সিলেটটুডে স্পোর্টস ডেস্ক

২২ এপ্রিল, ২০১৫ ০৩:৩৯

হচ্ছে তবে আরেকটা 'বাংলাওয়াশ'!

মাঠে খেলছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান আর আলোচনায় বারবার আসছে নিউজিল্যান্ড প্রসঙ্গ। দুই দলই স্মরণ করছে সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপের রানার্স আপ দলটিকে। তবে পার্থক্যের জায়গা হলো একদল সেখান থেকে নিচ্ছে আত্মবিশ্বাসের রসদ আর এক দল খুঁজছে সান্ত্বনা।

বাংলাদেশ দুই-দুইবার নিউজিল্যান্ডকে ‘বাংলাওয়াশ’ করেছে। এবার সে রকম এক বাংলাওয়াশের মুখোমুখি পাকিস্তান। অথচ এই সিরিজ শুরুর আগের ১৬ বছর একটানা জিতেই চলেছিল পাকিস্তান। তীরে এসে বারবার তরী ডুবছিল বাংলাদেশ দলের। সবচেয়ে বড় আক্ষেপ ছিল গত এশিয়া কাপের ফাইনালে দুই রানের পরাজয়। সেদিন কাঁদতে কাঁদতে মাঠে ছেড়েছিলেন সাকিবেরা।

সাকিবদের সে কান্নার দিন শেষ। এখন বাংলাদেশ হাসতে হাসতেই মাঠ ছাড়ে। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ অনায়াসে জয় করে কোন ধরণের উল্লাস প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ। সব উল্লাস নিশ্চয়ই বাকি রেখেছে শেষ ম্যাচের জন্যে। কারণ সিরিজ শুরুর আগেই বিশ্বসেরা অলরাউণ্ডার সাকিব বলেছিলেন- সিরিজে বাংলাদেশই ফেভারিট।

বুধবার বাংলাদেশ সময় আড়াইটায় মিরপুরের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নামবে তখন সেটা হবে সব প্রতিপক্ষ মিলিয়ে দশটা সিরিজে বাংলাওয়াশ করার মিশন এবং টানা দুই সিরিজে সবগুলো জয়ের রেকর্ডের হাতছানি। এর আগে বাংলাদেশ দল টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং নিউজিল্যান্ডকে বাংলাওয়াশ করেছিল।

প্রথম ম্যাচ ৭৯ রানে ও দ্বিতীয় ম্যাচ ৭ উইকেটে জিতে দশমবারের মতো সিরিজের সব ম্যাচে জয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। গত বছরের শুরুতে একের পর এক ম্যাচ হেরে ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস তলানিতে পৌঁছেছিল। বছরের শেষ দিকে ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়েকে ৫-০ ব্যবধানে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় মাশরাফিরা। এরপর বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে পৌঁছে নিজেদের নতুন করে চেনায় তারা।

এই সিরিজের আগে ১৬ বছর ধরে পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তবে এবার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত ছিল শুরু থেকেই। নতুন চেহারার পাকিস্তানের বিপক্ষে স্বাগতিকরা নিজেদের ‘ফেভারিট’ দাবি করে আসছিল; প্রথম দুই ম্যাচে দাপুটে জয়ে তারই প্রমাণ দেয় তারা।

শরীরী ভাষা পাল্টে গেছে ক্রিকেটারদের। বিশ্বকাপে চমৎকার পারফরম্যান্সে ক্রিকেটাদের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। বেশিরভাগ খেলোয়াড় ছন্দে থাকায় যে কোনো দলকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সামর্থ্য বাংলাদেশের রয়েছে। এই দলের সঙ্গে পেরে ওঠা আজহার আলির দলের জন্য কঠিনই, যার প্রমাণ প্রথম দুই ম্যাচ!

অতীতে দেশের মাটিতে এক বা দুই পেসার নিয়ে খেলত বাংলাদেশ। এবার তিন পেসার নিয়ে খেলছে তারা। দেশসেরা পেসার মাশরাফির দুই সঙ্গী রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদ আছেন দারুণ ছন্দে।

দুই বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান ও আরাফাত সানি গতির বৈচিত্রে ভুগাচ্ছেন পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের। দ্বিতীয় ম্যাচে নিখুঁত ছিলেন অফস্পিনার নাসির হোসেনও।

বাংলাদেশ দলের বর্তমান চেহারায় শেষ ম্যাচে জয়ের জন্যে মরিয়া পাকিস্তান দল, যদিও আগের দুই ম্যাচে অনেক চেষ্টার পরেও দাঁড়াতেই পারেনি। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ জানান, শেষ ম্যাচে লড়াকু ও ইতিবাচক ক্রিকেট খেলবে পাকিস্তান।

“ওরা নিউজিল্যান্ডকে ৪-০ ব্যবধানে হারিয়েছে। ওরা এখন ভালো একটি দল। আর এই মুহূর্তে আমরা পুনর্গঠনের পর্যায়ে আছি। আমরা অনেক তরুণ খেলোয়াড়কে নিয়ে চেষ্টা করছি। সার্কেলের ভেতর পাঁচ ফিল্ডার রাখা, দুটি বাউন্সার আর দুই নতুন বলের মতো ব্যাপারগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে ওদের আরো সময় লাগবে।”

‘ছেলেদের ওপর আমাদের বিশ্বাস আছে, তারা এ ম্যাচটি জিততে পারবে। তাদের বলা হয়েছে কোনো ধরনের চাপ না নিয়ে মাঠে নামতে। ২-০-তে সিরিজ হাতছাড়া হওয়ার কথা মাথায় রাখতে বারণ করা হয়েছে প্রত্যেককে। আমাদের ছেলেরা নতুন, তবে প্রতিভাবান’।

পাকিস্তান বোলিং কোচ সান্ত্বনার বাণি শোনাচ্ছেন তার দলের খেলোয়াড়দের। আশা করছেন তারা খেলায় ফিরে আসতে পারবে। ম্যাচ শুরুর আগে পাকিস্তানের জন্যে সুসংবাদ মোহাম্মদ হাফিজ বল করতে পারবে, যাকে ছাড়পত্র দিয়েছে আইসিসি সন্দেহজনক বোলিং একশন থেকে মুক্তি দিয়ে।

বদলে যাওয়া বাংলাদেশের সামনে পাকিস্তান। বাংলাওয়াশের সম্ভাবনা যেখানে সেখানে বারবার ওঠে আসছে নিউজিল্যান্ডের নাম। পারবে কী বাংলাদেশ আরেকটা বাংলাওয়াশ সম্পন্ন করতে- উত্তরটা লিখা আছে মিরপুরের বাইশ গজে, তারিখটা ঠিক ২২ এপ্রিল ২০১৫!

আপনার মন্তব্য

আলোচিত