নৈতিকতা (business morality) বা নৈতিকতা ব্যবস্থাপনা (morality management) এর আওতায় নৈতিকতা শিখতে সক্ষম হন তবে সকল ব্যক্তি একাডেমিক জীবনে তাদের শিক্ষকদের কাছ থেকে নৈতিক মূল্যবোধের প্রকৃত শিক্ষার গুন নিজ নিজ জীবনে যোগ করতে সক্ষম হবে এ দৃঢ় আশাপোষণ করছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত